টিউশনির নামে পর্নো তৈরির ভয়াবহ ফাঁদ : ধর্ষণের দেড় সেঞ্চুরিয়ান সেই পান্না মাস্টারের সহযোগী টুটুল আটক

টিউশনির নামে ছাত্রীদের জিম্মি করে পর্নো ভিডিও তৈরির ভয়াবহ ফাঁদপাতা কুষ্টিয়ার সেই পান্না মাস্টারের পর এবার তার অপকর্মের অন্যতম সহযোগী প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 
সোমবার রাতে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী এলাকা থেকে টুটুলকে আটক করে কুষ্টিয়ার গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। টুটুল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটহরিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলী। 
এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদ-পুরের একটি ভাড়া বাসা থেকে ডিবি পুলিশ সদস্যরা গ্রেফতার করে দেড় শতাধিক ছাত্রীকে বিকৃত যৌনলালসার শিকার করা দেশজুড়ে সমালোচিত সেই পান্না মাস্টারকে। পান্না মাস্টারের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় এই ভয়াবহ ফাঁদে আটকেপড়া বেশিরভাগ ছাত্রীকে অষ্টম নবম শ্রেণীর। তাদের মধ্যে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেও পান্না মাস্টারের হুমকির কারণে তার ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। 
পান্না মাস্টার তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে গ্রেফতারের আগপর্যন্ত ওইসব ছাত্রীকে অশালীন কাজে বাধ্য করে আসছিল। 
এ নিয়ে আমার দেশ অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিস্তারিত খবর প্রকাশ পেলে দেশব্যাপী সমালোচনা ঝড় ওঠে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ শুক্রবার রাজধানী থেকে গ্রেফতার করে পান্না মাস্টারকে। আর গতকাল গ্রেফতার করা হলো তার এই অপকর্মের অন্যতম সহযোগী প্রকৌশলী টুটুলকে।
কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ তাকে আটকের কথা স্বীকার করে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার একটি গাড়ির ভেতর থেকে টুটুলকে আটক করা হয়। 
এর আগে পান্না মাস্টারের আরও দুই সহযোগী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান হাসান, যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম মনোকে আটক করে পুলিশ। তবে পান্না মাস্টারের অপর সহযোগী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম ওরফে সজলকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। 
প্রসঙ্গত হেলাল উদ্দিন পান্না কুষ্টিয়া বাড়াদি গ্রামের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের সহকারী শিক্ষক। কুষ্টিয়া শহরের আড়পাড়ার নিজ বাসায় প্রাইভেট টিউশনিতে যাওয়া স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের চার সহযোগী নিয়ে ধর্ষণ করে।
পান্না কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল, কুষ্টিয়া যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান, যশোর স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী দুলাল হোসেন ও গাংনী স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সজলকে নিয়ে তার বাসায় এই অপকর্ম করতেন।
শুধু তা-ই নয়, তারা ছাত্রীদের সঙ্গে তাদের এসব মিলনদৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করত, যা সম্প্রতি ভিডিও ক্লিপস আকারে এলাকার যুবকদের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে গত ৭ জুলাই শতাধিক এলাকাবাসী ও ছাত্ররা ডিসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়কের বারখাদা-ত্রিমোহুনীতে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে।
এরপর কুষ্টিয়া সদর থানার সাব-ইন্সপেক্টর এম. মনিরুল ইসলাম ৭ জুলাই পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অধীনে পান্নাসহ ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায়ই পান্না মাস্টার ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, পান্না মাস্টারের লালসার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন লোকলজ্জার ভয়ে মানসিক যন্ত্রণায় বর্তমানে নির্বাসিত জীবনযাপন করছে।