আলেম-ওলামাদের সম্মান ও মর্যাদা


আলেম-ওলামাদের সম্মান ও মর্যাদা
এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান : আলেম শব্দটি ইলম থেকে উৎসারিত। যার অর্থ হলো জ্ঞানী, শিক্ষিত ও জান্তা ইত্যাদি। ইলম থেকে উৎসারিত আরো কয়েকটি শব্দ যেমন উলুম, মুআল্লিম, আল্লামা, তালিম ইত্যাদি শব্দ বাংলাদেশী মুসলিমদের কাছে কম-বেশি সুপরিচিত। আরবরা যদিও ইলম ও আলেম শব্দ দ্বারা যেকোন সাধারণ বিষয়ের জ্ঞান এবং ওই বিষয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকে বুঝিয়ে থাকেন, কিন্তু বাংলাদেশে তা বুঝানো হয় না। এখানে ইলম বলতে দ্বীনি বা ধর্মীয় জ্ঞান এবং আলেম বলতে দ্বীনি বা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিকেই বোঝানো হয়।
ওলামা বলতে এমন লোকদের বুঝানো হয়, যাঁরা মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে সম্যক ভাবে অবগত এবং বিশ্বের সৃষ্টিকুল, তার আবর্তন-বিবর্তন ও পরিবর্তন সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করেন। সৃষ্টি বৈচিত্র্য সম্পর্কে দিবা-রাতের হ্রাস বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা করেন। কেবল নাহু-ছরফ, ফিকাহ, অলঙ্কার শাস্ত্র কিংবা বিশুদ্ধ আরবি ও ফার্সী জানা ব্যক্তিদেরকে ওলামা বলা হয় না।

ইসলামী পরিভাষায় ইলম বলতে বুঝানো হয়, হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সম্পর্কিত জ্ঞান এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে জীবনাচারের শিক্ষা। সাধারণ কথায়, পবিত্র কুরআন ও হাদীস থেকে অর্জিত জ্ঞানই হলো ইলম। আর যিনি কুরআন ও হাদীসের আলোকে হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সম্পর্কিত জ্ঞানের অধিকারী হন তিনি হলেন আলেম।
বলতে গেলে আলেম শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। আমরা আলেম-ওলামা বলতে যাদের চিনি বা জানি তারা হলেন, সাধারণত মাদরাসায় পড়–য়াদেরকে আমরা আলেম-ওলামা বলে জানি। এঁদের মধ্যে যাঁরা বা যিনি ইলমে ছরফ, নাহু, ফিকাহ, হাদীস কিংবা তাফসির শাস্ত্রে অধিক পা-িত্যের অধিকারী, তাদেরকে বড় আলেম বলে মান্য করে থাকি। আবার তাদের মধ্য হতে লম্বা কোর্তা পরিহিত শ্মশ্রু ম-িত এবং উষ্ণীশধারীদেরকে আলেম-ওলামা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি এবং সম্মানের চোখে দেখি। আসলে কুরআন-হাদীসের দৃষ্টিতে কারা প্রকৃত আলেম-ওলামা ও তাদের সম্মান ও মর্যাদা কতটুকুন তা আলোচনা করা এখন সময়ের দাবি।
প্রকৃত আলেমের পরিচয় নির্ণয়ে নি¤েœাক্ত হাদীসটি উল্লেখ করার মতো, হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহ. হতে বর্ণিত যে, একদা ওমর রাদিআল্লাহু আনহু আকাবিরে তাবেয়ীনদের অন্যতম কাবেআহবার রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে জিজ্ঞেস করলেন-সাহেবে ইলম বা প্রকৃত আলেম কারা? প্রত্যুত্তরে কা’ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন-সাহেবে ইলেম বা প্রকৃত আলেম তারা যারা স্ব-স্ব উপার্জিত ইলম অনুযায়ী আমলও করেন। পুনরায় ওমর রাদিআল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন-কোন বস্তু আলেমদের অন্তর হতে ইলমকে বের করে দেয়? উত্তরে কা’ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন-(পার্থিব) লোভ-লালসা (আলেমদের অন্তর হতে) ইলমকে বের করে দেয়।” [(দারেমী) মিশকাত]
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- এ উম্মাতের আলেমরা দু’শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন সে আলেম যাকে আল্লাহ তায়ালা ইলম দান করেছেন, আর সে তাঁর ইলম জনগণের মধ্যে ব্যয় করেছেন, লোভ-লালসার বশীভূত হয়ে মানুষের নিকট থেকে কোনরূপ বিনিময় গ্রহণ করেননি কিংবা তা বিক্রয়ও করেননি। সেই আলেমের জন্য জল ভাগের মৎস্য, স্থলভাগের সকল প্রাণী এবং মহাশূন্যে উড়ন্ত পক্ষীকুল তার জন্যে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর দ্বিতীয় শ্রেণির আলেম হচ্ছে- যাকে আল্লাহ ইলম দান করেছেন, কিন্তু সে আল্লাহর বান্দাদের সাথে (তার ইলম খরচ করার ব্যাপারে) কৃপণতা করেছে, লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে (ইলম খরচ করে কিংবা ইলম শিক্ষা দিয়ে) বিনিময় গ্রহণ করেছে এবং মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয় করেছে। (তার শাস্তি হলো) কিয়ামত দিবসে তাকে আগুনের লাগাম দেয়া হবে এবং একজন আহ্বানকারী শব্দ করতে (বলতে) থাকবেন যে, “এ ব্যক্তি হচ্ছে ঐ আলেম, যাকে আল্লাহ তায়ালা ইলম দান করেছিলেন কিন্তু সে আল্লাহর বান্দাদের সাথে (ইলমের ব্যাপারে) কৃপণতা করেছে, লোভের তাড়নায় বিনিময় গ্রহণ করেছে এবং মূল্যের বিনিময়ে ইলম বিক্রয় করেছে।” আর এ’ভাবে হাশর ময়দানের কাজ সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত শব্দ করতে থাকবে। [তিবরানী]
উদ্ধৃত হাদীস হতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রথমোক্ত আলেমরা হচ্ছেন সঠিক এবং প্রকৃত আলেম। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলেমরা হচ্ছেন মেকী ও লোক দেখানো আলেম। প্রকৃত আলেম চিনতে আমাদেরকে আল্লাহর রাসূলের হাদীস, বুযুর্গানে দ্বীন ও সালফে সালেহীনের মূল্যবান বাণীর আলোকে চিন্তা-গবেষণা করতে হবে।
বর্তমানে কিছু কিছু বড় বড় আলেমের দাপাদাপি সর্বত্রই বিরাজমান। যারা গাড়ি-বাড়ি, এপার্টমেন্ট, বিলাসবহুল যান্ত্রিক সরঞ্জামাদি জোগাড়ে সারাক্ষণ পেরেশান থাকেন। স্ত্রী সন্তান-সন্ততিদেরকে বিজাতীয় মডেলে গড়ে তুলতে তারা সদা তৎপর। দুনিয়ার ফাসেক ফুজ্জারের মন জয় করতে সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকেন। পদ মর্যাদার লোভে তারা তাদের স্বকীয়তা ভুলে যান। ইসলাম ও মুসলমানদের বৃহত্তর স্বার্থ তাদের কাছে গৌণ। ক্ষমতাসীন বা সরকারে চামচামিতে তারা থাকেন সদা ব্যস্ত। তাদের মধ্যে ‘রিয়া’ আর ‘সুমআর’র ভূত চেপে বসেছে। কারণ তাদের অন্তরতো আলো শূন্য। যুগের শ্রেষ্ঠ নামী-দামী হলেও তাদেরকে প্রকৃত আলেম বলা যাবে না। এই সকল মেকী ও লোক দেখানো আলেমদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের একটি হাদীস তরীকায়ে মোহাম্মাদিয়া গ্রন্থে হযরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহুর বাচন ভঙ্গিতে এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে, হযরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, শেষ যামানায় (কিছু সংখ্যক) মূর্খ ইবাদাতকারী এবং ফাসেক আলেম বের হবে।
এ সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী মাকতুবাত গ্রন্থে লিখেছেন যে, জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তি একবার অভিশপ্ত ইবলিসকে দেখতে পায় যে, সে একেবারে খোশ মেজাজে ও বেকার বসে আছে। ঐ বুযুর্গ ব্যক্তি ইবলিসকে তার এহেন বেকার বসে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে প্রত্যুত্তরে সে বলে যে, বর্তমান সময়ের আলেম সমাজ আমাদের কাজ সমাধা করছে, জনগণকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তারাই যথেষ্ট। তিনি তার মাকতুবাত গ্রন্থে আরো লিখেছেন যে, মন্দ আলেমরা হচ্ছেন দ্বীনের জন্য ডাকাত স্বরূপ। তাদের উদ্দেশ্য পার্থিব মর্যাদার প্রতি আসক্তি এবং নেতৃত্বের লোভ।
প্রকৃত আলেমের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যে ব্যক্তি ফিকাহ শাস্ত্রের ইলম হাসিল করেছেন কিন্তু তাসাঊফ হাসিল করেননি, তিনি হচ্ছেন ফাসেক। আর যে ব্যক্তি কেবল তাসাউফ বিদ্যা লাভ করেছে, কিন্তু ফিকাহ শাস্ত্রের বিদ্যা আর্জন করেনি, সে হচ্ছে যিন্দিক। আর যে ব্যক্তি উভয় প্রকার (ফিকাহ ও তাসাউফ) ইলেম উপার্জন করেছেন, তিনি হচ্ছেন মুহাক্কিক বা পরিপূর্ণ ও প্রকৃত আলেম। আল্লাহ পাক কুরআনে পাকে আলেমের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকের বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলেমগণই আল্লাহপাককে ভয় করে।” [সূরা ফাতির : ২৮]
এ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে হাম্বলী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, শায়খুল মুহাদ্দেসীন হযরত আহমদ বিন হাম্মল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যার ভিতর যত বেশি আল্লাহভীতি রয়েছে তিনি তত বড় আলেম।”
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘‘তাফসীর খোলাছায়ে’’ উল্লেখ আছে যে, “শুধুমাত্র কিতাবসমূহ পাঠকারীকে বুঝানো হয়নি। বরং কুরআন শরীফে বর্ণিত আলেম তারাই যারা মহান আল্লাহ পাক এর জাত ও অসীম গৌরবময় সিফাতসমূহে ঈমান ও মারেফাতের নূরের আলোকে অবলোকন করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের প্রিয়তম সাহাবীগণ রাদিআল্লাহু আনহুম, তাবেয়ীনগণ, তাবে-তাবেয়ীনগণ এবং ওলী আল্লাহগণ সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইলমের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ তারাই কুরআন শরীফে বর্ণিত প্রকৃত আলেম ছিলেন।
এ আয়াতের ব্যাখায় বিখ্যাত আলেম, ইমামুল মুফাসসিরীন ইবনে কাছীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখ করেছেন যে, হযরত ইবনে মাসউস রাদিআল্লাহু আনহু  বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীস জানে সে ব্যক্তি আলেম নয়। বরং যার মধ্যে আল্লাহর ভীতি অধিক সে ব্যক্তিই প্রকৃত আলেম।
বিশিষ্ট তাবেয়ী, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীকত ইমাম হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-কে জিজ্ঞেস করা হলো-আলেম কে? তিনি জবাবে বলেন, “ফকীহ বা আলেম হলো ঐ ব্যক্তি, যে দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গোনাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ পাকের ইবাদাতে মশগুল, পরহেজগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তার অধীনস্থদের নছীহত করেন।”

যারা প্রকৃত আলেম তাদের মর্যাদা আল্লাহর দরবারে অতি উচ্চে। সাধারণ মানুষের মাঝে আলেমরা হলেন নক্ষত্ররাজিতুল্য। যাদেরকে অনুসরণ করার মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথের সন্ধ্যান লাভ করে থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পৃথিবীতে আলেমদের উদাহরণ হলো নক্ষত্ররাজির মতো। এদের সাহায্যে জল ও স্থলের অন্ধকারে পথের দিশা পাওয়া যায়। আর যদি তারকারাজি নির্মিলিত হয়ে যায়, তবে পথিকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। [মুসনাদে আহমাদ ও জামিউস সগীর]
কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে আলেমদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সূরা জুমার এর ৯ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, “যারা আলেম এবং যারা আলেম না; তারা কী সমান হতে পারে?” কুরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কী সমান হতে পারে?”[সূরা রাদ : ১৬]
সাধারণ মানুষের মাঝে আলেমরাই অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য। কোন বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগলে অথবা কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আলেমদের শরণাপন্ন হওয়ার জন্যে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে বলা হয়েছে, “ তোমরা যদি না জানো তবে আলেমদের জিজ্ঞাসা করো।” [সূরা নাহল : ৪৩]
আলেমদের মর্যাদাদানের কারণ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা আলেম তারাই তাঁকে অধিক ভয় করে।” [সূরা ফাতির : ২৮]
এছাড়া আলেমদের মর্যাদাদানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা সাধারণ মানুষের উপর আলেমদের দায়িত্বশীল বানিয়ে পাঠিয়েছেন। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, “আলেমরা কেন তাদেরকে পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করে না?” [সূরা মায়েদা : ৬৩]
আলেমরাই আল্লাহর কল্যাণ ও অনুগ্রহপ্রাপ্ত বলে কুরআনে বলা হয়েছে, “যাকে প্রজ্ঞা (গভীর জ্ঞান) দান করা হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।” [সূরা বাকারা :২৬৯]
শুধু কুরআনুল কারীমেই নয় বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীসেও আলেমদের সম্মান ও মর্যাদার কথা গুরুত্বের সাথে বলা  হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একজন আলেমের মর্যাদা একজন সাধারণ মানুষের উপর ততটুকুন, যতটুকুন তোমাদের উপর আমি একজন নবীর মর্যাদা।” [সহীহ তিরমিজি] অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, “দ্বীন সম্পর্কে শিক্ষিত একজন আলেম শয়তানের মোকাবেলায় একজন অজ্ঞ ব্যক্তির চেয়ে হাজার গুণ অধিক শক্তিশালী।” [সহীহ তিরমিজি ও ইবনু মাজাহ]
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলেমদের সম্মান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আলেমদের সম্মান করলো সে যেনো আমাকেই সম্মান করলো।” [দারেমী]
আলেমরা হলেন ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের গভীর ইলম দান করেছেন। যাদেরকে সবাই সম্মান করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেবল দুই ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা যায়। ১. সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সেই সম্পদ সত্য-ন্যায়ের পথে খরচ করে। ২. সেই আলেম যাকে আল্লাহ তার দ্বীনের গভীর ইলম দান করেছেন এবং তার দ্বারা তিনি রায় প্রদান করেন।” [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম]
অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়।” [ইবনে মাজাহ]
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতে চাইলে আলেম-ওলামাদের ভালোবাসতে হবে। তাদের সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে ও অসম্মান করে কখনো আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর রহমতের আশা করা যায় না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “(হে হাবীব) আপনি বলে দিন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে বা মহব্বত করে থাক, তবে আমাকে (সুন্নতকে) অনুসরণ করো। তবেই আল্লাহপাক তোমাদেরকে মহব্বত করবেন ও তোমাদের গোনাহ্ খাতাসমূহ ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।” [সুরা আলে ইমরান : ৩১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মহব্বত (অনুসরণ) করলো সে ব্যক্তি আমাকেই মহব্বত (অনুসরণ) করলো।” [মেশকাত, মেরকাত]

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলেমদেরকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয় আলেমরা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী।” [সহীহ তিরমিজি, আবু দাউদ]
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা মোটেও বলা অত্যুক্তি হবে না যে, আলেম-ওলামাদের মর্যাদা ও সম্মান আকাশতুল্য। তাদের সাথে বেয়াদবি, তাদের কষ্ট দেয়া ও নির্যাতন করা অত্যন্ত গোনাহের কাজ। এর জন্যে দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন মুসিবতের সম্মুখীন হতে হবে।
অতএব যারা আলেম-ওলামা তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দান সকলের অবশ্য কর্তব্য। আলেম-ওলামাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দানের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব।
লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক