সংগ্রাম চলবেই


 ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই : সাক্ষাত্কারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী

দেশবরেণ্য আলেম ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, জনসাধারণের ঈমান-আকিদা ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদেই তারা আন্দোলন করছেন। ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই আলেম বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে দেশকে ধর্মহীন তথা নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাত্কারে হেফাজতে ইসলাম ও তাকে নিয়ে একটি গোষ্ঠীর কিছু প্রশ্নেরও খোলামেলা জবাব দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইসলাম ও রাসুল (সা.)-কে অবমাননার সঙ্গে জড়িত ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিপুল জনতার উপস্থিতিতে ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদী অবস্থান, মানববন্ধন, উপজেলা পরিষদ ঘেরাও এবং স্মারকলিপি প্রদানসহ হেফাজতে ইসলামের বেশকিছু কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এরই মধ্যে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে দাবি আদায় না হলে আগামী ৬ এপ্রিল দেশের সব জেলা থেকে ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ ও মহাসমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ লক্ষ্যে সংগঠনটি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
প্রবীণ এই আলেম হেফাজতে ইসলাম ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে রয়েছেন। উপমহাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এবং বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি।
হেফাজতে ইসলাম গঠন করার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আল্লামা শফী বলেন, মুসলমানদের ঈমান-আকিদা, নীতি-আদর্শ, কৃষ্টি-কালচার, সঠিক ধর্মীয় বিধিবিধান ও অনুশাসনের সুরক্ষা এবং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যেই ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ নামের সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নীতিকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি আবারও স্পষ্ট করছি, আমাদের সব কর্মসূচিই শুধু ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট, দেশাত্মবোধক, শান্তিপূর্ণ এবং অরাজনৈতিক।’
ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেন কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আল্লামা শফী বলেন—দেখুন, আমাদের আন্দোলন ঢালাওভাবে সব ব্লগ বা ব্লগারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা জানি, সাধারণ মুসলমান, ছাত্র-শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবীর অনেকেই ব্লগ লিখে থাকেন। আলেম ও মাদরাসা ছাত্রদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্লগার রয়েছেন। আমাদের প্রতিবাদী আন্দোলন কেবল সেসব ব্লগারের বিরুদ্ধে যারা মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতার আড়ালে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, প্রিয় নবী রাসুল (সা.), পবিত্র কোরআন এবং ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুত্সা ও অবমাননায় জড়িত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোনো মাপকাঠিতেই এমন কুত্সা ও অবমাননা মেনে নেয়া যায় না। ওরা ইসলামের এমন জঘন্য অবমাননা করেছে—যা পশ্চিমা বিশ্বের কোনো অমুসলিমের মুখেও কখনও শোনা যায়নি। সুস্থ বিবেকের কোনো মুসলমানের পক্ষে এসবের সম্পূর্ণটা পড়ে দেখার সাধ্যও নেই। শুরু থেকেই আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা, ইসলামবিরোধী নারীনীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে আসছি। অথচ ক’বছর যেতে না যেতেই বর্তমান সরকারের গৃহীত এসব নীতির মারাত্মক কুফল শুরু হয়ে গেছে।
হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলনের দাবি নিয়ে বিভ্রান্তির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আল্লামা শফী বলেন, আমরা জনসমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন ও পত্রিকায় বিবৃতি দেয়ার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো বার বার তুলে ধরেছি। আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে সংবিধানে আল্লাহ্র ওপর পূর্ণ আস্থা, বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাস। পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগ, সাইটে মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব অবমাননাকর জঘন্য কটূক্তিকর প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, সেসব বন্ধ করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্লগ, ব্লগার ও পোস্টদাতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা।
তিনি বলেন, এছাড়া তাদের দাবির মধ্যে অন্যতম হলো পাঠ্যবইয়ে ধর্ম অবমাননাকর সব মন্তব্য ও উদ্ধৃতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে অবিলম্বে সংশোধনী প্রকাশ, সব অনাচার, ব্যভিচার ও অশ্লীলতা এবং নাটক-সিনেমায় ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় নিদর্শন তথা দাড়ি-টুপি, হিজাব ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে অবমাননা রোধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দান। শিক্ষার সব স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা ।
তিনি বলেন, আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, আমাদের সব দাবিই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং সব নাগরিকই এতে একমত পোষণ করবেন বলে আশাবাদী। সরকার দেশ, জনগণ ও মুসলমানদের স্বার্থে আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিলেই চলমান আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। আমরা বারবারই বলে আসছি আমরা ক্ষমতার অংশ হতে চাই না। জনসাধারণের ঈমান-আকিদা ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদেই আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি।
সংবিধান সংশোধনের ফলে যে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরে এসেছে, এ ব্যাপারে তার অবস্থান জানতে চাইলে আল্লামা শফী বলেন, ইসলাম ও রাসুলকে (সা,) অবমাননাবিরোধী চলমান আন্দোলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবির প্রথম দাবিই হচ্ছে সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করতে হবে। অবশ্যই প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী। ধর্মনিরপেক্ষতার মানেই হচ্ছে নাস্তিকতা। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নাগরিকই ইসলামধর্মে বিশ্বাসী। গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও সঙ্গত কারণেই এদেশকে মুসলিম দেশ বলতে হবে। আর ইসলামী আইনে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব ধর্মীয় রীতি পালন ও নিরাপত্তা বিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে মূলত এদেশকে ধর্মহীন তথা নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার স্পষ্ট আলামত এরই মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি।
চলমান আন্দোলনের এবং হেফাজতে ইসলামের সর্বশেষ লক্ষ্য কী জানতে চাইলে আল্লামা শফী বলেন, চলমান আন্দোলনে আমরা ১৩টি দাবি উত্থাপন করেছি। ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ রাখা এবং সঠিক পথে পরিচালিত করাই এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য। ঈমান-আকিদা ও ইসলামবিরোধী কোনো তত্পরতা বা প্রতিকূলতা দেখা না দিলে মুসলমানদের মাঝে সঠিক ইসলামী বিধি-বিধান ও শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণের প্রচার এবং শিরক, বেদাতসহ সব ধর্মীয় কুসংস্কার সম্পর্কে মুসলমানদের সতর্ক করার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের তত্পরতা সীমাবদ্ধ থাকবে।
৬ এপ্রিল লংমার্চে কত লোক জমায়েতের আশা করছেন প্রশ্ন করা হলে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে আল্লামা শফী বলেন, হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রস্তুতি কমিটি ও সমন্বয় প্রতিনিধি দল বর্তমানে দেশব্যাপী সফর এবং জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক সূচি শেষ করছেন। মুসলমানদের ঈমান-আকিদা রক্ষার জন্য অপরিহার্য দাবি ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি ও নৈতিকতা রক্ষার জন্য হেফাজতে ইসলাম যে ডাক দিয়েছে, তাতে যে পরিমাণ সাড়া মিলছে, আমরা আশাবাদী সরকার কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না করলে অন্ন্তত ৫০ লাখ লোকের জমায়েত হবে, ইনশাআল্লাহ।
কর্মসূচি বানচাল করার চেষ্টা করা হলে কিংবা বাধা দিলে কী করবেন, প্রশ্ন করা হলে আল্লামা শফী বলেন, আমরা আগে থেকেই সতর্ক করে আসছি, ঈমান-আকিদা রক্ষার আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ লংমার্চে বাধা দিলে আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লাগাতার হরতাল বা অবস্থান ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। তবে আমরা এখনও আশাবাদী, সরকার লংমার্চ কর্মসূচি পালনের আগেই আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করে ওলামা-মাশায়েখ ও ৯০ ভাগ মুসলমানের বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। আমাদের জোরালো আশাবাদী হওয়ার কারণ হচ্ছে, বর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল তারা কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করবে না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দু’বার বৈঠক হয়েছে। তখনও তিনি বারবার এ প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছিলেন, যদিও সরকার তার প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হওয়ার মতো কোন কাজ এখনও পর্যন্ত করেনি।
আল্লামা শফীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এর সত্যতা কতটুকু? জবাবে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের মূল স্লোগান হচ্ছে, দ্বীনি ও ইসলাহী একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত কখনও কোনো রাজনৈতিক বা কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, এমন কোনো দাবি বা কর্মসূচি দেয়নি। ইসলামের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনাকারী নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহিদের বিরুদ্ধে আমাদের চলমান আন্দোলনেও আমরা যে ১৩টি দাবি উপস্থাপন করেছি, তার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। আমাদের দাবি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি একাত্মই ঈমান আকিদা, ইসলাম ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট।
আল্লামা শফী বলেন, যখন হেফাজতে ইসলামের নায্য দাবিতে সারাদেশ উত্তাল, তখন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা অন্যায় অবস্থানের স্বপক্ষে কোনো যুক্তি খুঁজে না পেয়ে হেফাজতে ইসলাম ও আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও জঙ্গিবাদের কল্পনাটক সাজিয়ে বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য রাখছেন। অথচ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দেশি-বিদেশি পরিদর্শনকারীসহ দেশের কোটি কোটি তৌহিদি জনতা দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং হেফাজতে ইসলামের রাজনীতি মুক্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও দাবি সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল।
তিনি বলেন, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সঙ্গে দেখা করছেন, আমাদের পড়ালেখার পরিবেশ, শৃঙ্খলা, শান্তিপূর্ণ অবস্থান এবং হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তারা সবাই আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ নীতির ব্যাপারে প্রশংসা করছেন। সুতরাং বিষয়টা এভাবে ভাবুন, যারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর অবাধ্য হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে পারছে, তাদের অপতত্পরতার প্রতিবন্ধক প্রতিবাদী ওলামা-মাশায়েখ ও হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিষোদ্গার বা অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি মনে করি, তাদের অপতত্পরতা ঢাকার জন্য যত মিথ্যাচার ও অপপ্রচারই তারা করুক, দেশের ইসলামপ্রিয় জনতা এতে মোটেও বিভ্রান্ত হবেন না। সাধারণ মানুষ এটা সহজেই উপলব্ধি করতে পারছেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে সমালোচনাকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা প্রমাণ করে দেখাক, হেফাজতে ইসলাম ও ওলামা-মাশায়েখের কোন কোন দাবির সঙ্গে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
আল্লামা শফী বলেন, বিভিন্ন মিডিয়া, টিভি টকশোতে হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কথা যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। জামায়াত থেকে আমরা অর্থ নিচ্ছি বলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশে বলব, টাকা-পয়সা নিলে জামায়াত থেকে কেন, ক্ষমতাসীন বা ইসলামবিদ্বেষী মহল থেকেও তো নিতে পারতাম। আমরা ইসলামবিরোধী আগ্রাসন রোধ করার লক্ষ্যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ময়দানে নেমেছি। দল-মত-নির্বিশেষে সব মুসলমান আমাদের সমর্থন করছেন। ইনশাআল্লাহ ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই।
ব্লগারদের শাস্তি হলে হেফাজতে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে না সক্রিয় থাকবে—এমন প্রশ্ন করা হলে আল্লামা শফী বলেন, আমি আগেও উল্লেখ করছি, মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ও কৃষ্টিকালচারে হেফাজত এবং এর বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যেই ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপের জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এরআগেও নতুন প্রবর্তিত ধর্মহীন শিক্ষানীতি, হিজাব পালনে নারীদের বাধ্য করা যাবে না বলে হাইকোর্টের রায়, ফতোয়া বিরোধী হাইকোর্টের রায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি প্রতিষ্ঠা, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি তুলে দেয়া, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ বাদ দেয়ার চেষ্টা, ঢালাওভাবে আলেম-ওলামা ও কওমি মাদরাসার সঙ্গে জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অপপ্রচার, ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের চেষ্টা, দাড়ি-টুপিধারীদের নিগ্রহ, হাইকোর্টে কোরআন সংশোধনের জন্য মামলা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ, রাসুল, কোরআন ও ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য ও বিবৃতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও সম্মিলিত প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছি।
তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি সফল হয়েছি, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরো সফলতা না পেলেও বাধাগ্রস্ত করতে পেরেছি। সবচেয়ে বড় যে অর্জন সেটা হচ্ছে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে আমরা জোরালো এই বার্তা পৌঁছতে পেরেছি, দেশের ওলামা-মাশায়েখ ও ইসলামপন্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ছোটখাটো মতভেদ থাকলেও ইসলামের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের ওপর কোনো আঘাত এলে, সেক্ষেত্রে আমরা দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ি এবং আমাদের অরাজনৈতিক কর্মসূচির পক্ষে দল-মত-নির্বিশেষে বিশাল জনগোষ্ঠীর জোরালো সমর্থন রয়েছে। সুতরাং যখনই ইসলাম ও মুসলমানদের আকিদা-বিশ্বাস ও কৃষ্টিকালচারের ওপর আঘাত আসবে, তখনই হেফাজতে ইসলাম তত্পর ভূমিকা রাখবে। আমি জোরালো আশাবাদী, হেফাজতে ইসলামের অরাজনৈতিক এ আন্দোলন দেশের ওলামা-মাশায়েখরা স্থায়ীভাবে অব্যাহত রাখবেন।
ভবিষ্যতে দেশের কোনো রাজনৈতিক সঙ্কটে হেফাজতে ইসলাম ভূমিকা রাখবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বাইরে কোনো রাজনৈতিক ভূমিকায় জড়াবে না।