উৎখাতের এক ঘণ্টা আগে মুরসিকে ক্ষমতা ছাড়তে বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র

মিসরের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মিসরের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এল বারাদির নাম বাতিল হওয়ার পর অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জিয়াদ বাহা-এলদিন নামে একজন আইনজীবী ও রাজনীতিকের নাম শোনা যাচ্ছে। এর আগে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উদারপন্থী রাজনীতিবিদ এল বারাদিকে নিয়োগ করা নিয়ে বিরোধের কারণে থমকে যায় অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়া। যদিও দেশটির বিভিন্ন উদার ও মধ্যপন্থী রাজনৈতিক মহল এল বারাদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তামারোদ প্রোটেস্ট মুভমেন্টের নেতা মোহাম্মদ বদর বলেছেন, এল বারাদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের কথা শুনে আমি খুবই আনন্দিত।
এল বারাদি এমন একজন মানুষ যিনি ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত বিপ্লবে পুরো দেশকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। কিন্তু ইসলামপন্থীদের আপত্তির মুখে এল বারাদির নিয়োগ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে এবং নতুন করে সংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির একজন প্রেসিডেন্সিয়াল মুখপাত্র মিসরের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে জানিয়েছেন, যে জিয়াদ বাহা-এলদিন নামে একজন আইনজীবী ও রাজনৈতিককে অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে তামারোদ মুভমেন্টসহ কয়েকটি রাজনৈতিকদল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এল বারাদি ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য অন্তর্র্বর্তী প্রেসিডেন্ট আদলি মনসুর এল বারাদি এবং আরো কয়েকজন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিবিসি অনলাইন, আল-জাজিরা, এএফপি।
অপর এক খবরে বলা হয়, মিসরের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের ঘণ্টাখানেক আগে  প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতা ছাড়তে বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে ইরানের ইংরেজি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভি এ খবর দিয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর হাতে মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক ঘণ্টা আগে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজনকে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। বুধবার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে একটি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট মুরসিকে যুক্তরাষ্ট্রের দূত উল্লেখ করে অনুরোধ করেন, চলমান অচলাবস্থা নিরসনে তাকে তার মন্ত্রিসভা পরিবর্তনের জন্য শেষবারের মতো সুযোগ দেয়া হোক। তবে নিউইয়র্ক টাইমস ওই মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করেনি। এ সম্পর্কে মুরসির শীর্ষ পর্যায়ের একজন উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতা দখলের কয়েক ঘণ্টা আগে ওই পররাষ্ট্রমন্ত্রী য্্ুক্তরাষ্ট্রে টেলিফোন করেছিলেন। তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা নিয়েগের কথা বলেছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভা সমস্ত ক্ষমতা দখল করবে এবং মুরসির নিয়োগ করা প্রাদেশিক গভর্নরদের জায়গায় নতুন গভর্নর নিয়োগ দেবে। সুসান রাইসের পক্ষ থেকে যখন ফোন যায় তখন সেখানে ছিলেন মুরসির পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা এসাম আল-হাদ্দাদ। তিনি রুম থেকে বের হয়ে যান এবং মিসরে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যানি প্যাটারসনকে বলেন, তিনি যেন ওয়াশিংটনকে বলে দেন যে, মুরসি মার্কিন প্রশাসনের ওই কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন। রুমে ফিরে হাদ্দাদ জানান, তিনি সুসান রাইসকে ফোন করেছেন। গত বুধবার সেনাবাহিনী মুরসির কাছ থেকে জোর করে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় এবং বিচারপতি আদলি মানসুরকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। অথচ মিসরের সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল আব্দুল ফাত্তা আল-সিসির সঙ্গে মুরসির বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠার পরই গত বছরের গ্রীষ্মে তাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট মুরসি। হোসনি মোবারকের পতনের পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার সময় ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রতিনিধি ছিলেন মুহাম্মাদ মুরসি। সেই সুবাদে তার সঙ্গে সিসির ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং এক পর্যায়ে জেনারেল সিসির প্রতি মুরসির সর্বোচ্চ আস্থা গড়ে ওঠে। সূত্র : ইন্টারনেট।