২৯ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে : যথাসময়ে মুখ খোলার ঘোষণা মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর


হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ২৯ দিনের রিমান্ড নিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা বরেণ্য এই আলেম নির্যাতনের বিস্তারিত বলতে চাননি। তিনি বলেছেন, ‘সময় হলে সব খুলে বলব।’ গতকাল হাটহাজারীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। আল্লামা বাবুনগরী বলেন, হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। বর্তমান সরকার বলছে আমরা জামায়াতসহ ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছি। তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। হেফাজতে ইসলাম ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করছে। তিনি আরও বলেন, ৫ মে ঘটে যাওয়া সহিংস কোনো ঘটনার সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক নেই। অহেতুক আমাকে ১৭টি মামলা দেয়া হয়েছে। তারা আমাকে রিমান্ডে নিয়ে অনেক টর্চার করতে চেয়েছে। সময় এলে সব খুলে বলব।
তিনি বলেন, হেফাজত নিভে গেছে বললে ভুল হবে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় রাখতে আসন্ন রমজানে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভা এবং ১৩ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা হবে। তাছাড়া ঈদের পর সংগঠন নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের ছক নির্ধারণ করা হবে। আমরা সব সময় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। জুনায়েদ বাবুনগরী তৌহিদি জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। যখন ডাক আসে, তখন ইসলামের জন্য শহীদ হতে এগিয়ে আসবেন। ইসলামের দুশমন আগেও ছিল, এখনও আছে। তাদের কঠোর হাতে প্রতিহত করতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা তা পারব। আপনারা ধৈর্য ধরুন।
আল্লামা বাবুনগরী গতকাল ‘হেফাজত দুর্গ’ বলে খ্যাত তথা দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় দু’মাস পর আসেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বন্দর চট্টগ্রামের সিএসসিআর নামক একটি প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে চিকিত্সা শেষে হাটহাজারী মাদরাসায় ফেরেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন মহাসচিবের সঙ্গে থাকা হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র মাওলানা মো. লোকমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন হেফাজত নেতারা। মহাসচিব হাটহাজারী মাদরাসায় পৌঁছলে তাকে বরণ করে নেন হেফাজতের নায়েবে আমির হাফেজ শামসুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইলিয়াছ, মাওলানা হারুন, মাওলানা ইয়াহিয়া, পৌর হেফাজত সভাপতি মাওলানা মীর ইদ্রিছ, সম্পাদক জুনায়েদ বিন ইয়াহিয়া, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির প্রমুখ।
কাউকে ক্ষমতার মসনদে বসাতে কিংবা বসতে সংগঠন করি না : ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। কাউকে ক্ষমতার মসনদে বসাতে কিংবা বসতে সংগঠন করি না। হেফাজতি শক্তিকে আল্লাহ যে মসনদে বসিয়েছেন, তার দাম শেখ হাসিনার গদির চেয়ে কোটি কোটি গুন বেশি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্ভূত, নৈরাজ্যকর ও হিংসাত্মক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দীনের পতাকাবাহী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের বিকল্প নেই। তিনি দেশকে জালেমদের হাত থেকে রক্ষায় মোমিনদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে চিকিত্সা শেষে গত বৃহস্পতিবার রাতে ফটিকছড়ি উপজেলার নিজ গ্রাম বাবুনগরে প্রথম সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বাবুনগর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ওই সংবর্ধনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও মাদরাসার পরিচালক মাওলানা শাহ মুহিবুল্লাহ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ওই মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা হাফেজ হাবিব উল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আমি কারও পক্ষে-বিপক্ষে বলি না। তবে ইসলামের পক্ষে বলতে গিয়ে যদি কারও মনে আগুন জ্বলে, সেজন্য হেফাজত দায়ী নয়। হেফাজতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত হয়নি, বরং আরও বেশি জোরদার হয়েছে।
গ্রেফতার করা হেফাজত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করেন জুনায়েদ বাবুনগরী ।
বাবুনগরী দাবি করেন, রিমান্ডে থাকাকালীন কিছু মিডিয়া তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে প্রচার করেছে। তিনি সময়-সুযোগে এসবের জবাব দেবেন বলে জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মাদরাসার সহকারী পরিচালক মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা সেলিম, মুফতি হাবিব উল্লাহ, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা জালাল। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আবু মাকনুন মোহাম্মদ বাবুনগরী।
এর আগে বাবুনগরী চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি সেবাদান কেন্দ্র সিএসসিআর থেকে সরাসরি চলে আসেন নিজ চাকরিস্থল হাটহাজারী মাদরাসায়। এশার নামাজ শেষে তিনি রাত সাড়ে ১১টায় ফটিকছড়ির নিজ গ্রামে সংবর্ধনায় যোগ দেন। এসময় হেফাজত সমর্থিত কর্মীদের শতাধিক মোটর শোভাযাত্রা তার সঙ্গে অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ মে হেফাজতের সমাবেশের পরদিন তিনি ঢাকায় গ্রেফতার হন। দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে ৩০ মে তিনি জামিনে মুক্তি পান। গুরুতর অসুস্থতার কারণে প্রথমে ঢাকার বারডেম ও পরে চট্টগ্রাম নগরের সিএসসিআরে তাকে ভর্তি করা হয়।