বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ বনাম দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ


বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ বনাম দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ

লিখেছেন  ফিরোজ মাহবুব কামাল-
দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ রক্তক্ষয়ী বিশাল যুদ্ধ উপহার দেয়াই আওয়ামী লীগের রাজনীতি। সম্প্রতি শাহবাগের যুবকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তারা আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধটি ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। হাজার হাজার মানুষ সে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। আর এবারের যুদ্ধ ইসলামপন্থিদের নির্মূলে। তারা এবারে ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থার বাণী সরিয়েছে। শুধু সে টুকুতে তারা খুশি নয়। এবার চায়, দেশ থেকে ইসলাম ও সকল ইসলামপন্থিদের নির্মূল। এ যুদ্ধের সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে শাহবাগের জমায়েত থেকে। তারা চায় সকল রাজাকারের ফাঁসি। চায় সকল ইসলামি দলের নিষিদ্ধকরণ।
এমনকি যেসব ইসলামপন্থিদের জন্ম একাত্তরের ২০ বছর পর তারাও তাদের দৃষ্টিতে রাজাকার। দ্বিতীয় এ যুদ্ধের নেতৃত্বে আছে এমন সব উগ্র নাস্তিক-মুরতাদ যাদের মনপ্রাণ মহান রাব্বুল আলামীন ও তাঁর মহান রাসূল (সাঃ), রাসূলের বিবিগণ এবং সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে ঘৃণাপূর্ণ বিষে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। ফলে তাদের দুশমনিটা শুধু রাজাকার বা দেশের ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে নয়, বরং খোদ মহান আল্লাহতায়ালা এবং তাঁর রাসূল ও ইসলামের বিরুদ্ধে। সে দুশমনিটা তারা গোপনও রাখেনি। ইসলামের এ শত্রুপক্ষটি সেটি প্রকাশ করে আসছে তাদের ব্লগে। তাদের বিরুদ্ধে ইসলামের নির্দেশটি কী এবং মুসলমানদের করণীয় কীÑইসলামে সেটি সুস্পষ্ট। চোর-ডাকাত, খুনি, মিথ্যুক ও ব্যাভিচারির শাস্তি কীরূপ হবে সে ফয়সালার ভার আল্লাহতায়ালা মানুষের হাতে দেননি। আল্লাহতায়ালা শুধু ইবাদতের বিধান দেননি, আইনের বিধানও দিয়েছেন। সে বিধানটি তিনি দিয়েছেন শরিয়তে। মুসলমানের দায়িত্ব হলো সে বিধানের বাস্তবায়ন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে মুসলিম নামধারী কোন ব্যক্তি কিছু লিখলে বা বললে সে আর মুসলমান থাকে না। সে পরিণত হয় মুরতাদে। আর ইসলামের মুরতাদের শাস্তিও মারাত্মক। ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঘৃণা নিয়ে বহুকাল ধরে ইন্টারনেটে লেখালেখি করেছে রাজীব নামের এক ব্লগার। শাহবাগ সমাবেশের একজন অন্যতম আয়োজক ছিল সে। সে মুরতাদটি ক’দিন আগে আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছুটে গেছেন তার বাড়িতে সমবেদনা জানাতে। অথচ ঢাকার বুকে নির্মমভাবে নিহত হচ্ছে বহু মানুষ। শত শত গার্মেন্ট শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা গেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা কি কখনো তাদের দেখতে গেছেন? ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে দিন-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হলো বিশ্বজিৎ দাশকে। দেখতে যাওয়া দূরে থাক, শেখ হাসিনা কি তার পরিবারের জন্য সামান্য সমবেদনাও জানিয়েছে? কে কীভাবে মারা গেল সেটি শেখ হাসিনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো নিহত ব্যক্তিটি কোন দল, কোন চেতনা ও কোন পক্ষের যোদ্ধা সেটি। গার্মেন্ট শ্রমিকগণ যেহেতু তার সম-চেতনার লোক নন বা তার দলের যোদ্ধাও নন, ফলে আগুনে পুড়ে কয়লা হলেও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর সময় তার হয় না। কিন্তু ব্লগার রাজীব খুন হলে তিনি ছুটে যান। কারণ, সে শুধু শেখ হাসিনার চেতনার আত্মীয়ই নয়, ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় সহযোদ্ধাও। তাই দ্রুত ছুটে গেছেন তার মৃত্যুর সংবাদে। রাজীবের জানাযায় ছুটে গেছে তার পুত্র জয়। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা তার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও শাহবাগ সমাবেশের নেতারা তাকে তাদের শুরু করা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ (?) বলেও ঘোষণা দিয়েছে।
মিথ্যাচার ও শহীদ শব্দের অপব্যবহার নিজেদের মৃতদের শহীদ বলার ক্ষেত্রেও তারা আশ্রয় নিয়েছে প্রচণ্ড মিথ্যাচারের। শহীদ শব্দটি একান্তই ইসলামের নিজস্ব পরিভাষা। শব্দটি কি বাংলা বা সংস্কৃত থেকে এসেছে? শহীদ কি কোন কাফের বা মুরতাদ হতে পারে? আল্লাহর উপর যাদের ঈমান নেই এবং জান্নাত ও জাহান্নামের উপর যাদের বিশ্বাস নাই, তাদের আবার শহীদের ধারণা আসে কোত্থেকে? ইসলামে শহীদের মর্যাদা বিশাল। আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করেছেন। বলা হয়েছে, তারা জীবিত। ইন্তেকালের পরও আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা খাবার পেয়ে থাকেন। এবং তারা পুরস্কৃত হবেন মহা নিয়ামতপূর্ণ জান্নাত পাওয়ার মধ্য দিয়ে। শহীদ তো তারাই হয় যাদের মনে মহান আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস থাকে এবং তারা যুদ্ধ করে একমাত্র আল্লাহর রাস্তায় এবং প্রাণ দেয় ইসলামের বিজয়ে। যারা রাব্বুল আলামীন মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে গালিগালাজ করে এবং শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে তারা কী করে শহীদ হয়? তাদের মৃত্যু তো কাফেরের মৃত্যু। মৃত্যু তাদের জীবনে জাহান্নামের আযাব ডেকে আনে।
একাত্তরের যুদ্ধে আওয়ামী লীগ ভারতের কাফের বাহিনীর পূর্ণ সমর্থনই শুধু পায়নি, বরং মূল যুদ্ধটি তো লড়েছে তারাই। সে যুদ্ধে আওয়ামী লীগের যোদ্ধারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একটি জেলা দূরে থাক, একটি থানার উপরও দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বাংলাদেশের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্ণ অধিকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬ই ডিসেম্বরে। সে অধিকৃতিকেই আওয়ামী লীগ আখ্যায়িত করেছে স্বাধীনতা বলে। আর দিল্লির সাথে স্বাক্ষরিত তাজুদ্দিনের ৭ দফা আত্মসমর্পণ চুক্তি এবং মুজিবের ২৫ দফা দাসচুক্তিকে বলেছে স্বাধীনতার সনদ(!)।!এবং বাকশালী স্বৈরাচারকে চিত্রিত করেছে গণতন্ত্র বলে এবং সকল বিরোধী মতাবলম্বী পত্রপত্রিকাকে নিষিদ্ধ করাকে বলেছে বাকস্বাধীনতা! সেই মুজিবি আমল নিয়ে আজও আওয়ামী লীগের কত গর্ব! মিথ্যাচার আর কাকে বলে! ভারত তার নিজ সৈন্য তুলে নিলেও দাসদের তুলে নেয়নি। বরং নতুন করে বসিয়েছে হাজার হাজার এজেন্ট। কোলকাতায় পুলিশ পালতে যত অর্থ ব্যয় হয় সে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেই বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ দালাল পালা যায়। ভারত সেটি জানে এবং সে স্ট্রাটেজি নিয়েই কাজ করছে। শাহবাগ মোড়ে এমন দালালের সংখ্যা কি কম ছিল?
যুদ্ধে নামছে ভারতও এবারের মিথ্যাচারটি শুধু রাজাকারদের বিরুদ্ধে নয়, খোদ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর মহান রাসূলে পাকের বিরুদ্ধে। তারা যুদ্ধ শুরু করেছে আল্লাহ ও তার শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের নির্মূলের এ যুদ্ধেও আওয়ামী লীগ ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা চায়। কারণ রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ার সামর্থ্য তাদের যেমন একাত্তরে ছিল না, এখনও নাই। ভারত নিজেও নিজ স্বার্থে এমন একটি যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট হতে চায়। কারণ তারা চায় তাদের সীমান্তে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ হোক। কারণ তাতে প্রচণ্ড বল পাবে ভারতের ২০ কোটি মুসলমান। তাই নিজ গরজেই ভারত তার সমর্থনের কথা এবারের যুদ্ধেও আগাম জানিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক সমাবেশে বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের যুদ্ধটি একাত্তরে শেষ হয়নি। আরো যুদ্ধ বাকি। ক’দিন আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকা এসেছিলেন। তিনিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে সরকার যা কিছু করছে ভারত তাতে সমর্থন দিবে। শাহবাগের সমাবেশ থেকে ঘোষিত যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধের আয়োজকদের প্রতি ভারতের সমর্থন প্রমাণ করে যুদ্ধটি রীতিমত শুরুও হয়ে গেছে। তেমনই একটি যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশব্যাপি। বাংলাদেশ এখন সুস্পষ্টভাবে দ্বি-ভাগে বিভক্ত। একপক্ষে ইসলামের শক্তি। অপর পক্ষে ইসলামের বিপক্ষ শক্তি। ইসলামের বিপক্ষ শক্তির ব্যাপক হত্যাযজ্ঞে শহীদ হয়েছে শত শত প্রতিবাদী তৌহিদি জনতা। তাদের একটাই অপরাধ তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল মহানবী (স.)-এর অবমাননাকারী ও কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ব্লগারদের ঔদ্ধত্য ও হাসিনার একাত্মতা ইসলামের বিরুদ্ধে লিখে সালমান রুশদি ও তসলিমা নাসরিনকে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হতে হয়েছে। জনরোষের ভয়ে তসলিমা নাসরিনকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। সালমান রুশদি এখনও ইঁদুরের ন্যায় লুকিয়ে লুকিয়ে বাস করে। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে সালমান রুশদি ও তসলিমা নাসরিন যা কিছু লিখেছে শাহবাগ সমাবেশের নেতারা লিখেছে তার চেয়ে বহু বেশী এবং অতি জঘন্য ভাষায়। বাংলার মাটিতে কোন অমুসলিমও এমন জঘন্য কথা পূর্বে বলেনি বা লেখেনি। বাংলাদেশের তৌহিদী জনগণ তাই সঙ্গত কারণেই জেগে উঠেছে। গতকাল (২২/০৩/১৩) জনগণ তাই শুধু রাজধানীতে নয়, বিপুল সংখ্যায় রাস্তায় নেমে এসেছিল বাংলাদেশের প্রতিটি নগর বন্দরে। আর বিক্ষুব্ধ জনগণের উপর যুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয় সরকারের পুলিশ, র্যা ব ও বিজিবিকে। হাজার হাজার রাউন্ড গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়েছে নিরস্ত্র জনতার উপর। তাদের সাথে যোগ দেয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডারগণ। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের ন্যায় ব্লগারগণ হাসিনার নিজস্ব যোদ্ধা। ছাত্রলীগের ক্যাডারগণ প্রকাশ্যে মানুষ খুন করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। আদালতেও তোলে না। অন্য কোনো সরকারের আমলে আদালতে কারো মৃত্যুদণ্ড হলে হাসিনার সরকার দায়িত্ব নেয় তাদেরকে মুক্ত করে আবার খুনের জগতে ফিরিয়ে আনার। এরূপ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের বেশী অপরাধীকে হাসিনা সরকার দেশের প্রেসিডেন্টকে দিয়ে মাফ করিয়ে দিয়েছেন। তেমন একটি আচরণ করেছে মুরতাদ ব্লগারদের সাথে। এসব ব্লগারগণ বহু বছর ধরে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা ও তাঁর মহান রাসূল (সাঃ) ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের গোয়েন্দাগোষ্ঠী সেটি সরকারকে জানালেও হাসিনা সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ব্লগারদের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের যোগসূত্র যে কতটা গভীর তার একটি তথ্যবহুল রিপোর্ট ছেপেছে দৈনিক আমার দেশ তার ২২/০২/২০১৩ তারিখের সংখ্যায়। নিম্নে তা থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেয়া হলো: “গত ২০১২ সালের ২১ মার্চ হাইকোর্ট ধর্মদ্রোহী মুরতাদদের ব্লগারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও তাতে পাত্তা দেয়নি হাসিনার সরকার। বরং উচ্চ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শাহবাগের কথিত প্রজন্ম চত্বরের নেতৃত্বদানকারী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন লিখেছে, ‘সম্পূর্ণ সজ্ঞানে সচেতনভাবে ঐ যুক্তিহীন অন্ধ ষাঁড়ের মতো উৎকট দুর্গন্ধময় ধর্মীয় অনুভূতি এবং ঐ যুক্তিহীন ধর্মীয় অনুভূতির রক্ষক আদালত, দুই জিনিসেরই অবমাননা করলাম।’ পবিত্র ইসলাম, দেশের প্রচলিত আইন-আদালত এবং সভ্যতার শত্রু ব্লগারদের এসব কুৎসিত মন্তব্য ও বক্তব্যের ডাউনলোড করা কপি সম্পূরক নথি হিসেবে আদালতে পেশ করেন আইনজীবীরা। একই সঙ্গে তারা আদালতের আদেশসহ তা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), র্যা ব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পেশ করেন। মহান আল্লাহ এবং নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও আদালত অবমাননাকারী এসব ব্লগারকে চিহ্নিত করে র্যা ব ও ডিবি পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রতিবেদন জমা দিলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সুপ্রিমকোর্ট, বিটিআরসি ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ব্লগাররা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্লগ ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহান আল্লাহ, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-সহ নবী-রাসুল (আ.), ইসলামের প্রধান খলিফা, ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধানকে কটাক্ষ করে মনগড়া ও ভয়ঙ্কর ধরনের মন্তব্য লিখে নিজেদের বিকৃত রুচি প্রকাশ করতে থাকে। ২০১১ সাল থেকে এসব ব্লগার আরও অশ্লীল ও অশালীন ভাষায় মহানবীর (স.) বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকে। এরই একপর্যায়ে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করলে সরকারের উপরের নির্দেশে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় বলে জানান ওই গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। গোয়েন্দা হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আসিফ মহিউদ্দীন, ব্লগার আহমেদ হায়দার রাজীব শোভন ওরফে থাবা বাবা, আরিফুর রহমান (প্রকৃত নাম নিতাই ভট্টাচার্য), ইবরাহিম খলীল ওরফে সবাক, স্বপ্নকথক, অমি রহমান পিয়ালসহ বর্তমানে শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অন্য ব্লগাররা পবিত্র ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। তারা সামহোয়্যারইন ব্লগ, মুক্তমনা ব্লগ, আমার ব্লগ, ধর্মকারীসহ বিভিন্ন ব্লগে এরা বিকৃত ভাষা প্রয়োগ করে মহান আল্লাহ ও রাসুল (স.)-কে নিয়ে ভয়ঙ্কর মন্তব্য করতে থাকে। এসব ব্লগ বন্ধ ও চিহ্নিত ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রার্থনা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক বাতুল সরওয়ার ও ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম হাইকোর্টে একটি রিট (নং ৮৮৬/১২) করেন। বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মো. খোরশিদ আলম সরকার এ রিটের ওপর শুনানির পর গত বছর ২১ মার্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করে মহান আল্লাহ, রাসুল (স.)-সহ ইসলাম ধর্মের অবমাননাকারী ব্লগগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের বিষয়ে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। পাশাপাশি আদালত ওইসব ব্লগ ও ব্লগারদের বিষয়ে অনুসন্ধান করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসি, র্যা ব ও পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতি নির্দেশনা দেন এবং রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পিটিশনে উল্লেখ করা ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালতের আদেশে ওইসব ওয়েবসাইট, ব্লগ ও ওয়েবপেজের স্বত্বাধিকারী এবং ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের অনুসন্ধান করে তাদের নাম-ঠিকানাসহ পূর্ণ পরিচয় আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের এ নির্দেশের পর বিটিআরসি প্রয়োজনীয় ব্লগারদের চিহ্নিত করে আদালতে পেশ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেয়। কিন্তু সরকারপক্ষ অদ্যাবধি এদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, উল্টো এসব নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী ব্লগারকে সমর্থন জানিয়ে আসছে।” এসব ব্লগারদের একজনের মৃত্যুতে হাসিনার শোক, নিহতের বাড়ীতে গমন এবং তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আখ্যায়িত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়- এসব মুরতাদদের শুধু সহযোগীই নয়, বরং তাদের পিছনের মূল শক্তি হলো এই হাসিনা সরকার। সরকারের প্রটেকশন না পেলে এ মুর্তাদদের কি সাহস হতো ঢাকার রাস্তায় দাড়িয়ে বুক ফুলিয়ে কথা বলার? জনগণ গতকাল (২২/২/১৩) যখন শাহবাগে তাদের আস্তানায় তিন দিক থেকে ধাওয়া করে তখনও তাদেরকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে এ সরকার।
হাসিনার এজেন্ডা : নিজ-পিতার ইজ্জত রক্ষা শেখ হাসিনা চান, আল্লাহতায়ালা, তাঁর মহান রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে যার যা ইচ্ছা বলুক, কিন্তু তার পিতার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। পিতার সম্মান রক্ষার্থে তিনি সংবিধানে সংশোধন এনেছেন। কেউ তার পিতার বিরুদ্ধে কিছু বললে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে হাজতে তোলে। আদালতে তার শাস্তি হয়। অথচ শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর রাসূলে পাকের ইজ্জতের উপর হামলা হলে তা রুখবার কেউ নাই। সরকারি পুলিশ বরং চড়াও হয় তাদের উপর যারা আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ নিয়ে ময়দানে নামে। এমন দেশে কি আযাব না এসে পারে? সরকার কি সে আযাব ডেকে আনার পথ বেছে নিয়েছে? অথচ মুসলমান রাষ্ট্রপ্রধানের মূল দায়িত্ব হলো, দেশে ইসলামের বিজয় আনা তেমনি আল্লাহর নামকে বুলন্দ করা এবং রাসূলের মর্যাদায় বৃদ্ধি আনা। সেটিই মহান আল্লাহর নির্দেশ- যা পবিত্র কোরআনে বার বার ঘোষিত হয়েছে। মুসলমানগণ তাই অহরহ আল্লাহু আকবর বলে। এবং মিছিলে বা সমাবেশে স্লোগান দেয়ার আগে সর্বপ্রথম “নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর” বলে। নইলে মুসলমানের ঈমানের প্রকাশ ঘটে না। এটিই মুসলিম সংস্কৃতি। মুসলমান তো বাঁচে আল্লাহ ও তার দ্বীনের গৌরববৃদ্ধির জন্য। এজন্যই সে শ্রম দেয়, অর্থ দেয়, এমনকি প্রাণও দেয়। অথচ হাসিনা সরকারের এজেন্ডা এবং সে সাথে উৎসব হলো ইসলামকে পরাজিত দেখার মধ্যে। ফলে তাদের মুখ প্রসন্ন হয় দেশে শরিয়তের পরাজয় দেখে, তেমনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে গালিগালাজ শুনে। কোন মুসলমান যখন রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পায় তখন তার উপর দায়িত্ব পায় সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় ও অসত্যের নির্মূল। তাকে কাজ করতে হয় আল্লাহর অতি অনুগত খলিফা রূপে। এ কাজের মধ্য দিয়ে একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় বান্দায় পরিণত হয়। তিনি জান্নাত পান। অপর দিকে আল্লাহর কাছে অতি অপরাধী হলো জালেম শাসক। সে কাজ করে শয়তানের খলিফারূপে। তার বিরুদ্ধে হক কথা বলাকে জিহাদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। জাহান্নামের অতি বেদনাদায়ক শাস্তি তাকে দেয়া হবে। কোন মুসলিম শাসকের ন্যায়কর্ম কি দেশের রাজধানির এক চৌরাস্তায় একপাল মুরতাদকে আল্লাহ,তাঁর রাসূল ও ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জারি রাখার অনুমতি দেয়া? সরকার প্রধানের ঈমানদারিত্ব কি রাষ্ট্রের পুলিশ দিয়ে তাদের পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করা? অতীতে কোন ইংরেজ কাফের শাসকও এমন কাজ ভারতে বা বাংলাদেশে হতে দেয়নি। দেশের ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। শেয়ার বাজার লুট হচেছ, পথে ঘাটে মানুষ লাশ হচ্ছে, অসংখ্য নারী ধর্ষিতা হচেছ। অথচ তাদের প্রতিরক্ষায় পুলিশের বা র্যা বের তৎপরতা নেই। কিন্তু হাজার হাজার পুলিশ নামানো হয় মুসল্লিদের মিছিল ঠেকাতে!
ইসলাম শান্তি চায়, তবে সেটি শত্রুর সামনে জিহাদশূন্য আত্মসমর্পণ বা পরাজয়ের শান্তি নয়। কাফের বা মুনাফিকের জীবনে যুদ্ধ বা লড়াই থাকলেও জিহাদ বলে কিছু নাই। অথচ ঈমানদারের প্রতিটি যুদ্ধকেই জিহাদ হতে হয়। নইলে মহান আল্লাহর সাহায্য আসে না। নবীজীর (স.) জীবনে তাই প্রায় প্রতিবছর জিহাদ এসেছে। কোনো কোনো বছর একটি নয়, তাঁকে অনেকগুলি জিহাদ লড়তে হয়েছে। মদিনায় ১০ বছরের জীবনে তিনি ৫০টির বেশী জিহাদ লড়েছেন। আজও মুসলমানদের জীবনে ভিন্ন রীতি থাকতে পারে কি? ছাত্রের জীবনে প্রতি বছর যেমন পরীক্ষা থাকে তেমনি মুমিনের জীবনেও নিয়মিত পরীক্ষা থাকে। জিহাদ তো সে পরীক্ষা। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে, “তোমরা কি মনে কর যে এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং কে ধৈর্যশীল সে বিষয়টি আল্লাহ এখনও প্রকাশ করেন নাই” -সুরা ইমরান আয়াত ১৪২)।