নবীজির (সাল.) এর নাম নিয়ে বিদ্রুপের পরিণতি
ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী:নবী করিম (সাল.) এর যমানার কথা। এক
হতভাগা হযরতের পবিত্র নাম নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। ফলে তার মুখটা বাঁকা
হয়ে যায়। পরক্ষণে সে বুঝতে পারে, আল্লাহর নবীর (সাল,) সাথে বেয়াদবী
করেছি, তাই আমার এই শাস্তি, পরিণতি। লজ্জিত অনুতপ্ত হয়ে সে নিজের দোষ
স্বীকার করে। নবীজির (সাল.) দরবারে এসে মাফ চায়। আর্জি জানায়:আমি আপনার
শানে বেয়াদবী করেছি। মন্দ কথা বলেছি। অথচ এসব মন্দ কথার উপযুক্ত আমি
নিজেই। আমাকে মাফ করুন। আমি অপরাধী।
মওলানা রূমী (রহ.)এ প্রসঙ্গে কয়েকটি নীতিকথা ব্যক্ত করেন, যার আবেদন
চিরন্তন। সত্য পথের প্রতিটি অনুসারীর জন্য শিক্ষা রয়েছে এসব নীতিবাক্যে।
“চোন খোদা খা’হাদ কে পরদায় কাস দারাদ
মাইলাশ আন্দর তা-নায়ে পা’কা’ন কুনদ”
‘যখন আল্লহ চাহেন, কাউকে অপমানিত করবেন
পবিত্রজনদের বদনাম রটনায় তার মন ধাবিত করেন।’
সমাজে কিছু লোক আছে, তারা দেখতে ভাল মানুষ। তবে নেককার পবিত্র হৃদয়ের
লোকদের অপমান করতে চায়, বদনাম রটায়। এর মূল কারণ হচ্ছে, আল্লাহ পাক যখন
কাউকে লাঞ্ছিত অপমানিত করার ইচ্ছা পোষণ করেন, তখন তার মনে জাগ্রত হয়
শয়তানী কুমন্ত্রণা। তখন সে ভাল লোকদের মানহানীর চেষ্টায় লেগে যায়।
অর্থাৎ যারা ভাল ও পূত:চরিত্র লোকদের বদনাম রটায়, সম্মানহানির চেষ্টা
করে,তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের কপালে আগুন দেয়। কারণ, এরূপ লোকদেরকে
আল্লাহ পাক অপমানিত করেন। আল্লাহর বন্ধুদের, অলি-আল্লাহদের সাথে যারা
শত্র“তা পোষণ করে আল্লাহ নিজেই তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেন। পক্ষান্তরে-
“চোন খোদা খা’হাদ কে পূশদ আইবে কাস
কম যানাদ দর আইবে মা-য়ুবা’ন নাফাস”
‘যদি আল্লাহ চাহেন দোষ গোপন করবেন কারো
দোষ যাদের আছে উচ্চবাচ্য করে না, তাদের বেলায়ও।’
অর্থাৎ দোষী লোকদের দোষ চর্চা থেকেও সে বিরত থাকে। এর মূল কারণ হচ্ছে,
আল্লাহ তাআলা লোকটির দোষখাতা গোপন রাখতে চান। তাই তার মুখ বন্ধ রাখেন,
মানুষের দোষচর্চা হতে বিরত রাখেন। এমন কি দোষী লোকদের দোষখাতা সম্পর্কেও
উচ্চবাচ্য করে না সে। মওলানা রূমী বলতে চান যে, যারা সৎ লোক, নেককার ও
পবিত্রজনদের বদনাম রটায় তাদেরকে আল্লাহ অপমানিত করেন। আর তিনি যাদের
দোষত্র“টি গোপন রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন, তাদের মুখে ও আচরণে এমন সংযম দান
করেন, যাতে দোষী লোকদের দোষ চর্চা থেকেও তারা বিরত থাকেন।
আরেক শ্রেণীর মানুষ আছে যাদেরকে আল্লাহ পাক সরাসরি সাহায্য করতে চান।
কিন্তু কীভাবে অসহায় বান্দা আল্লাহর সাহায্য লাভ করতে পারবে। আল্লাহ ও
বান্দার মাঝে সেই যোগাযোগের মাধ্যম কী? কোন পাইপলাইনে সেই সাহায্য পৌঁছবে
আরশে আযীম হতে যমীনে বান্দার কাছে। মওলানা সেই সহজ পথটি বলে দিচ্ছেন
সাদামাটা ভাষায়।
“চোন খোদা খা’হাদ কে মা’ন য়া’রী কুনাদ
মেইলে মা’রা’ জা’নেবে যা’রী কুনাদ”
‘যদি আল্লাহ চাহেন আমাদের সাহায্য করবেন
কান্নার দিকে তখন আমাদের মন ধাবিত করেন।’
আল্লাহ যদি আমাদেরকে তার সাহায্য দ্বারা পুষ্ট ও শক্তি যোগাতে চান, তাহলে
আমাদের মন ও ধ্যানকে তার কাছে কান্নাকাটির দিকে ধাবিত করেন। সাধারণত আমরা
বুঝি কান্না দুঃখের আলামত। তাহলে কান্না কীভাবে আল্লাহর সাহায্য বয়ে আনবে?
মওলানা এ প্রশ্নের সমাধানে বলছেনঃ
“আ’খেরে হার গিরয়া আ’খের খান্দায়ীস্ত
মর্দে আ’খের বীন মোবা’রক বান্দায়ীস্ত”
‘কান্নার পরে হাসি’ এ তো শাশ্বত সত্যকথা
পরিনামদর্শী বন্দাই হয় সৌভাগ্যবান বন্দা।
কান্নার পরে হাসি আসবেই। দুঃখের পরে সুখ অবশ্যম্ভাবী। এ হচ্ছে, আল্লাহর
সাজানো বিশ্ব ব্যবস্থা, শাশ্বত সত্যকথা। কাজেই যে ব্যক্তি পরিণাম চিন্তা
করে কাজ করে, পরে যা আসবে তার আশায় বর্তমানকে বরণ কওে, সে-ই সৌভাগ্যবান।
কাজেই আল্লাহর কাছে বান্দার কান্না বৃথা যাবে না, যেতে পারে না।
“হারকুজা’ আ’বে রওয়া’ন সবযা’ বুয়াদ
হারকুজা’ আশকী দওয়াঁ রহমত বুয়াদ”
‘যেখানেই পানির প্রবাহ-সেখানে সবজার বাগ,
যেখানে অশ্র“র বন্যা নামে নেমে আসে রহমত।
মরুভুমির ধুধু বালুচরে যেখানে ঝর্ণার পানি, সেখানে সবুজের সমারোহ দেখা
দেয়, জাগে সবজার বাগ। অনুরূপ যেখানে বান্দার অশ্র“ ঝরে সেখানে নেমে আসে
আল্লাহর রহমত।
সেই লোকও রহমতের নবীর দয়ার পরশ লাভে ধন্য হল। হৃদয় নিংড়ানো আকুতি দিয়ে
ক্ষমা চাইল। তাই তিনি ক্ষমা করে দিলেন। তার মুখ সোজা হয়ে গেল। আর কান্না
রূপান্তরিত হল বুকভরা হাসিতে।
মওলানা বলছেন; তুমি যদি আল্লাহর রহমত পেতে চাও, হৃদয়ের তপ্ত মরুভূমিতে যদি সবযার বাগ জাগাতে চাও, তাহলে কাঁদো।
“বা’শ চোন দোলা’ব না’লা’ন চশ্্ম্তর
তা’ যে চাহনে জাঁ’ত বর রূয়াদ খোযর”
‘হও বালতির মতো ক্রন্দসি অশ্র“সিক্ত নয়ন
প্রাণের আঙ্গিনায় তোমার হবে সবুজের উদ্গম।’
বালতি মূলে ‘দোলাব’। প্রাচীনকালে পানির কুয়া থেকে চর্কির সাহায্যে পানি
তুলতে যে বালতির ব্যবহার ছিল, তার নাম দোলাব। পানি তোলার সময় যেমন দোলাব
হতে পানি ঝরে, খালি বালতি নিচে নামানোর তেমনি পানি ঝরতে থাকে। কাজেই
আল্লাহর রহমত পেতে হলে তোমাকে সেই দোলাবের মত ক্রন্দসি হতে হবে। তোমার
দু’নয়ন থাকতে হবে সদা অশ্র“সিক্ত। হাদীস শরীফে বর্ণিত; ‘তুমি আল্লাহর কাছে
কাঁদো। যদি কান্না না আসে অন্তত কান্নার ভান কর।’ কারণ কান্নাই আল্লাহর
রহমতের দরিয়ায় জোয়ার আনে। প্রশ্ন হল, ইচ্ছা থাকলেও আমরা তো কাঁদতে পারি
না। আমাদের মনের জমিন তো মরু সাহারা। চোখে দু’ফোটা অশ্র“ই তো বড় দুর্লভ।
কাজেই কোথায় পাব সেই অশ্র“-সিক্ত নয়ন? মওলানা রূমী (র) তার সমাধান
দিচ্ছেনÑ
“আশ্ক্ খা’হী রাহ্ম কুন বর আশ্ক্বা’র
রাহম খা’হী বর যয়ীফাঁ’ রাহ্ম আ’র”
‘অশ্র“-চাও তো রহম কর অশ্র“সিক্তের উপর
রহমত যদি চাও রহম দেখাও দুর্বলদের ওপর।’
তুমি নিজের চোখে অশ্র“ পেতে চাও, তাহলে তার সহজ পন্থা-যারা অশ্র“সিক্ত,
দুঃখ-দুর্দশায় জীবনের ঘানি টানছে, যাদের চোখের পানি শুকায় না, যারা এতীম
অসহায়, অভাবী, নিরাশ্রয়, যালিমের হাতে নিপীড়িত, তাদের প্রতি দয়া দেখাও,
এতীমের মাথায় দয়ার হাত বুলাও। বিনিময়ে তুমি তোমার নয়নে অশ্র“র
মহামূল্যবান সম্পদ লাভ করবে। আর যদি সরাসরি আল্লাহর রহমত পেতে চাও, তাহলে
সমাজে যারা দূর্বল, তাদের প্রতি দয়া দেখাও, তাদের সাহায্য কর, তাদের ডাকে
সাড়া দাও, তাহলেই আসমান থেকে রহমতের সওগাত নেমে আসবে তোমার উপর। হাদীস
শরীফে এরশাদ হয়েছে:
‘যমীনে যারা আছে, তাদের প্রতি তুমি দয়া দেখাও, তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন।’(-জামে সগীর, ১ম খন্ড পৃ-৩৭)
রচনা: মোযদালিফার রাতে ১৪৩৩হিজরী,ঢাকা।
(সূত্রঃ মসনবী শরীফ, ১ম খন্ড, বয়েত নং ৮১২-৮২২)
[৭]
শায়বান রায়ীর বৃত্তরেখা
যেখানে হিং¯্র পশুরা শির নোয়ায়
হযরত হুদ (আ) ছিলেন আল্লাহর নবী। তার সম্প্রদায়কে বলা হত আদ জাতি। তিনি
দীর্ঘকাল আদ জাতিকে আল্লাহর দিকে আহবান করেন। কিন্তু তার ডাকে কর্ণপাত
করেনি অবাধ্য আদ জাতি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর গযবের শিকার হয় নাফরমানরা।
আল্লাহ পাক একাধারে সাতদিন সাত রাত ঝড়-তুফান ঝাঁপিয়ে দেন তাদের ওপর। হযরত
হুদ (আ.)আল্লাহর নির্দেশে সেসব লোকদের নিয়ে একটি প্রান্তরে জড়ো হন, যারা
তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। ইমানদারদের চারদিকে তিনি কাদামাটির একটি
বৃত্তাকার আল তৈরি করেন। প্রবল ঝড়ের ঝাপ্টা যখন সে আলের কাছে আসত, তখন
মৃদুমন্দ বাতাসে পরিণত হত। ভোরের সমীরণের মত কোমল পরশ বুলিয়ে যেত
মু’মিনদের গায়ে। কিন্তু আল পার হয়ে বাতাস যখনই আদ জাতির দিকে যেত প্রচন্ড
ঘুর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হত। মানুষ পশুপক্ষী, এমন কি বিরাটকায় উট আরোহী
মানুষ ও জিনশুদ্ধ আকাশে উত্থিত হয়ে জমিনে আঁছড়ে পড়ত। তুলোধুনো হয়ে
অস্থি-মাংস ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত তখন। ইমানদাররা আটদিন একাধারে ঐ বৃত্তের
মাঝে অবস্থান করেন আর চারদিকে দেখতে থাকেন অবাধ্য জালিম কাফেররা আল্লাহর
গযবে নাস্তানাবুদ হয়ে যাবার দৃশ্য।
হুদ (আ) ও আদ জাতির প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে কুরআন মজিদে। কুরআন মজিদের ১৫টি
সূরার মধ্যে একটির নাম সূরা হুদ। মওলানা রূমী (র) হযরত হুদ (আ) ও আদ জাতির
প্রসঙ্গে মসনবীতে এ ঘটনার উল্লেখ করেছেন। হযরত হুদ (আ) আল্লাহর পয়গাম্বর
ছিলেন। তাই তার জন্য এমন অলৌকিক মু’জেযা অসম্ভব নয়। কিন্তু যারা নবী রাসূল
নন, তাদের বেলায়ও এমন অলৌকিক ঘটনার নজির আছে। মওলানা রূমী (র) সে ধরনের
একজন বুযর্গের প্রসঙ্গ এনেছেন। তার নাম শায়বান রায়ী। মওলানা বলেনÑ
“হামচুনা’ন শায়বা’ন রা’য়ী মী কশীদ
গের্দ বে গের্দে রা’মে খাত্তী পাদীদ”
’অনুরূপ রাখাল শায়বান এক বৃত্ত আঁকেন
তা দিয়ে ভেড়ার পালের চারপাশ ঘিরে রাখেন।’
রায়ী মানে রাখাল। শায়বান ছিলেন বুযর্গ ব্যক্তি। তবে পেশায় ছিলেন রাখাল।
তার একটি কেরামত ছিল, যখন জুমার দিন আসতÑগ্রামে জুমা জায়েয নাই, তাই জুমার
নামায পড়ার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে যেতেন। তখন তার ভেড়ার পালের চারপাশে
একটি বৃত্তরেখা এঁকে দিতেন। তাতে ভেতরের ভেড়াগুলো বৃত্তের বাইরে যেত না।
আবার বাইর থেকে নেকড়েরা ভেড়ার পালের উপর হামলা করতে পারত না। কারণ-
“বা’দে হেরচে গোর্গ ও হেরচে গূসেফান্দ
দা’য়েরায়ে মর্দে খোদা’রা’ বূদ বান্দ”
‘নেকড়ে ও ভেড়ার লোভের ঝড়ের সম্মুখে গিয়ে
থাকত আল্লাহর পুরুষের বৃত্ত বাধার প্রাচীর হয়ে।
নেকড়ের লোভ ছিল, ছাগল ভেড়া ফেঁড়ে ছিড়ে খাবে। আর ভেড়ার লোভ ছিল
চারণভূমিতে গিয়ে অবাধ বিচরণ করবে। উভয়ের লোভের উদাহরণ প্রচন্ড ঝড়ের মত।
কিন্তু সেই ঝড়ের শক্তি সাহস ছিল না আল্লাহর পুরুষ ওলি আল্লাহর দেয়া
বৃত্তরেখা লংঘন করার। আদ জাতির ওপর ঝড়ের তান্ডব মু’মিনদের বেষ্টনীতে এসে
মৃদমুন্দ সমীরণে পরিণত হওয়ার মত শায়বান রাখালের বৃত্তের কাছেও নেকড়ে বা
ভেড়ার লোভের প্রচন্ড তুফান নেতিয়ে পড়ত। মওলানা বলছেন:
“হামচোনীন বা’দে আযাল বা’ আ’রেফা’ন
নর্ম ও খোশ হামচোন নসীমে য়ুসুফা’ন”
‘অনুরূপ মৃত্যুর ঝড় আরেফদের সম্মুখে
মৃদুমন্দ বয়ে যায় যেন সমীরণ গুলবাগে।
কিংবা যেন য়ুসুফের গায়ের সুবাস।
কবিতায় অন্ত্যমিলের শেষ শব্দটি য়ুসুফান বা বূস্তান। তাই অর্থের এ তারতম্য। বূস্তান মানে গুলবাগ, ফুলবন। য়ুসুফান মানে ইউসুফের মতো।
হযরত ইউসুফ (আ) এর প্রেরিত জামার সুবাস পেয়ে যেমন বাবা ইয়াকুব (আ)
দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছিলেন, তেমনি মৃত্যুর ঝড়ও আল্লাহর নেক বান্দা
তত্ত্বজ্ঞানী আরেফদের কাছে মৃদুমন্দ বাতাসের পরশের মত মোলায়েম মনে হয়।
মওলানা বলতে চান, নফসের পরিশুদ্ধির মাধ্যমে শায়বান একজন রাখাল হলেও, কিংবা
নবী-রাসূল না হয়েও আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হয়েছিলেন। কাজেই তোমারও
উচিত নিজের আত্মার পরিশুদ্ধি সাধন। তখন মৃত্যুর মহাসংকটও মনে হবে মৃদুমন্দ
বাতাসের ছোঁয়ার মত মোলায়েম। আল্লাহর এমন বান্দাকে তখন সৃষ্টি জগতের
সবকিছুই চিনবে, মান্য করবে। এর ভুরিভুরি প্রমাণ ইতিহাসে বিদ্যমান। মওলানা
বলেছেনÑ
অ’তাশ ইব্রা’হীম রা’ দান্দা’ন নাযাদ
চোন গুযীদায় হক বুয়াদ চোনাশ গযদ”
‘ইব্রাহীমের গায়ে কামড় বসায়নি লেলিহান আগুন
কীভাবে ক্ষতি করবে তার, যিনি আল্লহর মকবুল।
ইব্রাহীম (আ) আল্লাহর মকবুল বান্দা, মহান পয়গাম্বর ছিলেন। তাই নমরুদের
বিশাল অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হলেও আগুনের আঁছড় লাগেনি তার গায়ে। অনুরূপ
কামনা বাসনার আগুনও দীনদারদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
“যা’তেশে শাহওয়াত নযাওরীদ আহলে দীন
বা’কিয়া’ন রা’ বোর্দে তা’ কা-রে যমীন”
‘কামনার আগুন করতে পারে না দীনদারদের ক্ষতি
বাদবাকীদের গিলে খায় জমিনের গহব্বর অবধি।’
সত্যিকার দ্বীনদার হও, তবেই কামনার আগুন তোমার বশীভূত হবে। আল্লাহর মকবুল
হওয়াতে প্রকৃতির আগুন যেমন ইব্রাহীম (আ) এর গায়ে চোট লাগাতে পারেনি,
তেমনি মকবুল বান্দা হতে পারলে কামনার আগুন তোমার কোন ক্ষতিসাধান করতে পারবে
না। এছাড়া এ আগুন বাদবাকীদের ধংসের অতলে তলিয়ে নেবে। তার উদাহরণÑ
“খা’ক কা’রুণ রা’ চো ফরমা’ন রসীদ
বা’ যর ও তখ্আশ বে কা-রে খোদ কশীদ”
‘মাটি কারুণকেÑযখন আলাহর নির্দেশ আসল
স্বর্ণ-রৌপ্য মসনদসহ স্বীয় গহব্বরে তলিয়ে নিল।’
কুরআন মজীদের সূরাসে কাসাসে বর্ণিত কারুণের এই ঘটনা আমাদের তাগিদ দেয়,
দুনিয়ার ধন সম্পদের লোভের আগুন নিভাও। পার্থিব কামনা বাসনার ঘোড়ার মুখে
লাগাম পরাও। নচেত তা তোমাকে ধংসের গহব্বরে তলিয়ে নেবে। আর যদি সত্যিকার
দ্বীনদার হয়ে মনকে শুদ্ধ নির্মল করতে পার, তাহলে অবাধ্য পশুরাও তোমার
হুকুম মানবে। তুমি আল্লাহর অনুরাগী হও । গোটা সৃষ্টি তোমার অনুরক্ত হবে।
(সূত্রঃ মসনবী শরীফ, ১ম খন্ড, বয়েত নং ৮৫৪-৮৬৫)