অপরাধী নয়, অপরাধ উদঘাটনকারীই আজ রাষ্ট্রীয় হয়রানির শিকার : আল্লামা শফী

সম্প্রতি কিছু পত্রপত্রিকা ও ব্যক্তিবিশেষের হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি সংগঠনটির সব কর্মসূচি ও তৎপরতা আমার পূর্ণ অবগতি ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচিই আমার অগোচরে পরিচালিত হয়নি। ঢাকা অবরোধ-পরবর্তী ৫ মে শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ও অবস্থান সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতির মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জাতির সামনে আমি বারবার তুলে ধরেছি।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নেতাকর্মীই আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে নেই। নতুন করে কাউকে বহিষ্কার ও সংগঠনে যুক্ত করার ব্যাপারে কোনো আলোচনাই হয়নি। অথচ নাস্তিক্যবাদী ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে কেউ কেউ ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতার বর্তমান মজবুত ঐক্যে ফাটল ধরানোর ঘৃণ্য প্রয়াসে লিপ্ত হয়েছেন। এটা চরম অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য নেতাকর্মী ও তৌহিদি জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, হেফাজতের নাম ও পদবি ব্যবহার করে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট, বিভেদ তৈরি, ঐক্যবিরোধী কোনো বক্তব্য ও তৎপরতা কারো কাছ থেকে প্রকাশ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সতর্ক করতে হবে। এরপরও নিবৃত্ত না হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, ইসলাম ও মুসলমানদের বর্তমান সঙ্কটময় সময়ে যারাই এমন অপতৎপরতায় জড়িত হবে, তারা ঘৃণীত ও প্রত্যাখ্যাত হবে। বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, হেফাজতে ইসলাম ঈমান-আকিদাভিত্তিক একটি আধ্যাত্মিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। আমরা জোরালোভাবে স্পষ্ট করেছি যে, এ সংগঠন গদি ও ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় কখনো শামিল হবে না। সুতরাং হেফাজতের নাম ও পদবি ব্যবহার করে বক্তব্য দেয়ার সময় নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিবৃতিতে হেফাজত আমির আরো বলেন, বর্তমানে নাস্তিক্যবাদী ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা আত্মরক্ষার জন্য ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য তৈরি করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক নানা অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। মহান আল্লাহর রহমতে তাদের এই অপচেষ্টাও ব্যর্থ হবে। তিনি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, মিথ্যা প্রচারণা ও জুলুম-অত্যাচার বন্ধ করে এখনো সময় আছে, দেশ ও জাতির স্বার্থে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি মেনে নিন। ওলামা-মাশায়েখ ও মুসলমানেরা কখনো জেল-জুলুম ও অন্যায়ের কাছে মাথানত করতে জানে না। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও শান্তিময় পরকালীন জীবনের লক্ষ্য নিয়েই তারা পরিচালিত হয়। আর ইসলামের জন্য ত্যাগ ও শাহাদতবরণ করাকে তারা পরম সাফল্য মনে করে থাকেন। তিনি অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে গ্রেফতারকৃত মাদরাসা পরিচালক, ওলামা-মাশায়েখ ও খতিব-ইমামদের মুক্তি দেয়ার এবং হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি বর্তমানে দেশের অসহনীয় পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এত বেশি মিথ্যাচার হচ্ছে যে, সাধারণ জনগণ সত্য উদ্ঘাটনে চরম বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, ৫ মে শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত ও জিকিররত অভুক্ত তৌহিদি জনতার ওপর বর্বরোচিত হামলার জন্য কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন হয় না। অথচ এই অপতৎপরতার কথা কেউ প্রকাশ করলে তাকে নাজেহাল ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি শাপলা চত্বরের শহীদ পরিবারের সদস্যরাও এ থেকে মুক্ত নয়। অপরাধী নয়, বরং অপরাধ উদ্ঘাটনকারীই আজ রাষ্ট্রীয় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি এ পর্যায়ে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নির্বাহী পরিচালক আদিলুর রহমান ও দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুরের নাম উল্লেখ করেন। তিনি সরকারের প্রতি মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করে ৫ ও ৬ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যা এবং কুরআন পোড়ানোর ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তিদানের আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি।