মাহমুদুর রহমানের প্রতি আদালত ও কারা কর্তৃপক্ষের বিমাতাসুলভ আচরণ : গুরুতর অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও প্রিজন কভার্ডভ্যানে আদালতে আনা-নেয়া করা হচ্ছে

আমার দেশ-এর কারাবন্দি সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে আদালত ও কারা কর্তৃপক্ষ। গুরুতর অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার আদালতসহ বিভিন্ন আদালতে প্রিজন ভ্যানে করে আনা-নেয়া করছে।
আদালত ও কারা কর্তৃপক্ষ উভয়েই সংবিধান, জেলকোড এবং পুলিশ প্রবিধান লঙ্ঘন করে মাহমুদুর রহমানের ওপর নিপীড়নমূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ আইনজীবীদের। তারা বলেন, একজন প্রথম শ্রেণীর কারাবন্দি হিসেবে মাহমুদুর রহমানকে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া তো দূরের কথা, একজন সাধারণ আসামি যেসব সুবিধা পেয়ে থাকেন—মাহমুদুর রহমানকে সেটাও দেয়া হচ্ছে না। প্রথম শ্রেণীর কারাবন্দিরা এমনকি অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী, খুনি, মাস্তান ও চাঁদাবাজকেও মাইক্রোবাস কিংবা আরামদায়ক গাড়িতে করে কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেয়া করা হয়। অথচ মাহমুদুর রহমান কারাগার থেকে আদালতে আসা-যাওয়ার জন্য নিজ খরচে হলেও একটি মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করতে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাননি।
আইনজীবীরা জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল টিমের সুপারিশ অনুযায়ী এবং তার অসুস্থতার সব রেকর্ড পেশ করে আদালতে আনা-নেয়ার জন্য একটি আরামদায়ক গাড়ির ব্যবস্থা করার আবেদন করা হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আদালত তা খারিজও করেনি আবার গ্রহণও করেনি। আদালত বুঝে-শুনেই কৌশলী আদেশ দিয়ে চতুরতার পরিচয় দিয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আদালতও মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। গুরুতর অসুস্থ মাহমুদুর রহমানকে কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে আদালতে আনা-নেয়া করা হয়। এতে তাকে চার-পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রিজন ভ্যানের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকতে হয়।
এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেজবাহ বলেন, লাগাতার চার মাস নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ জীবন কাটানোর একপর্যায়ে পুলিশ তাকে কোনো ধরনের পরোয়ানা ছাড়াই আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় লাগাতার রিমান্ডে রেখে তার ওপর বর্বর নির্যাতন করা হয়। তার হাতে ও পায়ে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার জন্য বিশেষজ্ঞ ৬ জন চিকিত্সকের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার গুরুতর বেশ কয়েকটি রোগ ধরা পড়ে। এর মধ্যে তার বেকপেইন বা মেরুদণ্ডের ব্যথা, ডায়াবেটিস মারাত্মক পর্যায়ে। চিকিত্সকরা লিখিতভাবে তাকে আধাঘণ্টার বেশি বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকতে নিষেধ করেছেন। দিনের বেশিরভাগ সময় তাকে শুয়ে বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এমন অবস্থায়ই হাসপাতাল থেকে সরকার জোরপূর্বক তাকে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে রাখে।
অ্যাডভোকেট মেজবাহ বলেন, কারাবিধির ৯১০ ধারা অনুযায়ী একজন প্রথম শ্রেণীর কারাবন্দিকে কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেয়ার সময় আরামদায়ক গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। প্রথম শ্রেণীর প্রায় সব আসামির বেলায় এ বিধান মানা হলেও মাহমুদুর রহমানের বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ উল্টো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। মাহমুদুর রহমানকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে কভার্ড প্রিজন ভ্যানে করে আনা হয়। আবার একইভাবে আদালত থেকে কারাগারে নেয়া হয়। এতে পথেই আসা-যাওয়ায় তার ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে মাইক্রোবাস কিংবা অন্য কোনো গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ায় আমরা সংবিধানের ১১৬/এ, জেলকোডের ৯১১ এবং পুলিশ প্রবিধানের ৪৮০ ধারা অনুযায়ী আদালতে একটি আবেদন করেছি। আদালত আমাদের আবেদনটি খারিজ করেনি। আবার এটি গ্রহণও করেনি। অদ্ভুত এক আদেশ দিয়ে বলেছে, ‘আবেদনকারীকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে বলা হলো।’ আদেশ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের হদিস আমরা আজও পাইনি। মূলত আদালত চাতুর্যতাপূর্ণ আদেশ দিয়েছে, যাতে আমরা কোনো প্রতিকার না পাই।
তিনি বলেন, আমরা আদালতে নিয়মিত আইন পেশায় যুক্ত। প্রতিদিনই আমরা দেখতে পাই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদেরও গাড়িতে করে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। অথচ মাহমুদুর রহমান নিজ খরচে একটি মাইক্রোবাস ব্যবহারের আবেদন করেও পাননি। এর চেয়ে বিস্ময়ের আর কিছুই হতে পারে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিকৃষ্টতম নজির হচ্ছে এটি।