ইউরোপ প্রবাসী ও মিসরীয় বংশোদ্ভুত প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আরব জগতের গণজাগরণ এবং তিউনিসিয়া ও মিসরে উদ্ভুত সঙ্কটের যে বিশ্লেষণ সম্প্রতি করেছি, এর ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য সেটাই, যা ‘ইসলাম ও আরব গণঅভ্যুত্থান’ বইতে উল্লেখ করেছি।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এ বিষয়ে আমার অভিমতের যথার্থতাই প্রকাশ করছে। আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে বারবার আলোচনা করেছি সুদান, আলজেরিয়া, মিসর ও ফিলিস্তিন নিয়ে। এসব ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করেছি একই ধারায়। একই সময়ে বিশেষ করো মিসর ও তিউনিসিয়ায় সেকুলার ও ইসলামপন্থী মহলের বিতর্কের ভিত্তিতে যে মেরুকরণ, তার ওপর বিশদ আলোচনা করেছি। মিসরে সর্বশেষ যে কু দ্যে তা, সে ব্যাপারে আমার মতামত দেখে কিছু বুদ্ধিজীবী এবং মুরসিবিরোধী আন্দোলনকারী আমাকে মুরসিপন্থী, ব্রাদারহুড সমর্থক, ইসলামপন্থী হিসেবে অভিহিত করে উত্তেজনাপূর্ণ প্রপাগান্ডা চালিয়েছেন। যদি সব কিছু এতটা সরলীকরণ করা যেত, তা হলে কতই না ভালো হতো। এবারের সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতি নমনীয় এবং সামরিক বাহিনীর বন্ধু, কথিত উদারপন্থীরা এমন ভান করেন যে, তারা কোনো কিছুই শোনেননি বা পড়েননি। তারা প্রতিপক্ষকে ইসলামপন্থী কিংবা সন্ত্রাসবাদী বলে উড়িয়ে দিতে চান। তারা যদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দেন, সেটাই হবে উত্তম। যে সব নারী-পুরুষ পাঁচ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করে আসছে, তাদের তুলে ধরা হয়েছে নিছক ‘মুরসিপন্থী’ হিসেবে, আর নিশ্চিতভাবেই মনে করা হলো, তারা সবাই মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়। এ প্রচারণা চালিয়েছে সরকারি মিডিয়া এবং পাশ্চাত্যের ৮০ শতাংশ পত্রিকা। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, মিসরে এবারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যারা রাজপথে ব্যাপক ও অব্যাহত বিক্ষোভ করে এসেছে, তাদের মধ্যে ছিল এমন নারী-পুরুষ যারা ব্রাদারহুডের লোক নয়, সালাফি কিংবা ইসলামপন্থী নয়। তাদের মধ্যে রয়েছে তারুণ্যে ভরা ব্লগার, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং কষ্টিক খ্রিস্টানও। অপর দিকে, মিসরের সেনাবাহিনী কখনো রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরে যায়নি। তারা নির্যাতনের পথ ধরেছে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে। মার্কিন সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী এই ভূমিকায় নেমেছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশের সরকার এবং সেই সাথে ইসরাইল চায়, মিসরে নির্যাতন চালানো হোক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা মিসর পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তরিকতাহীন ও নিস্পৃহ মনোভাব দেখিয়েছেন। মিসরের সাথে যৌথ সমরমহড়া বাতিল করলেও নিশ্চিত করলেন যে, বর্তমান সরকারকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাবেন। ওবামার ভূমিকার অর্থ, তিনি কায়রোর সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন জোগাচ্ছেন। এর সাথে যোগ হয়েছে মিডিয়ার এমন মদদ যা প্রতিপক্ষের ওপর বোমা মারার তুল্য। এসব কিছু ‘জরুরি অবস্থা’র আড়ালে পুরোদমে নির্যাতন চালিয়ে যেতে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও সুযোগ দিয়েছে। যে ক্র্যাকডাউন হলো, তা শেষ হতে অনেক বাকি। মিসরের জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু, নির্যাতন এবং গণগ্রেফতার। হায়! নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্রীয় মিডিয়া মিথ্যার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে; বিকৃত করছে তথ্যকে। এসব কিছুই সময়ে পরীক্ষিত কলাকৌশল। পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, তারা ‘আত্মরক্ষার আইনসম্মত কাজ করছে।’ তারা বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করে গুলি চালিয়েছে। আর পরিকল্পিতভাবেই কমিয়ে দেখানো হলো নিহতের সংখ্যা। খুন হওয়া বিক্ষোভকারীদের লাশ ছিল যে মসজিদে, সাক্ষ্যপ্রমাণ নির্মূল করার জন্য সে মসজিদটাই জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আল ঈমান মসজিদ সমেত অন্যান্য মসজিদ ঘেরাও করা হয়েছে। তখন নিহত ব্যক্তিদের পরিবার পরিজন সবেমাত্র লাশ নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। লাশ দাফনের শর্ত হিসেবে শোকাকুল এই মানুষগুলোকে বাধ্য করা হলো এ কথা স্বীকার করতে যে, তাদের মৃত্যুর কারণ, আত্মহত্যা, অথবা বলতে হবে তারা পরে কোনো সময়ে মারা গেছে। অর্থাৎ, পুরনো পদ্ধতিতে নতুন বিভীষিকা। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ‘অনেক অস্ত্র ‘আবিষ্কার’ করা হয়েছে। এর ছবি তুলে দুনিয়াজুড়ে প্রচারও করা হয়েছে। এর দ্বারা এটাই বুঝানো হচ্ছে বিক্ষোভকারীরা এতই বুদ্ধু যে, ছ’সপ্তাহ ধরে গণমিছিল এবং এক সপ্তাহ যাবৎ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের হুমকি সত্ত্বেও এসব অস্ত্র ব্যবহার করার সময় তারা পায়নি! আল সিসির পূর্বসূরিরা যে পন্থা অবলম্বন করেছিল, গির্জা পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা সেটাই সহজে মনে করিয়ে দিয়েছে। এ কৌশলটা হলোÑ জনগণের একাংশকে অন্য অংশের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দাও এবং দেখিয়ে দাও, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদী’রা খিষ্টানদের দুশমন। এভাবে এক ঢিলে দু’পাখি খতম হয়ে যাবে। প্রথমত, বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতনকে ‘বৈধ’ করা; দ্বিতীয়ত, পাশ্চাত্যের মন ও হৃদয় জয় করা। যারাই মিসরের অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করছেন, তাদের তুলে ধরা হচ্ছে আস্ত নির্বোধ হিসেবে। অথচ অহিংসভাবে এবং শৃঙ্খলার সাথে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করা হয়েছে। ৮ জুলাই গণহত্যার পরও এ বিক্ষোভ উচ্ছৃঙ্খল হয়নি। তারা নাকি হঠাৎ সহিংস হয়ে উঠেছিল। এমন প্রচারণায় কাদের বোকা বানাতে চাওয়া হচ্ছে? আর কারাই বা এসব প্রচারণাকারীদের বিশ্বাস করছে? মূল প্রশ্ন যা ছিল এবং এখনো আছে, তা হচ্ছে, মিসরীয় জনগণের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র। দেশটাতে যা ঘটছে, সেটা বিকৃতি আর বিভীষিকা। মিসর এখন সশস্ত্র বাহিনীর করুণার ওপর নির্ভরশীল। এখন এই দেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করবে তড়িঘড়ি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নির্মূল করা, নির্বিচারে জেলে ঢোকানো, অত্যাচার এবং সেই সাথে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চপর্যায়ে মিথ্যাচারের। মিসরের জেনারেলদের পেছনে পুরো সমর্থন আছে পশ্চিমা জগৎ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের। একমাত্র এটাই বাস্তবতা। যারা ইসলামপন্থীদের প্রতি মজ্জাগত বিদ্বেষবশত সেনা-পুলিশের হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়নকে সমর্থন দিচ্ছে, একদিন ওদের জবাব দিতে হবেই। তা অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে তাদের কথিত গণতান্ত্রিক সেই রাজনৈতিক কর্মসূচি, যা ব্যারাকের ছায়ায়, দুর্নীতির অন্তকরণে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ঘূর্ণিকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে। তাদের দায় বিপুল। সর্বোপরি, তারা অন্যায়ে মদদ দিয়েছে এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনকে যুক্তিসঙ্গত করতে চেয়েছে। হায়রে, দেউলিয়া, ‘উদারপন্থী’, শোচনীয় প্রগতিবাজ। ১৭ আগস্ট, ২০১৩ ভাষান্তর- মীযানুল করীমমিসরের জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু ও নির্যাতন
ইউরোপ প্রবাসী ও মিসরীয় বংশোদ্ভুত প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আরব জগতের গণজাগরণ এবং তিউনিসিয়া ও মিসরে উদ্ভুত সঙ্কটের যে বিশ্লেষণ সম্প্রতি করেছি, এর ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য সেটাই, যা ‘ইসলাম ও আরব গণঅভ্যুত্থান’ বইতে উল্লেখ করেছি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এ বিষয়ে আমার অভিমতের যথার্থতাই প্রকাশ করছে। আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে বারবার আলোচনা করেছি সুদান, আলজেরিয়া, মিসর ও ফিলিস্তিন নিয়ে। এসব ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করেছি একই ধারায়। একই সময়ে বিশেষ করো মিসর ও তিউনিসিয়ায় সেকুলার ও ইসলামপন্থী মহলের বিতর্কের ভিত্তিতে যে মেরুকরণ, তার ওপর বিশদ আলোচনা করেছি। মিসরে সর্বশেষ যে কু দ্যে তা, সে ব্যাপারে আমার মতামত দেখে কিছু বুদ্ধিজীবী এবং মুরসিবিরোধী আন্দোলনকারী আমাকে মুরসিপন্থী, ব্রাদারহুড সমর্থক, ইসলামপন্থী হিসেবে অভিহিত করে উত্তেজনাপূর্ণ প্রপাগান্ডা চালিয়েছেন। যদি সব কিছু এতটা সরলীকরণ করা যেত, তা হলে কতই না ভালো হতো। এবারের সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতি নমনীয় এবং সামরিক বাহিনীর বন্ধু, কথিত উদারপন্থীরা এমন ভান করেন যে, তারা কোনো কিছুই শোনেননি বা পড়েননি। তারা প্রতিপক্ষকে ইসলামপন্থী কিংবা সন্ত্রাসবাদী বলে উড়িয়ে দিতে চান। তারা যদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দেন, সেটাই হবে উত্তম। যে সব নারী-পুরুষ পাঁচ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করে আসছে, তাদের তুলে ধরা হয়েছে নিছক ‘মুরসিপন্থী’ হিসেবে, আর নিশ্চিতভাবেই মনে করা হলো, তারা সবাই মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়। এ প্রচারণা চালিয়েছে সরকারি মিডিয়া এবং পাশ্চাত্যের ৮০ শতাংশ পত্রিকা। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, মিসরে এবারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যারা রাজপথে ব্যাপক ও অব্যাহত বিক্ষোভ করে এসেছে, তাদের মধ্যে ছিল এমন নারী-পুরুষ যারা ব্রাদারহুডের লোক নয়, সালাফি কিংবা ইসলামপন্থী নয়। তাদের মধ্যে রয়েছে তারুণ্যে ভরা ব্লগার, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং কষ্টিক খ্রিস্টানও। অপর দিকে, মিসরের সেনাবাহিনী কখনো রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরে যায়নি। তারা নির্যাতনের পথ ধরেছে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে। মার্কিন সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী এই ভূমিকায় নেমেছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশের সরকার এবং সেই সাথে ইসরাইল চায়, মিসরে নির্যাতন চালানো হোক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা মিসর পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তরিকতাহীন ও নিস্পৃহ মনোভাব দেখিয়েছেন। মিসরের সাথে যৌথ সমরমহড়া বাতিল করলেও নিশ্চিত করলেন যে, বর্তমান সরকারকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাবেন। ওবামার ভূমিকার অর্থ, তিনি কায়রোর সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন জোগাচ্ছেন। এর সাথে যোগ হয়েছে মিডিয়ার এমন মদদ যা প্রতিপক্ষের ওপর বোমা মারার তুল্য। এসব কিছু ‘জরুরি অবস্থা’র আড়ালে পুরোদমে নির্যাতন চালিয়ে যেতে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও সুযোগ দিয়েছে। যে ক্র্যাকডাউন হলো, তা শেষ হতে অনেক বাকি। মিসরের জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু, নির্যাতন এবং গণগ্রেফতার। হায়! নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্রীয় মিডিয়া মিথ্যার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে; বিকৃত করছে তথ্যকে। এসব কিছুই সময়ে পরীক্ষিত কলাকৌশল। পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, তারা ‘আত্মরক্ষার আইনসম্মত কাজ করছে।’ তারা বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করে গুলি চালিয়েছে। আর পরিকল্পিতভাবেই কমিয়ে দেখানো হলো নিহতের সংখ্যা। খুন হওয়া বিক্ষোভকারীদের লাশ ছিল যে মসজিদে, সাক্ষ্যপ্রমাণ নির্মূল করার জন্য সে মসজিদটাই জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আল ঈমান মসজিদ সমেত অন্যান্য মসজিদ ঘেরাও করা হয়েছে। তখন নিহত ব্যক্তিদের পরিবার পরিজন সবেমাত্র লাশ নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। লাশ দাফনের শর্ত হিসেবে শোকাকুল এই মানুষগুলোকে বাধ্য করা হলো এ কথা স্বীকার করতে যে, তাদের মৃত্যুর কারণ, আত্মহত্যা, অথবা বলতে হবে তারা পরে কোনো সময়ে মারা গেছে। অর্থাৎ, পুরনো পদ্ধতিতে নতুন বিভীষিকা। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ‘অনেক অস্ত্র ‘আবিষ্কার’ করা হয়েছে। এর ছবি তুলে দুনিয়াজুড়ে প্রচারও করা হয়েছে। এর দ্বারা এটাই বুঝানো হচ্ছে বিক্ষোভকারীরা এতই বুদ্ধু যে, ছ’সপ্তাহ ধরে গণমিছিল এবং এক সপ্তাহ যাবৎ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের হুমকি সত্ত্বেও এসব অস্ত্র ব্যবহার করার সময় তারা পায়নি! আল সিসির পূর্বসূরিরা যে পন্থা অবলম্বন করেছিল, গির্জা পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা সেটাই সহজে মনে করিয়ে দিয়েছে। এ কৌশলটা হলোÑ জনগণের একাংশকে অন্য অংশের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দাও এবং দেখিয়ে দাও, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদী’রা খিষ্টানদের দুশমন। এভাবে এক ঢিলে দু’পাখি খতম হয়ে যাবে। প্রথমত, বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতনকে ‘বৈধ’ করা; দ্বিতীয়ত, পাশ্চাত্যের মন ও হৃদয় জয় করা। যারাই মিসরের অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করছেন, তাদের তুলে ধরা হচ্ছে আস্ত নির্বোধ হিসেবে। অথচ অহিংসভাবে এবং শৃঙ্খলার সাথে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করা হয়েছে। ৮ জুলাই গণহত্যার পরও এ বিক্ষোভ উচ্ছৃঙ্খল হয়নি। তারা নাকি হঠাৎ সহিংস হয়ে উঠেছিল। এমন প্রচারণায় কাদের বোকা বানাতে চাওয়া হচ্ছে? আর কারাই বা এসব প্রচারণাকারীদের বিশ্বাস করছে? মূল প্রশ্ন যা ছিল এবং এখনো আছে, তা হচ্ছে, মিসরীয় জনগণের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র। দেশটাতে যা ঘটছে, সেটা বিকৃতি আর বিভীষিকা। মিসর এখন সশস্ত্র বাহিনীর করুণার ওপর নির্ভরশীল। এখন এই দেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করবে তড়িঘড়ি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নির্মূল করা, নির্বিচারে জেলে ঢোকানো, অত্যাচার এবং সেই সাথে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চপর্যায়ে মিথ্যাচারের। মিসরের জেনারেলদের পেছনে পুরো সমর্থন আছে পশ্চিমা জগৎ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের। একমাত্র এটাই বাস্তবতা। যারা ইসলামপন্থীদের প্রতি মজ্জাগত বিদ্বেষবশত সেনা-পুলিশের হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়নকে সমর্থন দিচ্ছে, একদিন ওদের জবাব দিতে হবেই। তা অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে তাদের কথিত গণতান্ত্রিক সেই রাজনৈতিক কর্মসূচি, যা ব্যারাকের ছায়ায়, দুর্নীতির অন্তকরণে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ঘূর্ণিকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে। তাদের দায় বিপুল। সর্বোপরি, তারা অন্যায়ে মদদ দিয়েছে এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনকে যুক্তিসঙ্গত করতে চেয়েছে। হায়রে, দেউলিয়া, ‘উদারপন্থী’, শোচনীয় প্রগতিবাজ। ১৭ আগস্ট, ২০১৩ ভাষান্তর- মীযানুল করীম
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এ বিষয়ে আমার অভিমতের যথার্থতাই প্রকাশ করছে। আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে বারবার আলোচনা করেছি সুদান, আলজেরিয়া, মিসর ও ফিলিস্তিন নিয়ে। এসব ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করেছি একই ধারায়। একই সময়ে বিশেষ করো মিসর ও তিউনিসিয়ায় সেকুলার ও ইসলামপন্থী মহলের বিতর্কের ভিত্তিতে যে মেরুকরণ, তার ওপর বিশদ আলোচনা করেছি। মিসরে সর্বশেষ যে কু দ্যে তা, সে ব্যাপারে আমার মতামত দেখে কিছু বুদ্ধিজীবী এবং মুরসিবিরোধী আন্দোলনকারী আমাকে মুরসিপন্থী, ব্রাদারহুড সমর্থক, ইসলামপন্থী হিসেবে অভিহিত করে উত্তেজনাপূর্ণ প্রপাগান্ডা চালিয়েছেন। যদি সব কিছু এতটা সরলীকরণ করা যেত, তা হলে কতই না ভালো হতো। এবারের সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতি নমনীয় এবং সামরিক বাহিনীর বন্ধু, কথিত উদারপন্থীরা এমন ভান করেন যে, তারা কোনো কিছুই শোনেননি বা পড়েননি। তারা প্রতিপক্ষকে ইসলামপন্থী কিংবা সন্ত্রাসবাদী বলে উড়িয়ে দিতে চান। তারা যদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দেন, সেটাই হবে উত্তম। যে সব নারী-পুরুষ পাঁচ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করে আসছে, তাদের তুলে ধরা হয়েছে নিছক ‘মুরসিপন্থী’ হিসেবে, আর নিশ্চিতভাবেই মনে করা হলো, তারা সবাই মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়। এ প্রচারণা চালিয়েছে সরকারি মিডিয়া এবং পাশ্চাত্যের ৮০ শতাংশ পত্রিকা। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, মিসরে এবারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যারা রাজপথে ব্যাপক ও অব্যাহত বিক্ষোভ করে এসেছে, তাদের মধ্যে ছিল এমন নারী-পুরুষ যারা ব্রাদারহুডের লোক নয়, সালাফি কিংবা ইসলামপন্থী নয়। তাদের মধ্যে রয়েছে তারুণ্যে ভরা ব্লগার, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং কষ্টিক খ্রিস্টানও। অপর দিকে, মিসরের সেনাবাহিনী কখনো রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরে যায়নি। তারা নির্যাতনের পথ ধরেছে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে। মার্কিন সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী এই ভূমিকায় নেমেছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশের সরকার এবং সেই সাথে ইসরাইল চায়, মিসরে নির্যাতন চালানো হোক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা মিসর পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তরিকতাহীন ও নিস্পৃহ মনোভাব দেখিয়েছেন। মিসরের সাথে যৌথ সমরমহড়া বাতিল করলেও নিশ্চিত করলেন যে, বর্তমান সরকারকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাবেন। ওবামার ভূমিকার অর্থ, তিনি কায়রোর সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন জোগাচ্ছেন। এর সাথে যোগ হয়েছে মিডিয়ার এমন মদদ যা প্রতিপক্ষের ওপর বোমা মারার তুল্য। এসব কিছু ‘জরুরি অবস্থা’র আড়ালে পুরোদমে নির্যাতন চালিয়ে যেতে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও সুযোগ দিয়েছে। যে ক্র্যাকডাউন হলো, তা শেষ হতে অনেক বাকি। মিসরের জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু, নির্যাতন এবং গণগ্রেফতার। হায়! নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্রীয় মিডিয়া মিথ্যার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে; বিকৃত করছে তথ্যকে। এসব কিছুই সময়ে পরীক্ষিত কলাকৌশল। পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, তারা ‘আত্মরক্ষার আইনসম্মত কাজ করছে।’ তারা বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করে গুলি চালিয়েছে। আর পরিকল্পিতভাবেই কমিয়ে দেখানো হলো নিহতের সংখ্যা। খুন হওয়া বিক্ষোভকারীদের লাশ ছিল যে মসজিদে, সাক্ষ্যপ্রমাণ নির্মূল করার জন্য সে মসজিদটাই জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আল ঈমান মসজিদ সমেত অন্যান্য মসজিদ ঘেরাও করা হয়েছে। তখন নিহত ব্যক্তিদের পরিবার পরিজন সবেমাত্র লাশ নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। লাশ দাফনের শর্ত হিসেবে শোকাকুল এই মানুষগুলোকে বাধ্য করা হলো এ কথা স্বীকার করতে যে, তাদের মৃত্যুর কারণ, আত্মহত্যা, অথবা বলতে হবে তারা পরে কোনো সময়ে মারা গেছে। অর্থাৎ, পুরনো পদ্ধতিতে নতুন বিভীষিকা। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ‘অনেক অস্ত্র ‘আবিষ্কার’ করা হয়েছে। এর ছবি তুলে দুনিয়াজুড়ে প্রচারও করা হয়েছে। এর দ্বারা এটাই বুঝানো হচ্ছে বিক্ষোভকারীরা এতই বুদ্ধু যে, ছ’সপ্তাহ ধরে গণমিছিল এবং এক সপ্তাহ যাবৎ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের হুমকি সত্ত্বেও এসব অস্ত্র ব্যবহার করার সময় তারা পায়নি! আল সিসির পূর্বসূরিরা যে পন্থা অবলম্বন করেছিল, গির্জা পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা সেটাই সহজে মনে করিয়ে দিয়েছে। এ কৌশলটা হলোÑ জনগণের একাংশকে অন্য অংশের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দাও এবং দেখিয়ে দাও, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদী’রা খিষ্টানদের দুশমন। এভাবে এক ঢিলে দু’পাখি খতম হয়ে যাবে। প্রথমত, বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতনকে ‘বৈধ’ করা; দ্বিতীয়ত, পাশ্চাত্যের মন ও হৃদয় জয় করা। যারাই মিসরের অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করছেন, তাদের তুলে ধরা হচ্ছে আস্ত নির্বোধ হিসেবে। অথচ অহিংসভাবে এবং শৃঙ্খলার সাথে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করা হয়েছে। ৮ জুলাই গণহত্যার পরও এ বিক্ষোভ উচ্ছৃঙ্খল হয়নি। তারা নাকি হঠাৎ সহিংস হয়ে উঠেছিল। এমন প্রচারণায় কাদের বোকা বানাতে চাওয়া হচ্ছে? আর কারাই বা এসব প্রচারণাকারীদের বিশ্বাস করছে? মূল প্রশ্ন যা ছিল এবং এখনো আছে, তা হচ্ছে, মিসরীয় জনগণের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র। দেশটাতে যা ঘটছে, সেটা বিকৃতি আর বিভীষিকা। মিসর এখন সশস্ত্র বাহিনীর করুণার ওপর নির্ভরশীল। এখন এই দেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করবে তড়িঘড়ি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নির্মূল করা, নির্বিচারে জেলে ঢোকানো, অত্যাচার এবং সেই সাথে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চপর্যায়ে মিথ্যাচারের। মিসরের জেনারেলদের পেছনে পুরো সমর্থন আছে পশ্চিমা জগৎ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের। একমাত্র এটাই বাস্তবতা। যারা ইসলামপন্থীদের প্রতি মজ্জাগত বিদ্বেষবশত সেনা-পুলিশের হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়নকে সমর্থন দিচ্ছে, একদিন ওদের জবাব দিতে হবেই। তা অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে তাদের কথিত গণতান্ত্রিক সেই রাজনৈতিক কর্মসূচি, যা ব্যারাকের ছায়ায়, দুর্নীতির অন্তকরণে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ঘূর্ণিকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে। তাদের দায় বিপুল। সর্বোপরি, তারা অন্যায়ে মদদ দিয়েছে এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনকে যুক্তিসঙ্গত করতে চেয়েছে। হায়রে, দেউলিয়া, ‘উদারপন্থী’, শোচনীয় প্রগতিবাজ। ১৭ আগস্ট, ২০১৩ ভাষান্তর- মীযানুল করীমমিসরের জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু ও নির্যাতন
ইউরোপ প্রবাসী ও মিসরীয় বংশোদ্ভুত প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আরব জগতের গণজাগরণ এবং তিউনিসিয়া ও মিসরে উদ্ভুত সঙ্কটের যে বিশ্লেষণ সম্প্রতি করেছি, এর ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য সেটাই, যা ‘ইসলাম ও আরব গণঅভ্যুত্থান’ বইতে উল্লেখ করেছি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এ বিষয়ে আমার অভিমতের যথার্থতাই প্রকাশ করছে। আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে বারবার আলোচনা করেছি সুদান, আলজেরিয়া, মিসর ও ফিলিস্তিন নিয়ে। এসব ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করেছি একই ধারায়। একই সময়ে বিশেষ করো মিসর ও তিউনিসিয়ায় সেকুলার ও ইসলামপন্থী মহলের বিতর্কের ভিত্তিতে যে মেরুকরণ, তার ওপর বিশদ আলোচনা করেছি। মিসরে সর্বশেষ যে কু দ্যে তা, সে ব্যাপারে আমার মতামত দেখে কিছু বুদ্ধিজীবী এবং মুরসিবিরোধী আন্দোলনকারী আমাকে মুরসিপন্থী, ব্রাদারহুড সমর্থক, ইসলামপন্থী হিসেবে অভিহিত করে উত্তেজনাপূর্ণ প্রপাগান্ডা চালিয়েছেন। যদি সব কিছু এতটা সরলীকরণ করা যেত, তা হলে কতই না ভালো হতো। এবারের সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতি নমনীয় এবং সামরিক বাহিনীর বন্ধু, কথিত উদারপন্থীরা এমন ভান করেন যে, তারা কোনো কিছুই শোনেননি বা পড়েননি। তারা প্রতিপক্ষকে ইসলামপন্থী কিংবা সন্ত্রাসবাদী বলে উড়িয়ে দিতে চান। তারা যদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দেন, সেটাই হবে উত্তম। যে সব নারী-পুরুষ পাঁচ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করে আসছে, তাদের তুলে ধরা হয়েছে নিছক ‘মুরসিপন্থী’ হিসেবে, আর নিশ্চিতভাবেই মনে করা হলো, তারা সবাই মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়। এ প্রচারণা চালিয়েছে সরকারি মিডিয়া এবং পাশ্চাত্যের ৮০ শতাংশ পত্রিকা। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, মিসরে এবারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যারা রাজপথে ব্যাপক ও অব্যাহত বিক্ষোভ করে এসেছে, তাদের মধ্যে ছিল এমন নারী-পুরুষ যারা ব্রাদারহুডের লোক নয়, সালাফি কিংবা ইসলামপন্থী নয়। তাদের মধ্যে রয়েছে তারুণ্যে ভরা ব্লগার, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং কষ্টিক খ্রিস্টানও। অপর দিকে, মিসরের সেনাবাহিনী কখনো রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরে যায়নি। তারা নির্যাতনের পথ ধরেছে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে। মার্কিন সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী এই ভূমিকায় নেমেছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশের সরকার এবং সেই সাথে ইসরাইল চায়, মিসরে নির্যাতন চালানো হোক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা মিসর পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তরিকতাহীন ও নিস্পৃহ মনোভাব দেখিয়েছেন। মিসরের সাথে যৌথ সমরমহড়া বাতিল করলেও নিশ্চিত করলেন যে, বর্তমান সরকারকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাবেন। ওবামার ভূমিকার অর্থ, তিনি কায়রোর সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন জোগাচ্ছেন। এর সাথে যোগ হয়েছে মিডিয়ার এমন মদদ যা প্রতিপক্ষের ওপর বোমা মারার তুল্য। এসব কিছু ‘জরুরি অবস্থা’র আড়ালে পুরোদমে নির্যাতন চালিয়ে যেতে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও সুযোগ দিয়েছে। যে ক্র্যাকডাউন হলো, তা শেষ হতে অনেক বাকি। মিসরের জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু, নির্যাতন এবং গণগ্রেফতার। হায়! নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্রীয় মিডিয়া মিথ্যার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে; বিকৃত করছে তথ্যকে। এসব কিছুই সময়ে পরীক্ষিত কলাকৌশল। পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, তারা ‘আত্মরক্ষার আইনসম্মত কাজ করছে।’ তারা বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করে গুলি চালিয়েছে। আর পরিকল্পিতভাবেই কমিয়ে দেখানো হলো নিহতের সংখ্যা। খুন হওয়া বিক্ষোভকারীদের লাশ ছিল যে মসজিদে, সাক্ষ্যপ্রমাণ নির্মূল করার জন্য সে মসজিদটাই জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আল ঈমান মসজিদ সমেত অন্যান্য মসজিদ ঘেরাও করা হয়েছে। তখন নিহত ব্যক্তিদের পরিবার পরিজন সবেমাত্র লাশ নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। লাশ দাফনের শর্ত হিসেবে শোকাকুল এই মানুষগুলোকে বাধ্য করা হলো এ কথা স্বীকার করতে যে, তাদের মৃত্যুর কারণ, আত্মহত্যা, অথবা বলতে হবে তারা পরে কোনো সময়ে মারা গেছে। অর্থাৎ, পুরনো পদ্ধতিতে নতুন বিভীষিকা। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ‘অনেক অস্ত্র ‘আবিষ্কার’ করা হয়েছে। এর ছবি তুলে দুনিয়াজুড়ে প্রচারও করা হয়েছে। এর দ্বারা এটাই বুঝানো হচ্ছে বিক্ষোভকারীরা এতই বুদ্ধু যে, ছ’সপ্তাহ ধরে গণমিছিল এবং এক সপ্তাহ যাবৎ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের হুমকি সত্ত্বেও এসব অস্ত্র ব্যবহার করার সময় তারা পায়নি! আল সিসির পূর্বসূরিরা যে পন্থা অবলম্বন করেছিল, গির্জা পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা সেটাই সহজে মনে করিয়ে দিয়েছে। এ কৌশলটা হলোÑ জনগণের একাংশকে অন্য অংশের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দাও এবং দেখিয়ে দাও, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদী’রা খিষ্টানদের দুশমন। এভাবে এক ঢিলে দু’পাখি খতম হয়ে যাবে। প্রথমত, বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতনকে ‘বৈধ’ করা; দ্বিতীয়ত, পাশ্চাত্যের মন ও হৃদয় জয় করা। যারাই মিসরের অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করছেন, তাদের তুলে ধরা হচ্ছে আস্ত নির্বোধ হিসেবে। অথচ অহিংসভাবে এবং শৃঙ্খলার সাথে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করা হয়েছে। ৮ জুলাই গণহত্যার পরও এ বিক্ষোভ উচ্ছৃঙ্খল হয়নি। তারা নাকি হঠাৎ সহিংস হয়ে উঠেছিল। এমন প্রচারণায় কাদের বোকা বানাতে চাওয়া হচ্ছে? আর কারাই বা এসব প্রচারণাকারীদের বিশ্বাস করছে? মূল প্রশ্ন যা ছিল এবং এখনো আছে, তা হচ্ছে, মিসরীয় জনগণের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র। দেশটাতে যা ঘটছে, সেটা বিকৃতি আর বিভীষিকা। মিসর এখন সশস্ত্র বাহিনীর করুণার ওপর নির্ভরশীল। এখন এই দেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করবে তড়িঘড়ি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নির্মূল করা, নির্বিচারে জেলে ঢোকানো, অত্যাচার এবং সেই সাথে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চপর্যায়ে মিথ্যাচারের। মিসরের জেনারেলদের পেছনে পুরো সমর্থন আছে পশ্চিমা জগৎ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের। একমাত্র এটাই বাস্তবতা। যারা ইসলামপন্থীদের প্রতি মজ্জাগত বিদ্বেষবশত সেনা-পুলিশের হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়নকে সমর্থন দিচ্ছে, একদিন ওদের জবাব দিতে হবেই। তা অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে তাদের কথিত গণতান্ত্রিক সেই রাজনৈতিক কর্মসূচি, যা ব্যারাকের ছায়ায়, দুর্নীতির অন্তকরণে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ঘূর্ণিকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে। তাদের দায় বিপুল। সর্বোপরি, তারা অন্যায়ে মদদ দিয়েছে এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনকে যুক্তিসঙ্গত করতে চেয়েছে। হায়রে, দেউলিয়া, ‘উদারপন্থী’, শোচনীয় প্রগতিবাজ। ১৭ আগস্ট, ২০১৩ ভাষান্তর- মীযানুল করীম