হেফাজতের কর্মকা-কে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার বিভিন্ন কলা-কৌশল হাতে নিয়েছে

হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের জরুরি সভায় নেতৃবৃন্দ
হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দ বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ মুসলমানদের সঠিক ঈমান-আক্বিদার সংরক্ষণ ও আল্লাহ, রাসূল (সা.)কে নিয়ে কটূক্তিকারী নাস্তিকদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। এই ঈমানী ও দ্বীনী সংগঠন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোনো দলের সাথে নির্বাচনী চুক্তি কিংবা কারো হাতের পুতুল হিসেবেও ব্যবহৃত হতে চায় না। সারা দেশে হেফাজতের কর্মকা-কে বাধাগ্রস্ত ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কলা-কৌশল হাতে নিয়েছে। তারা হেফাজতের বিরুদ্ধে কিছু অতি উৎসাহী দালালদেরও সম্প্রতি মাঠে নামিয়েছে। ইসলামী রাজনীতির দাবিদার একটি স্বার্থান্বেষী মহলও সরকারের নিমক হালাল করার জন্য হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মুখ খুলতে শুরু করেছে। তাদের মনে রাখা উচিত, এদেশের হাক্কানী উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকারের চাটুকারি করে দেশে ইসলাম কায়েম করা যাবে না। একমাত্র মহান আল্লাহ ও রাসূল (সা.) নির্দেশিত পথ ও মত অবলম্বনই ইসলামী হুকুমত কায়েমে সাফল্যের মূলমন্ত্র।
হেফাজত নেতারা আরো বলেন, হেফাজতে ইসলামসহ ৪১টি ইসলামী সংগঠনের ওপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে সরকার। তাদের নিষিদ্ধের সুপারিশ করে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী দফতরকে অবহিত করেছে। তাদের মতে এ সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ হলে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ অন্য সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামকেও সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা সম্ভব হবে। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। সারা দেশের হাক্কানী আলেম উলামাসহ ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতাই হচ্ছে হেফাজতের মূল স্পন্দন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেও হেফাজতের নিরব কর্মী ও সমর্থক রয়েছে। আওয়ামী সরকার বিগত ৫ মে মধ্যরাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ঘুমন্ত ও জিকিররত নবী প্রেমিকদের উপর অবৈধভাবে যে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল। ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণ নীরব ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে এর সঠিক জবাব দিয়ে দিয়েছে। এখন যদি হেফাজতকে সরকার নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালায়, তাহলে তারা নিজের পতন নিজেরাই ডেকে আনবে। আগামীতে ৩০০ আসনেই তারা খালি হাতে ফিরবে।তারা বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ প্রমাণে ২০ বছর কারাদ-ের বিধান রেখে ২০১২ সালে সন্ত্রাসবিরোধী যে আইন পাস করা হয়েছে। এই অভিশপ্ত আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কারণ চোর, বাটপার, সন্ত্রাসে অর্থায়নকারী, নারী ধর্ষণকারী, দেশ ও জনগণের সম্পদ লুটপাটকারী সরকারি দলেই বেশি। তথাপি সরকার তাদের না ধরে হেফাজতে ইসলামসহ অন্য দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর অন্যায়ভাবে এই আইন প্রয়োগ করে নিজেরা ধরাছোয়ার বাইরে থাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আওয়ামী সরকারকে বুঝতে হবে, হামলা, মামলা, কালো আইন করে নিষিদ্ধের ভয় দেখিয়ে এই দেশে ১৩ দফার আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না। আগামী রোজার ঈদের পর হেফাজত তার ঈমানী দাবি বাস্তবায়নে রাজপথে আবারো স্বরূপে আর্বিভূত হবে ইনশাআল্লাহ।
গতকাল সোমবার বিকালে লালবাগস্থ কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের এক জরুরি সভায় নেতৃবৃন্দ এ সব কথা বলেন। হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সিনিয়র নেতা ও বড় কাটারা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মুহাম্মদ তৈয়্যেব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আজকের সভায় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, খেলাফতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, হেফাজত প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল, অর্থ সম্পাদক মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা রিয়াজতুল্লাহ, মাওলানা মাওলানা আলতাফ হোসাইন প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ সভায় মিশরে নাসর সিটিসহ কায়রোজুড়ে গত শুক্রবার রাতভর ও শনিবার ভোরে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলীতে শতাধিক ব্রাদারহুড সমর্থক নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, মিশরের জনগণেরর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকারকে পদদলিত করে মুসলিম ব্রাদারহুডের শতাধিক সমর্থককে হত্যা করে দেশটির সেনানিয়ন্ত্রিত সরকার তাদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্বকে চরমভাবে লংঘন করছে। এই সহিংসতা চলতে থাকলে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই দেশবাসীকে মিশরের জনগণের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।