পলাশীযুদ্ধের শিক্ষা ও আজকের বাংলাদেশ

এরশাদ মজুমদার

পলাশী নিয়ে আমি দুই যুগ ধরে পড়ছি ও লিখছি। পলাশীকে নিয়ে দেশ-বিদেশে বহু বই প্রকাশিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আগামীতেও হবে। কারণ যুদ্ধ নামের এই ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা বিশ্ব ইতিহাসকে বদলে দিয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যদি তার দেশীয় দোসরদের সাথে ষড়যন্ত্র করে সুবে বাংলা দখল না করত তাহলে ব্রিটেন বিশ্ব সাম্রাজ্যে পরিণত হতে পারত না। বাংলা তথা ভারতের সম্পদ লুট না করত তাহলে সে সারা বিশ্বের দেশে দেশে উপনিবেশ স্থাপন করতে পারত না। ২৫০ বছর পরেও আমরা পলাশীর যুদ্ধ ও নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে ভাবছি ও লিখছি।
সিরাজই ইতিহাসের একমাত্র শাসক যিনি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নায়কে পরিণত হয়েছেন। আর বিজয়ী ব্যক্তি লর্ড কাইভ খল নায়কে পরিণত হয়েছেন। নিজের দেশের বিচারেই তিনি শাস্তি পেয়েছেন। তার লর্ডশিপ কেড়ে নেয়া হয়েছিল। অপমানিত হয়ে কাইভ আত্মহত্যা করেছিলেন। অপর দিকে পরাজিত নবাব আজো সম্মানিত ও প্রশংসিত। বিদেশী ঐতিহাসিকেরাই বলেছেন, পলাশী যুদ্ধের একমাত্র নায়ক ও বীর হচ্ছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। কারণ তিনি নিজ দেশের স্বার্থেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ঐতিহাসিকেরা বলছেন, তিনি যদি সমঝোতা করতেন তাহলে নবাব থাকতেন এবং সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারতেন।
ইংরেজরা তো সুবে বাংলা (বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা) দখল করতে চায়নি। তারা চেয়েছিল বিনা শুল্কে বাংলার বন্দরে ও দেশের ভেতরে অবাধ ব্যবসায়। তাই তারা নবাবের পারিষদদের ঘুষ দিয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে হাত করেছিল। তরুণ নবাব চেয়েছিলেন ইংরেজদের বাংলা থেকে বিতাড়িত করতে। যারা নবাবের বদান্যতায় ধনী হয়েছিলেন তারা আরো বেশি বেশি সম্পদ ও অর্থের লোভে ইংরেজের সাথে হাত মিলিয়েছে। সমকালের সাত বিদেশী ঐতিহাসিক বলেছেন, পলাশীর যুদ্ধ সত্যিকার অর্থে কোনো যুদ্ধ ছিল না, এটা ছিল একটা গভীর ষড়যন্ত্র। প্রায় বিনা যুদ্ধেই নবাবের পতন হয়েছে। বিশ্বের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ একটি বিখ্যাত যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ যুদ্ধের ফলেই ইংরেজরা বাংলা দখল করে নিয়েছে এবং কালক্রমে ভারত দখল করে নিয়েছে। দাদাভাই নওরোজি তার পোর্ট ইন ইন্ডিয়া বইতে লিখেছেন, ইংরেজেরা ভারতের অর্থসম্পদ লুট করেই গ্রেট ব্রিটেনকে মতাবান রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ইংল্যান্ডের রাজা রানীরা সম্রাটের মুকুট পরেছেন।
যে সময়ে ইংরেজেরা বাংলা দখল করে তখন বাংলা ছিল ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা একটি বসুন্ধরা’। দেশী-বিদেশী সব ঐতিহাসিকই বলেছেন, প্রাক-পলাশী আমলে বাংলার অর্থনীতির বুনিয়াদ ছিলÑ খুবই মজবুত। শুধু এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত ব্যবসায়ী ও সওদাগর বাংলায় আসতে শুরু করে। ১৭৫৬-৫৭ সালে একজন ইউরোপীয় পর্যটক বাংলাকে দেখে লিখেছিলেন, বাংলার অন্তর্বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যের পরিমাণ এত বেড়ে গিয়েছিল যে; পারসিক, আবিসিনিয়ান, আরব, চীনা, তুর্কি, ইহুদি, আর্মানি ব্যবসায়ীরা দলে দলে এখানে আসতে থাকে। ফার্সিভাষী ঐতিহাসিকেরা বাংলার নামকরণ করেছিলেন, ‘জান্নাতুল বিলাদ’ বা সুবাহগুলোর স্বর্গ। সব মোগল ফরমানেই বাংলাকে ‘জান্নাতুল হিন্দুস্তান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফরাসি পর্যটক বার্নিয়ের বলেছিলেন, ‘বাংলা এতই সম্পদশালী ছিল যে, এখানে একটি প্রবাদ চালু ছিল- বাংলায় প্রবেশের দরজা অসংখ্য কিন্তু বের হওয়ার দরজা একটিও নেই’। ঐতিহাসিক ও পর্যটক আলেকজান্ডার ডো লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দাঁড়িপাল্লা বাংলার অনুকূলেই ভারী ছিল এবং বাংলা একমাত্র পাত্র ছিল যেখানে সোনাদানা এসে শুধু জমত, তার কিছুই বের হতো না’। ১৭৩৫ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথিপত্রে বলা হয়েছে, সারা ভারত বর্ষের মধ্যে বাংলাই হচ্ছে একমাত্র সস্তা গণ্ডার প্রাচুর্যে ভরা দেশ। নবাব আলীবর্দির শাসনের সময় (১৭৪০-৫৬) ছিল বাংলার গৌরবোজ্জ্বল যুগ। ইংরেজেরা মূলত একটি লুটেরা জাতি। শক্তি দিয়ে পরের সম্পদ লুণ্ঠন করাই ছিল তাদের পেশা। এক সময় তারা নাকি সমুদ্র ডাকাত ছিল। ফলে বাংলার সম্পদ তাদের প্রচণ্ডভাবে আকৃষ্ট করেছে। ওই সময়ে বাংলায় আরো অনেক বিদেশী কোম্পানি ব্যবসায় করত। একমাত্র ইংরেজেরাই অন্য দেশের ব্যবসায়ীদের দাঙ্গা হাঙ্গামা করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্ববাণিজ্যে বাংলার গৌরব ও উন্নতির কথা তখন আরব, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৭৫৬ সালের এপ্রিলে সিরাজ যখন নবাব হন তখন সুবে বাংলার শৌর্য বীর্য ছিল তুঙ্গে। সিরাজ নবাব হওয়ার আগেই আলীবর্দি খাঁর আত্মীয়স্বজন ও অমাত্যবর্গের ভেতর নবাবী লাভ নিয়ে নানা ধরনের গ্রুপিং চলছিল। এই গ্রুপিংকে উসকে দেয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে ইংরেজেরা। সিরাজ নবাব হবেন এটা ইংরেজেরা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছে। তাই তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা ধরনের কূটরটনা করা শুরু করে তারা। কূটরটনার কাজে তারা পারিষদ ও বিদেশীদের কাজে লাগায়। এ ব্যাপারে তারা সবচেয়ে আনুকূল্য পেয়েছে মেহেরুন নিসা ওরফে ঘসেটি বেগমের কাছ থেকে। ঘসেটি বেগম চেয়েছিলেন তার ছেলে শওকত জংকে নবাব করতে। শওকতের গৃহশিক গোলাম হোসেন এ কারণেই সিরাজের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি দুর্নাম রটিয়েছে। হিন্দু, মুসলমান ও ইংরেজদের রচিত ইতিহাসগুলো বেশির ভাগই রচিত হয়েছে পলাশীর পরে। ফলে এসব ইতিহাস ছিল ইংরেজদের অনুপ্রাণিত ও তাঁবেদার ঐতিহাসিকদের লেখা। যারা সিরাজকে একজন অমানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে নথিপত্র ঘেঁটে যেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে তাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সিরাজ ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক স্বাধীনচেতা তরুণ নবাব। তিনি তার ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কাছে দেশের চাওয়াকে বিসর্জন দেননি। ফলে ইংরেজ মানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ও তাদের দোসরদের সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিরাজের তিনটি নির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল এবং তা ছিল একজন দেশপ্রেমিকের কাছে ন্যায়সঙ্গত।
১. ফোর্ট উইলিয়াম কেল্লার সংস্কার ও এটাকে দুর্ভেদ্য ও সুসংহত করার প্রচেষ্টা
২. দস্তকের বা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতিপত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার করা
৩. নবাবের অপরাধী ও শাস্তিপ্রাপ্ত প্রজা ও কর্মচারীদের কলকাতায় বেআইনি আশ্রয় দেয়া।
অভিযোগগুলোর প্রত্যেকটিই দলিল দস্তাবেজ দ্বারা প্রমাণিত। কোম্পানির পরিচালকেরা কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতার কথা জানতেন এবং লুটপাটের মানসিকতার কারণে তারা কর্মচারীদের সংযত হওয়ার কোনো নির্দেশ দেননি; বরং উসকে দিয়ে বলেছেন যেনতেন প্রকারে দুর্গকে দুর্ভেদ্য করে তুলতে হবে। বেআইনি ব্যবসায় বাড়িয়ে যেতে হবে। নবাব বুঝতে পেরেছিলেন ইংরেজেরা তাদের সামরিক মতা বাড়িয়েই চলেছে। যদিও তারা বলেছে যে, অন্য ইউরোপীয়দের আক্রমণ থেকে সম্পদ রা করার জন্যই তারা দুর্গ দুর্ভেদ্য করে তুলছে; কিন্তু নবাব তাদের এ যুক্তি গ্রহণ করেননি।
১৭১৭ সালে কোম্পানি দিল্লির দরবার থেকে যে দস্তক বা অনুমতিপত্র নিয়েছিল তা সীমাবদ্ধ ছিল শুধু আমদানি রফতানির জন্য। বিনা শুল্কে অভ্যন্তরীণ বাজারে খুচরা বা পাইকারি বাণিজ্যের কোনো ধরনের অনুমতি ওই দস্তকে ছিল না। এমনকি কোম্পানির নামে দেয়া দস্তক কোম্পানির কর্চারীরা নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসার েেত্রও জবরদস্তি ব্যবহার করে শুল্ক রেয়াত নিতো। এর ফলে নবাবের শুল্ক আয় কমে যেতে লাগল। কোম্পানির কর্মচারীরা বহু েেত্র নবাবের রাজস্ব কর্মচারীদের মারধর করত। দিল্লির দস্তক বাংলার নবাবের সম্মতি সাপে।ে ইংরেজেরা মানে কোম্পানি কর্মচারীরা নবাবের নির্দেশকে উপো করেই শুল্কহীন ব্যবসায় করতে শুরু করে। অনেক সময় নবাব তাদের ধরে এনে শাস্তি দিয়েছেন; কিন্তু এরা ছিল বেহায়া। অনেক সময় কোম্পানি কর্মচারীরা অন্য কোম্পানির কর্মচারীদের কাছে দস্তক বিক্রি করত। এ ব্যাপারে নবাব কাগজে কলমে প্রমাণ দিলে কোম্পানির অফিসারেরা মুচলেকা ও জরিমানা দিয়ে ছাড়া পায়।
ঢাকায় নিযুক্ত নবাবের কর্মচারী রাজবল্লভ তহবিল তসরুফের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে বিচার চলাকালে রাজবল্লভের অপরাধী ছেলে কৃষ্ণদাসকে ইংরেজেরা আশ্রয় দেয়। নবাব কৃষ্ণদাসকে ফেরত চাইলে কোম্পানির কর্মচারীরা তা অস্বীকার করে। ইংরেজেরা রাজবল্লভকে ঘসেটি বেগমের দলে ভিড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। ইংরেজ নাবিক ডেভিড রেনি লিখেছেন, নবাবের সব অভিযোগই ছিল এক শ’ ভাগ সত্য।
১৭৫৬ সালের ২৮ মে’র চিঠিতে নবাব সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, ‘ইংরেজেরা আমার রাজ্যে থাকতে চাইলে তাদের দুর্গগুলো ভেঙে ফেলতে হবে,পরিখা ভরাট করে দিতে হবে এবং জাফর খানের (মুর্শিদ কুলি খাঁ) আমলের শর্তাবলি বহাল রেখে ব্যবসায়বাণিজ্য করতে হবে। তা না হলে আমার রাজ্য থেকে তাদের বহিষ্কার করা হবে। তারা যেন মনে রাখে আমিই এ রাজ্যের নবাব।’ এরপরে, ১ জুন, ১৭৫৬ সালে নবাব আবার চিঠি লেখেন, ‘ইংরেজেরা যদি তাদের উপরিউক্ত আচরণগুলো সংশোধন করবে বলে কথা দেয়, তাহলে আমি তাদের ভুলত্রুটি মা করে দেবো এবং আমার রাজ্যে তাদের থাকতে দেবো।’ নবাব মাদ্রাজের ইংরেজ গভর্নর পিগটকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, সুবাহ বাংলায় ইংরেজদের ব্যবসায়বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া বা এখান থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়া মোটেই আমার অভিপ্রায় নয়।
ডাচ কোম্পানির নথিপত্র থেকে প্রমাণ হয়েছে যে, নবাবের সাথে বিরোধ বা সংঘর্ষের জন্য মূলত ইংরেজেরাই দায়ী। তারা নবাবের দূতকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। নবাবের আসামিকে আশ্রয় দিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ইংরেজেরা নবাবের বিরুদ্ধে ডাচদের সমর্থন চেয়েছিল; কিন্তু ডাচরা রাজি হয়নি।
কোম্পানির তাঁবেদার বা স্বার্থান্বেষী কিছু ঐতিহাসিক বা লেখক নানাভাবে প্রচার করেছেন যে, নবাবের অত্যচারে সমাজে ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে হিন্দুরা নবাবের বিরুদ্ধে দল পাকাতে শুরু করে। মিথ্যা বা পপাতমূলক ইতিহাসের জনক ছিলেন মিস্টার এস সি হিল। তার সাথে আরো কিছু স্বার্থান্বেষী হিন্দু ও মুসলমান ঐতিহাসিকও ছিলেন। তবে এ কথা ঠিক যে, নবাবের দরবারে স্বার্থগত কারণে দু’টি গ্রুপ বা জোট ছিল। এ গ্রুপ কখনোই সাম্প্রদায়িক ছিল না। নবাব আলীবর্দির আমলে মানে ১৭৫৪ সালে দরবারের উচ্চপদস্থ ১৮ জন কর্মচারীই ছিলেন হিন্দু। ১৭৫৫ সালের দিকে নায়েব দেওয়ান উমিদ রায়ের নেতৃত্বে হিন্দুরাই ছিল সবচেয়ে বেশি। নবাব সিরাজের আমলেও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি; বরং সিরাজের আমলে হিন্দু অমাত্যরা অনেক বেশি সুবিধা লাভ করেছে। তরুণ নবাবের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসভাজন ছিলেন মোহনলাল। সুতরাং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের যে কথা ইংরেজেরা প্রচার করার চেষ্টা করেছিল তা একেবারেই মিথ্যা প্রামাণিত হয়েছে। মূল বিষয়টা হলো জগৎ শেঠের মতো ব্যাংকার ও শেঠেরা স্বার্থগত দিক থেকে কোম্পানির স্বার্থের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। ইংরেজেরাও সুযোগ পেয়ে নবাবের বিরুদ্ধে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীকে সংগঠিত করে। এরাই বেশি সুযোগ সুবিধা লাভের জন্য নবাবকে সরিয়ে দিতে ইংরেজদের উসকে দিয়েছে। সে সময়ে জগৎ শেঠের কোম্পানির কাছে চার কোটিরও বেশি টাকা পাওনা ছিল। ফলে জগৎ শেঠ নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়েছে। একেবারেই নিজেদের ুদ্র স্বার্থ আদায়ের জন্য দরবারি হিন্দুরা বাংলার স্বাধীনতা বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়। পুরো বাংলা দখল করার পর শুরু হয় ইংরেজদের অত্যাচারের কাহিনী। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলা খুব দ্রুত গতিতে বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছিল।
২৫০ বছর পরেও বাংলা তথা সারা ভারতবাসী নবাব সিরাজ ও পলাশীর কথা স্মরণ করে। বিশেষ করে চলমান সময়ে নবাব সিরাজের কথা বেশি বেশি করে মনে পড়ছে। কারণ আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ আর সুখে নেই। ব্যবসায়বাণিজ্য, সাহায্য, শুল্ক সুবিধা, এনজিও নামে বাংলাদেশ সীমাহীন শোষণের যাঁতাকলের নিচে পড়ে গেছে। এখানে উন্নয়নের নামে এনজিওরা শুল্কমুক্ত বাবসায়, ব্যাংক, বীমা, শিা ও চিকিৎসাসহ সর্বপ্রকার ব্যবসায়ে নেমে পড়েছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না। এনজিওরা বাংলাদেশে এখন বিরাট এক শক্তি। তাদের কিছু বললেই বিদেশীরা বলে সাহায্য বন্ধ করে দেয়া হবে। সংস্কৃতির েেত্রও বিদেশীরা হস্তপে করতে শুরু করেছে। বিদেশীদের ল্য হলো বাংলাদেশকে একটি ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করা। বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিক দিক থেকে পঙ্গু করাই নিকট প্রতিবেশীর কাজ। এ কারণেই সরকার সাহস করেছে শাপলা চত্বরের মতো একটি কলঙ্কিত ঘটনা ঘটাতে। চলমান সময়ে বাংলাদেশের এলিটরা বুঝে হোক অথবা না বুঝে হোক বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভিন দেশের হাতে তুলে দিতে চায়।
ভারতের পরামর্শ হলো, কঠোর দমননীতি চালিয়ে জনগণের মুখ বন্ধ করা, প্রতিপকে মাথা তুলে দাঁড়াতে না দেয়া। দেশের মেজরিটি মানুষকে দমন করতে পারলেই মাইনরিটিরা ইংরেজদের মতো বহুকাল দেশটা চালাতে পারবে। প্রচার প্রোপাগান্ডা করতে হবে, কঠোর দমননীতি না চালালে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্যই দমননীতি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সাউথ আফ্রিকায় ইংরেজেরা যে নীতি গ্রহণ করে মেজরিটি কালোদের দমন করে রেখেছিল। কাশ্মিরে ভারত দমননীতি চালাচ্ছে ৬০ বছর ধরে। জাতিসঙ্ঘের গণভোটের প্রস্তাবকে ভারত তোয়াক্কা না করেই দমননীতি চালিয়ে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগও মনে করে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রা করার জন্য তাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য মতায় থাকা দরকার। ভারতও মনে করে আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা একমাত্র দল ও ব্যক্তি ভারতের স্বার্থকে এক শ’ ভাগ রা করতে পারবে। নবাব সিরাজ বাংলার স্বাধীনতা ও জনস্বার্থ রা করার জন্য নিজের জীবন দান করে আমাদের শিা দিয়ে গেছেন মাতৃভূমির জন্য কী করতে হবে। যুদ্ধে হেরে গিয়েও আজ সিরাজ একজন নায়ক। আর যারা জিতেছে তারা আর তাদের দোসরেরা গণশত্রু। 

লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক