
বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদরাসায় হেফাজত মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর বক্তব্য শুনছেন নেতাকর্মী ও তৌহিদি জনতা : নয়া দিগন্ত
কারাবরণ ও রিমান্ডে নির্মম নির্যাতনে চরম অসুস্থতায় হাসপাতাল থেকে দীর্ঘ দুই মাস পর গত বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদরাসায় ফিরে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের সব দাবি দেশ, ইসলাম, মানবতা ও শান্তির জন্য। কিন্তু সরকার হেফাজতের শান্তির আন্দোলনে আঘাত করে দমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। এ কারণে হেফাজতের নাম এখন বিশ্বের সব দেশে, সবার মুখে মুখে। সরকারের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, নির্যাতন করে, শহীদ করে আন্দোলন দমানো যাবে না। রমজানের সম্মানে অবিলম্বে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি মেনে নিন এবং বন্দীদের মুক্তি দিন।
চট্টগ্রাম নগরীর প্রর্বতক মোড়ের সিএসসিআর হাসপাতাল থেকে তার আত্মীয়স্বজনেরা তাকে ফটিকছড়ির বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টায় তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। এ সময় হেফাজতে ইসলামের সহস্রাধিক নেতাকর্মী তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন। রাত ৯টা ২০ মিনিটে মাদরাসার দ্বিতীয় তলায় হেফাজত কার্যালয়ের সামনে হুইল চেয়ার থেকে ছাত্রদের কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে মাঠে অপেক্ষমাণ সমবেত তৌহিদি জনতার উদ্দেশে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
৫ মে শাপলা চত্বর ও ৬ মে হাটহাজারীসহ সারা দেশে সরকারি বাহিনী ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত ও আহত হেফাজত নেতাকর্মীদের জন্য দোয়া করে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, এ রক্ত বৃথা যাবে না, কেয়ামতের ময়দানে মেশ্কে আম্বর হয়ে আবার এ রক্ত ঝরবে। শারীরিক অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে সুস্থ আছি উল্লেখ করে তিনি সবাইকে আল্লার পথে অবিচল থাকার আহ্বান জানান। তখন আবেগঘন মুহুর্মুহু সেøাগানে মাদরাসা ক্যাম্পাস কেঁপে ওঠে।
হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে বোখারি শরীফের যে গদি আল্লাহপাক দান করেছেন তা সরকারের ক্ষমতার গদির চেয়েও অনেক দামি উল্লেখ করে বাবুনগরী আরো বলেন, আমরা বারবার বলেছি হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, আমরা গদি দখলের জন্য আন্দোলন করছি না, আমাদের আন্দোলন ইসলাম ও দেশরক্ষার জন্য।
হেফাজতের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক হাটহাজারী পৌরসভাপতি মাওলানা মীর ইদ্রিসের সঞ্চালনে এ সময় বক্তব্য রাখেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা শামসুল আলম, উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান চৌধুরী, মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা ইয়াহিয়া, মুহাদ্দিস মাওলানা শোহাইব, মুফতি আবু সাইদ, পৌর সেক্রেটারি মাওলানা নাসির উদ্দিন মনির, হেফাজত আমিরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহম্মেদ, মাওলানা জাহাঙ্গীর মেহেদী, মাওলানা জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
পরে রাত ১০টার দিকে হেফাজতের ফটিকছড়ি উপজেলা নেতাকর্মীদের গাড়ি বহরসহ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী নিজ বাড়ি ফটিকছড়িতে রওনা হন।
উল্লেখ্য গত ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকায় অবরোধের পর ৬ মে তিনি গ্রেফতার হন। এরপর রিমান্ডে নির্মম নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে ঢাকায় এবং পরে চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বিভিন্ন রোগে ভোগছিলেন।
এ দিকে হাটহাজারী ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয় কারামুক্ত হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আগামী ৮ জুলাই সোমবার হাটহাজারীতে তাদের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা দেয়া হবে।
নিজ গ্রামে প্রথম সংবর্ধনা
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, হেফাজতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্তিমিত হয়নি বরং আরো বেশি জোরদার হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নৈরাজ্যকর ও হিংসাত্মক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্বীনের পতাকাবাহী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের বিকল্প নেই। তিনি দেশকে জালেমদের হাত থেকে রায় মোমিনদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে চিকিৎসা শেষে গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নিজ গ্রাম বাবুনগরে প্রথম সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে এ কথা বলেন। বাবুনগর মাদরাসা কর্তৃপ সংবর্ধনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও মাদরাসার পরিচালক মাওলানা শাহ মুহিবুল্লাহ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ওই মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা হাফেজ হাবিব উল্লাহ।
জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। কাউকে মতার মসনদে বসাতে কিংবা বসতে দল করি না। হেফাজতি শক্তিকে আল্লাহ যে মসনদে বসিয়েছে তার দাম শেখ হাসিনার গদির চেয়ে কোটি গুণ বেশি। তিনি আরো বলেন, আমি কারো প-েবিপে বলি না। তবে ইসলামের পে বলতে গিয়ে যদি কারো মনে আগুন জ্বলে, সে জন্য হেফাজত দায়ী নয়। তিনি গ্রেফতারকৃত হেফাজতের নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন।
জুনায়েদ বাবুনগরী দাবি করেন, রিমান্ডে থাকাকালে কিছু মিডিয়া তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে পরিবেশন করেছে। তিনি সময় সুযোগে এসবের জবাব দেবেন বলে জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য দেন, মাদরাসার সহকারী পরিচালক মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা সেলিম, মুফতি হাবিব উল্লাহ, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির ও মাওলানা জালাল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবু মাকনুন মোহাম্মদ বাবুনগরী।
এর আগে জুনায়েদ বাবুনগরী চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি সেবাদান কেন্দ্র (সিএসসিআর) থেকে সরাসরি চলে আসেন নিজ চাকরিস্থল হাটহাজারী মাদরাসায়। এশার নামাজ শেষে তিনি রাত সাড়ে ১১টায় ফটিকছড়ির নিজ গ্রামে সংবর্ধনায় যোগ দেন। এ সময় হেফাজতসমর্থিত কর্মীদের শতাধিক মোটর শোভাযাত্রা তার সাথে অংশ নেয়। উল্লেখ্য, গত ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধের পর দিন তিনি ঢাকায় গ্রেফতার হন। দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে ৩০ মে তিনি জামিনে মুক্তি পান। গুরুতর অসুস্থতার কারণে প্রথমে তাকে ঢাকার বারডেম ও পরে চট্টগ্রাম নগরের সিএসসিআরে ভর্তি করা হয়।