সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রাণের দাবি হেফাজতের ১৩ দফা


সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রাণের দাবি হেফাজতের ১৩ দফা
হারুন ইবনে শাহাদাত : মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান হেদায়েত বাণী বর্ষণ করেছেন, ‘হেফজাতে ইসলাম নয়, হেফাজতে ইনসান করুন।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘ইসলামকে হেফাজতের জন্য আল্লাহ তায়ালা আছেন। তার এই সুমধুর বচন শোনে মনে হয় তিনি ইসলামের এক মহান খাদেম। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ এই সব জ্ঞানপাপী জ্ঞান জাহির করতে গিয়ে এমন সব কথা বলেন, যার সাথে পবিত্র কুরআন-হাদীসের কোন সম্পর্ক নেই। মানবজাতির জন্য আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নিয়ামত ইসলাম। ইসলামের অনুসরণের মধ্যেই মানুষের প্রকৃত মুক্তি ও শান্তি। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী রাসূল (আ.) এর মাধ্যমে এই সত্য মানবজাতির কাছে পৌঁছিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি মানুষকে তার বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে সত্য পছন্দ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন।
এ সত্য মেনে নিলে তার কী লাভ, না মানলে কী ক্ষতি তাও বিবৃত করেছেন। নবী রাসূল (আ.) তাঁদের জীবনে এ সত্য বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন, এর মাঝেই নিহিত আছে হেফাজতে ইনসানের দর্শন। অর্থাৎ ইসলামের হেফাজতের প্রয়োজন ইনসানের হেফাজতের জন্যই। ইসলামের বাণী ইনসানের কাছে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমেই এর হেফাজতের দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী রাসূল (আ.) পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর ওফাতের আগে এ দায়িত্ব তার উম্মতদের ওপর অর্পন করে গিয়েছেন। তার উম্মতদের মধ্যে যারা কুরআন-হাদীসের জ্ঞানে অগ্রসর তাদেরকে তিনি তার উত্তরাধিকারী বলে অভিহিত করেছেন। তাদের পবিত্র দায়িত্ব রাসূল (সা:) প্রদর্শিত পথে ইসলামের বাণীকে মানুষের দ্বারে পৌঁছে দেয়া এবং যে জনপদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ এই বিধান মেনে নেয় সেখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ বিধান কায়েম করা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে এর সুফল সম্পর্কে অবহিত করতে দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখা।
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ দেশের শাসন পদ্ধতি গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের শর্ত হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে মতের পক্ষে রায় দিবে সেই মতেই চলবে। কিন্তু এদেশের শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রের নামে বার বার জনগণকে প্রতারিত করে, তাদের মতাদর্শ ও বিশ্বাসকে ক্ষমতার জোরে মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। বর্তমানে দেশের শাসন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল (দলের সংখ্যার দিক থেকে, ভোটের দিক থেকে নয়) গণতন্ত্রের বিপরীত একনায়কতন্ত্র ও ধর্মহীন সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী। সরকারের নৌকার পালে এখন তাদেরই জোর। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে ওয়াদা করেছিল ইসলাম বিরোধী কোন আইন করবে না। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধানের মূল স্তম্ভ থেকেই ইসলামের শিকড় কেটেছে। এর আগে ১৯৭০ এর নির্বাচনের সময়ও এমন ওয়াদা তারা করেছিলো। কিন্তু বিজয়ী হওয়ার পর সে ওয়াদা রক্ষা করেনি।
জনগণকে দেয়া এই ওয়াদা ভঙ্গের কথা স্মরণ করে দিতেই হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবি জাতির সামনে উপস্থান করেছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করছে। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী এমপিরা সেই দাবিগুলোকে উপলব্ধি না করে অপব্যাখ্যা করছেন। জনগণের দাবিকে জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী নানা রঙ দিচ্ছে। কারণ তারা জানে ইসলামকে জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাসী রঙে সাজিয়ে উপস্থাপন করতে পারলে বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে হাজার হাজার মানুষ খুন করে আফগানিস্তানের হামিদ কারজাইয়ের মতো ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়। দেশ ও জনগণের বারোটা বাজলেও ক্ষমতার মসনদ টলে না। সরকারর এ দুঃস্বপ্ন সম্পর্কে সতর্ক করতেই হেফাজতে ইসলামের আমীর মুফতি শাহ আহমদ শাফী ১৩ দফার ব্যাখ্যা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, উত্থাপিত ১৩ দফা দাবি নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের সুযোগ নেই।
আমরা গত ৯ মার্চ জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী নেতা ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এই ১৩ দফা দাবি প্রণয়ন করেছি। আমাদের সব দাবি মুসলমানদের ঈমান-আকিদার সংরক্ষণ এবং দেশের স্বাধীনতা, সামাজিক শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সুস্থ বিবেকের কোনো নাগরিকই আমাদের যেকোনো দাবির বিরোধিতা করতে পারেন না। আল্লামা শাহ আহমদ শফী আশা প্রকাশ করে বলেন, ১৩ দফা দাবি নিয়ে এই ব্যাখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পর আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না। আল্লামা শাহ আহমদ শফী উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ১২ ও ১৩ নং দাবির বক্তব্য প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় এই দুটিকে একীভূত করা হয়েছে এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ১৩ নম্বরে নতুন দাবি সংযোজন করে হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো আরো যুগোপযোগী করা হয়েছে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী উপস্থাপিত হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির ব্যাখ্যা হুবহু পেশ করা হলো।
১. সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।
ব্যাখ্যা : বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ দেশের জনসংখ্যার ৯০ ভাগই মুসলমান। আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস মুসলমানদের ঈমানের প্রধান বিষয়। এ দেশের মানুষ ধর্মপরায়ণ ও তাদের ধর্মীয় চেতনা অত্যন্ত শানিত। আজানের ধ্বনিতে এ দেশের মানুষের ঘুম ভাঙে। ইসলামী আচার-আচরণ, সংস্কৃতি তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই বিশাল ধর্মপ্রাণ জনগণের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন হিসেবেই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে সংবিধানের প্রধান মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মহাজোট নেতৃত্বাধীন ও বামপন্থীদের প্রভাবাধীন বর্তমান সরকার কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করে। সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়ে তদস্থলে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি যুক্ত করে। সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একতরফাভাবে এ কাজটি করে দেশকে ধর্মহীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করেছে। যাতে বামপন্থী ও নাস্তিক ধর্মবিদ্বেষীদের বহুদিনের পুরনো আকাক্সক্ষা পূরণ হয়। এর মাধ্যমে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানের ওপর প্রচ- আঘাত হানে সরকার। দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখসহ দলমত নির্বিশেষে সব মানুষ এর তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু সরকার কারো কোনো দাবির প্রতিই কর্ণপাত করছে না।
এরপর সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির আলোকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে শুরু করে। ইতোমধ্যেই যার প্রতিফল আসতে শুরু করেছে। পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিরোধী বক্তব্য সংযোজন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বইয়ে অশালীন যৌন শিক্ষার বিষয় যুক্ত করা এবং ধর্মীয় চেতনা ধ্বংস, অপসংস্কৃতি বিস্তারের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশের নাস্তিক্যবাদের বিস্তার ও ধর্ম অবমাননা ভয়াবহ রূপে দেখা দেয়। যা জাতি ইতোমধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছে।
এ কারণেই সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি পুনঃস্থাপনের জন্য এ দেশের তৌহিদী জনতা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে রাজপথে নেমেছে। হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত যৌক্তিক কারণেই দেশের মানুষের ঈমান-আকিদা ও চিন্তা-চেতনার সঙ্গে জড়িত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে তাদের প্রধান দাবি হিসেবে পেশ করেছে।
ইতোমধ্যেই ৬ এপ্রিল লংমার্চের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানির পর সারা দেশের কোটি কোটি মানুষ এই দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সরকারি প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ঢাকার মহাসমাবেশে জড়ো হওয়া লাখ লাখ তৌহিদী জনতার সঙ্গে সারা দেশের মানুষ এই দাবিসহ ১৩ দফা দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এটি এখন এ দেশের তৌহিদী জনতার প্রাণের দাবি। এই দাবি অত্যন্ত পরিষ্কার ও যৌক্তিক।
২. আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
ব্যাখ্যা : পৃথিবীর কোনো ধর্ম কিংবা দেশ-সমাজ ধর্ম অবমাননাকে কখনও স্বীকৃতি দেয়নি। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কোনো অধিকার কারো নেই। তারপরও একশ্রেণীর ধর্মান্ধ, ধর্মদ্রোহী নাস্তিক-মুরতাদ ধর্ম অবমাননা করে থাকে এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকে। এ জন্য পৃথিবীর বহু দেশে ধর্ম অবমাননার কঠোর শাস্তির বিধান সংবলিত আইন রয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ হওয়া সত্ত্বেও এবং এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও এক শ্রেণীর ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদ ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ক্রমাগতভাবে ইসলামের ওপর আঘাত করে আসছে। এই ধর্ম অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রতিকারে এ দেশের আলেম-ওলামাসহ তৌহিদী জনতা তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন করার পাশাপাশি ধর্ম অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান করে আইন পাসের দাবি জানিয়ে আসছেন অনেক আগে থেকেই। কিন্তু সরকার গুরুত্বপূর্ণ ও ন্যায্য এই দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। সর্বশেষ শাহবাগের আন্দোলরের সঙ্গে জড়িত ব্লগারদের ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে চরম অবমাননা ও কটূক্তির খবর জনসমক্ষে আসে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালত ব্লগারদের ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও বর্তমান সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আগে সালমান রুশদী-তসলিমা নাসরিনের মতো ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে ধর্ম অবমাননা করেছে। তৌহিদী জনতার প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ধর্ম অবমাননার এই প্রবণতা এখন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। নাস্তিক-মুরতাদ ও ভিন্নধর্মী ইসলামবিদ্বেষীরা এখন সংঘবদ্ধভাবে এই কাজটি করছে। অনলাইনে ব্লগে, ফেসবুক-টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করে, কার্টুন এঁকে তারা এই কাজটি করে যাচ্ছে। এটা দেশের তৌহিদী জনতা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। তাই ধর্ম অবমাননার জন্য কঠোর শাস্তি তথা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান করে আইন পাস করা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ধর্ম অবমাননার মাধ্যমে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে না পারে এদিক বিবেচনায়ও এ ধরনের আইন করা জরুরি।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের একাধিক বাণীতে নাস্তিক-মুরতাদদের ন্যায্য শাস্তি মৃত্যুদ-ের কথা বলা হয়েছে। এ শাস্তি কার্যক্রম বহাল করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র কিংবা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের দরকার নেই। শরীয়তের যেসব বিধান মতে মুসলিম সমাজে বিয়ে হয়, তালাক হয়, সম্পদ বণ্টন হয়, সেসব প্রচলিত ধারায় এই আইন বাস্তবায়ন করা যায়। মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননাকারীদের শাস্তির বিধান থাকতে পারলে কোটি কোটি মুসলমানের প্রাণাধিক প্রিয় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীরা নিরাপদ থাকবে, তাদের কঠোর কোনো শাস্তির বিধান বা আইন থাকতে পারবে না- এটা যুক্তিসংগত হতে পারে না। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এই ন্যায় আইনের জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে কেন? সরকার স্বপ্রণোদিতভাবে এ আইন বাস্তবায়ন করে ইমানি দায়িত্ব পালন করতে পারে।
৩. তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্লগার, নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষীর সব অপতৎপরতা ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে এবং যেসব নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি-সংগঠন যে কোনো মাধ্যমে আল্লাহ-রাসূল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে করুচিপূর্ণ মন্তব্য করে দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্যাখ্যা : তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্লগার ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে কেউ কেউ মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার আড়ালে মানুসের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, প্রিয় নবী রাসূল (সা.), পবিত্র কুরআন ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা ও অবমাননায় জড়িত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোনো মাপকাঠিতেই এমন কুৎসা ও অবমাননা মেনে নেয়া যায় না। ওরা ইসলামের এমন জঘন্য অবমাননা করেছে, যা পশ্চিমা বিশ্বের কোনো অমুসলিমের মুখেও কখনো শোনা যায়নি। সুস্থ বিবেকের কোনো মুসলমানের পক্ষে এসবের সম্পূর্ণটা পড়ে দেখার সাধ্যও নেই। ধর্ম অবমাননাবিরোধী আইনের আওতায় এসব ব্লগারের সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দাবি করছি আমরা। কারণ এদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ উৎসাহে এ ধরনের হীন তৎপরতা অব্যাহত রেখে দেশকে চরম বিশৃঙ্খা ও গণঅসন্তোষের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যা দেশের স্বাদীনতা, সুশৃঙ্খলা ও আইনি কাঠামোর জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে।
৪. দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নারী জাতির সার্বিক উন্নতির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবী নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-বাইরে ও কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-আব্রু ও যৌন হয়রানি থেকে বেঁচে থাকার সহায়ক হিসেবে পোশাক ও বেশভূষায় শালীনতা প্রকাশ ও হিজাব পালনে উদ্বুদ্ধকরণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং একই লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সব ধরনের বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যাভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন মেলামেশা, নারীনির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার সহিংসতা, যৌতুক প্রথাসহ যাবতীয় নারীনিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
ব্যাখ্যা : তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাস্তিক্যবাদী ব্লগাররা শুধু আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করেই থামেনি। সঙ্গে সঙ্গে আবহামান বাংলার রক্ষণশীল সামাজিকহ অনুশাসন ও সংস্কৃতির ওপরও আঘাত করে অনেক কর্মকা- ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে। বিয়ে বহির্ভূত ও ঘনিষ্ঠ অনাত্মীয় নারী-পুরুষের দৃষ্টিকঠু বিচরণ ও রাস্তায় একসঙ্গে; এমনকি একই তাঁবুতে অবস্থান করে রাত্রিযাপনের মতো অনৈসলামিক, অনৈতিক, অসামাজিক ও এ দেশের আবহমান কৃষ্টি-কালচার-সংস্কৃতিবিরোধী কাজ প্রকাশ্যে ঘটেছে শাহবাগে। ধর্মীয় অনুভূতি ছাড়াও যা পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতেও কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শাহবাগে যে কালচারের চর্চা চলেছে তা দেশে  চালু হলে নারীদের নিরাপত্তা সর্বক্ষেত্রেই বিঘœ হবে। দেশের নারী সমাজকে ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি থেকে বাঁচিয়ে রেখে সর্বোপরি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই উপরোক্ত কর্মকা- বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। ইসলাম নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও যৌন হয়রানি থেকে বেঁচে থাকার জন্য হিজাব প্রথা বাধ্যতামূলক করেছে এবং পুরুষদেরও বৈধ, সম্পর্কের বাইরে নাীদের সঙ্গে দৃষ্টি অবনত রেখে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেহ চলাচল করতে বলে চমৎকার ভারসাম্য রক্ষা করেছে। কাজেই হিজাব পালন করে অথবা যৌন উদ্দীপনা তৈরি করে না- এমন শোভনীয় পোশাক পরে নারীরা নিরাপদ কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে বা ঘর থেকে বের হতে তো কোনো বাধা নেই। ইসলাম নারীর নিরাপত্তার দিকটি কঠোরভাবে দেখে। কেবল সুযোগসন্ধানীরাই এটাকে নারী অবদমন বলে অপপ্রচার চালায়। আমাদের কথা পরিষ্কার যে হিজাব বা শালীনতার সঙ্গে নারীদের নিরাপদ পথ চলাচল, শিক্ষার্জন ও কর্মক্ষেত্রে যেতে কোনো বাধা নেই। উদাহরণত নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আলাদা বালিকা বিদ্যালয় বা মহিলা কলেজ থাকতে পারলে আলাদা কর্মক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আপত্তি তোলার যুক্তি থাকতে পারে না।
৫. নারীনীতি ও শিক্ষানীতির ইসলামবিরোধী ধারা ও বিষয়সমূহ বিলুপ্ত করতে হবে এবং শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামের মৌলিক শিক্ষা মুসলিম ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।
ব্যাখ্যা : ত্যাজ্য সম্পত্তিতে সমঅধিকারের আইনসহ নারীনীতির পবিত্র কুরআন-সুন্নাহবিরোধী ধারাগুলোই আমরা সংশোধনের দাবি করছি। এ ছাড়া জাতিসংঘ কর্তৃক বিতর্কিত সিডো সনদ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। এই সিডো সনদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় নেতা পোপ ও ভ্যাটিকানসহ অনেক মুসলিম ও খ্রিস্টান দেশ আপত্তি জানিয়েছে। এই সিডো সনদ কার্যকর হলে পারিবারিক ব্যবস্থা বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এই বিতর্কিত সনদে বিবাহ বহির্ভূত অবাধ যৌনাচারের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে সন্তানের পিতৃপরিচয় বিলীন হয়ে যাবে। আমরা নারীসমাজকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই, ইসলাম সর্বোত্তম উপায়েই নারীদের মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার পক্ষে। আর  বর্তমানের নাস্তিক্যবাদীরা নারীদের কেবল অলঙ্কারিক ও ভোগ্যপণ্য রূপেই বিবেচনা করে।
অন্যদিকে সরকার ঘোষিত শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছে। এখানে ধর্মশিক্ষা রাখা হলেও ছাত্রছাত্রীদের মন ও মননকে ধর্মহীন করার জন্য কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। চলতি ২০১৩ সালের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইসমূহে ইসলামের যে অপব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে, তা চরম অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া কোমলমতি ছেলেমেয়ে-শিশুদেরকে ক্লাসে একসঙ্গে বসিয়ে যেভাবে যৌন শিক্ষা চালু করা হয়েছে, তা এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা ও সুস্থ সামাজিক অনুশাসনকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানুষকে যাবতীয় পশুপ্রবৃত্তি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অন্যায়-অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ধর্মশিক্ষা বা ধর্মীয় অনুভূতির বিকল্প নেই। এ কারণে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ থেকেই আমরা দাবি জানিয়ে আসছি যে, শিক্ষার সর্বস্তরে সঠিক ধর্মশিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইসলাম সবসময় অন্যায়, অবিচার, ঘুষ-দুর্নীতি, মদ-জুয়া, মিথ্যা, খুন, ধর্ষণ, মারামারি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। সুতরাং সুস্থ মানসিকতাপূর্ণ আদর্শ নাগরিক গঠনে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প কিছু হতে পারে না।
৬. ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের নামে শিরিকী সংস্কৃতিসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : দেশে ভাস্কর্যের নামে আবক্ষ নারী-পুরুষ বা জীবজন্তুর মূর্তি তৈরি ও ফুল দিয়ে সেসবকে সম্মান প্রদর্শনের রেওয়াজ যে হারে শুরু হয়েছে তা ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কখনো কাম্য হতে পারে না। ইসলামে স্পষ্টভাবে মূর্তি তৈরি ও সম্মান প্রদর্শনকে শিরক ও হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আমরা কখনো প্রাণহীন শিল্পকর্মের বিরোধী নই। বরং ইসলাম সৌন্দর্য ও জ্ঞান-উদ্দীপক শিল্পকর্মকে উৎসাহিত করে।
অপরদিকে মঙ্গল প্রদীব ও মোমবাতি প্রজ্বল অগ্নিপূজক ও পশ্চিমা সংস্কৃতি। কথিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এটাকে এদেশে ঢালাওভাবে প্রচলনের জোর চেষ্টা চলছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে অগ্নি প্রজ্জ্বলনের মতো পশ্চিমা ও বিজাতীয় এই সংস্কৃতির প্রচলন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারো ধর্মীয় আচরণে এ ধরনের কোন সংস্কৃতি চর্চার বিধান থাকলে সেটা তারা নিজেদের পরিসরে পালন করতে পারে। কিন্তু কথিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিয়ে ঢালাওভাবে এদেশের তরুণ ও ছাত্রসমাজকে দিয়ে এই সংস্কৃতি চর্চা করিয়ে জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এদেশের তৌহিদী জনতা এটা মেনে নিতে পারে না। এই ধরনের কার্যক্রম বন্ধের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত।
৭. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : বর্তমানে উপরোক্ত গণমাধ্যমে ইসলামী নিদর্শন নিয়ে হাসি-তামাশা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। খুনি, দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী ও দেশদ্রোহী চরিত্রে পায়জামা-পাঞ্জাবি ও দাড়ি-টুপি চরিত্রধারীদের উপস্থাপন করা হয়। যা স্পষ্টতই ইসলাম ও মুসলমানদেরকে ষড়যন্ত্রমূলক হেয় করা ছাড়া আর কিছু নয়। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এমন আচরণ কোনভাবেই চলতে দেয়া যায় না এবং এটা সুস্থ চিন্তার মত প্রকাশও হতে পারে না। এর কুফল বর্তমানে সমাজে পড়তে শুরু করেছে। কথিত শাহবাগীরা দাড়ি-টুপিধারী, বয়োবৃদ্ধ মুসলমান ও ইসলামী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তা অমুসলিম দেশেও সচরাচর দেখা যায় না। আমাদের এই দাবির যৌক্তিকতাও বলার অপেক্ষা রাখে না।
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লীদের নির্বিঘেœ নামায আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : বর্তমানে রাজনৈতিক কারণে মসজিদ-মাদরাসায় অনাকাক্সিক্ষত বিভিন্ন ধরনের হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। জুমার দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বিভিন্ন গেট বন্ধ রাখা, গুলীবর্ষণ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, তল্লাশির নামে হয়রানি, বুট জুতা নিয়ে পুলিশের মসজিদে প্রবেশসহ হরেক রকমের অবমাননা ও মুসল্লীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ওয়াজ ও তাফসির মাহফিলে বাধাদান, মাইক খুলে নেয়া ও অনুমতি না দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। ধর্মকর্ম পালনে ও মসজিদে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেয়া ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
৯. দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তা রক্ষার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ঈমান ও দেশবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত এনজিও খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে পশ্চিমা ও খ্রিস্টান বিশ্ব সুগভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত; এটা এখন আর কারো কাছে গোপন বিষয় নয়। খ্রিস্টান মিশনারিসমূহের পার্বত্য এলাকায় ধর্মান্তকরণ প্রক্রিয়া এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে যা এদেশের স্বাধীনতা ও অখ-তার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। এছাড়াও অনেক চিহ্নিত এনজিও দেশের শিক্ষায় অনগ্রসর ও অনুন্নত এলাকায় বেছে বেছে সাহায্য-সহযোগিতা ও শিক্ষাদানের আবরণে মুসলমান শিশু-কিশোর ও বয়স্কদেরকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করছে। যা খুবই উদ্বেগজনক। আমাদের দাবি হলো সরকারকে আইন-শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীসহ অন্যান্য তদারকি সংস্থার কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এসবের নিয়ন্ত্রণ করে সন্দেহভাজনদের দেশ থেকে বহিষ্কার করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে হুমকি মুক্ত রাখতে হবে।
১০. কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা ও তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা : কখনো শেষ নবী, কখনো ঈসা (আঃ) এবং কখনো ইমাম মাহদীর দাবিদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী আহমদিয়ারা নিজেদের মুসলমান দাবি করে এদেশের সরলমনা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া জামাতভুক্ত করে ঈমানহারা করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক সরলমনা মুসলমানই ঈমানহারা হচ্ছে। কাদিয়ানী তথা আহমদিয়াদের এই ঈমানবিধ্বংসী প্রতারণা বন্ধ করার জন্য বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশেও তাদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের প্রতারণাপূর্ণ সব অপতৎপরতা ও অপপ্রচার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।
১১. রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব ও তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বিচারে গুলীবর্ষণ এবং হত্যাকা- বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা ;: দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমানের যৌক্তিক ঈমানী দাবিগুলোর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব ও তৌহিদে বিশ্বাসী মুসলমান। কেবল ইসলামের কথা বলতে বা দাবি জানাতে গিয়ে তারা যে মিছিল-সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে, তাতে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, নির্বিচারে গুলীবর্ষণ ও গণহত্যা চালানো হয়েছে। এ ধরনের কর্মকা- বন্ধ করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের ধর্মকর্ম পালনে হুমকি ও ভয়-ভীতি দানের খবরও আসছে। একটা স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমনটা চলতে পারে না।
১২. অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র, ইমাম-খতিব ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
ব্যাখ্যা : হেফাজতে ইসলামের ঈমান-আকীদা ও ইসলামের ইজ্জত সংরক্ষণ, দেশের স্বাধীনতা-সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন নিরাপদ রাখার চলমান আন্দোলনে অন্যায়ভাবে অনেক আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব ও তৌহিদে বিশ্বাসী নিরীহ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হামলা দেয়া হয়েছে। অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র, ইমাম-খবিত ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
১৩. বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
ব্যাখ্যা : আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে উজ্জ্বল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। বাংলাদেশে বহু সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিমূলক অবস্থান বিশ্বের অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বাংলাদেশের এই সুনামকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারী মহল এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সহাবস্থানকে কলঙ্কিত করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও শাস্তিদান এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের ন্যায্য অধিকার ও নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার দাবি জানাচ্ছি।