*শাপলা চত্বরের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি হেফাজত ইউরোপ শাখার
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হামলার নিন্দা ও আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম ইউরোপ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সংগঠন। তারা ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে।
হেফাজতে ইসলাম ইউরোপ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ৫ মের কালরাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বর তৌহিদি জনতার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনী, র্যাব আর বিজিবির নির্বিচার আক্রমণে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন তিন হাজার মানুষ। মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের স্থানীয় একটি হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম ইউকে অ্যান্ড আয়ারের সভাপতি মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে এ ধরনের আক্রমণের ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। ঘটনার নির্মমতা আর আকস্মিকতা স্মরণ করিয়ে দেয় একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের কথা। ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে ঘুমন্ত বাংলাদেশীদের ওপর যে নির্মমতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাক সেনারা একই কায়দায় গত ৫ মে রাতে বিদেশী হানাদারদের মতোই ঘুমন্ত হেফাজাত নেতাকর্মীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি আর সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা।
হেফাজতে ইসলাম ইউরোপের সভাপতি মুফতি শাহ সদর উদ্দিনের সভাপতিত্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মুফতি আবদুল মুনতাকিম, আলহাজ সদরুজ্জামান খান, মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ, মাওলানা শামসুদ্দোহা, মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, হাফিজ হোসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, মাওলানা তায়িদুল ইসলাম, মাওলানা হিফজুল করিম মাসুক, মাওলানা জাবীর আহমদ, মাওলানা ফখরুদ্দিন, হাফিজ মাওলানা মোস্তাক।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ গ্রেফতারকৃত সব ওলামাকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তারা। নেতৃবৃন্দ বলেন, অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও ও ভাঙচুরের ঘটনার সাথে হেফাজতে ইসলামের সামান্যতম সম্পর্কও নেই। এটি অত্যন্ত পরিষ্কার, সারা দেশ থেকে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা পেট্রল, করাত ইত্যাদি জ্বালানি বা যন্ত্রপাতি নিয়ে যায়নি, তারা প্রত্যেকে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে জায়নামাজ, তসবিহ, মিসওয়াক নিয়ে গেছেন। তাদের দিয়ে কোনোভাবেই বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখা সম্ভব নয়। এসব মিথ্যা, উদ্ভট ও অসত্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। প্রকৃতপে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নজিরবিহীন এ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার অপচেষ্টা হিসেবেই এসব দুষ্কর্মের দায় হেফাজতের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।
বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের ওপর এই অমানবিক গণহত্যার প্রতিবাদে আগামী ১০ মে শুক্রবার বাদ জুমা আলতাব আলী পার্কে প্রতিবাদ সভা ও বিকেল ৬টায় লন্ডনের ওয়াটার লিলি হলে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান নেতৃবৃন্দ।
নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ : বাংলাদেশে আলেম ওলামা ও সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা বন্ধে জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে মাজলিসুল ওলামা ইউএসএ। অন্য দিকে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রতিবাদী র্যালি করেছে বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরাম। এ ছাড়াও রাতের অন্ধকারে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে আসসাফা ইসলামিক সেন্টার নিউ ইয়র্ক।
হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যার বিচার দাবি : শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবরোধে রাতে ঘুমন্ত হেফাজতের কর্মী ও ইবাদতে মশগুল আলেম-উলামা দ্বীনদার বুদ্ধিজীবীদের নাস্তিক সরকারের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পেটোয়া পুলিশ, র্যাব মিলে শাপলা চত্বর থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে অন্ধকারে ফেলে প্রায় ১০ হাজার যৌথবাহিনীর সদস্য মিলে শাপলা চত্বর দখলের নামে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। ২৫ মার্চ কাল রাতের চেয়ে জঘন্যভাবে অস্ত্র চালিয়ে গণহত্যা করে। ওই গণহত্যায় অগণিত শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। কিন্তু রাতের অন্ধকারে অগণিত শহীদের লাশ গুম করে, ভোরের আগেই শহীদের রক্ত পরিষ্কার করার নামে ধুয়ে মুছে ফেলা হয় সব চিহ্ন।
খেলাফত মজলিস লন্ডন মহানগরীর উদ্যোগে গত রোববার অনুষ্ঠিত শোক ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা এ সব কথা বলেন। শাখা সভাপতি মাওলানা তায়ীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল আহাদের পরিচালনায় শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করেন ক্যানিং টাউন শাখার সভাপতি হাফিজ খলিলুর রাহমান।
ইস্ট লন্ডনস্থ আল-হুদা সেন্টারের এই শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্যের সহসভাপতি মাওলানা সাদিকুর রাহমান, বায়তুলমাল সম্পাদক মুফতি হুসাইন মোহাম্মদ সুলতান, প্রচার সম্পাদক আব্দুল করীম উবায়েদ, শেখ মুস্তাক আহমদ, মাওলানা আব্দুল করীম, লন্ডন মহানগরীর সহসাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুর রাজ্জাক, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মালিক, সহপ্রশিণ সম্পাদক মাওলানা ফুজায়েল আহমাদ নাজমুল, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনিসুর রাহমান, মাওলানা মাহমুদ হুসাইন ও সারে শাখার বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা মিনহাজুল আবেদীন মিলাদ প্রমুখ।