হেফাজেতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাক্ষাৎকার (জেলা প্রশাসকসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে)ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের আল্লামা শফী : ঈমান রক্ষার্থে শহীদ হতে পারি তবুও দাবি থেকে পিছু হটব না : রাজধানীসহ সারাদেশে হেফাজতের মতবিনিময় গণসংয
অযথা সময়ক্ষেপণ করে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে না দিয়ে ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার ঈমানি দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির এবং উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গতকাল বিকালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা শফীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে এলে তিনি তাদের মাধ্যমে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।Read more
এ সময় আল্লামা শফী আগামী ৬ এপ্রিল ঘোষিত ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করতে তার সংগঠনের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে বলেন, ঈমান-আকিদা, ইসলাম ও মুসলমানদের ইজ্জত রক্ষার জন্য দেশের হাজার হাজার আলেম এবং তৌহিদি জনতা প্রয়োজনে শহীদ হতে প্রস্তুত আছেন, তবুও ঈমান রক্ষার এসব দাবি আদায় থেকে পিছু হটব না। এদিকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে লংমার্চ সফলে প্রস্তুতিমূলক সভা-সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
আল্লামা শফীর সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষাত্ : গতকাল বিকাল ৫টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এমএ মান্নান, জেলা পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে আসেন। তারা মাদরাসার মহাপরিচালক পীরে কামেল আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও হেফাজতে ইসলামের ৬ এপ্রিল লংমার্চ কর্মসূচি নিয়ে মতবিনিময় করেন। এসময় কালক্ষেপণ না করে ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার ঈমানি দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আল্লামা শফী। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিতে কোনো অস্পষ্টতা নেই। এ নিয়ে কোনো অপব্যাখ্যা ও অপপ্রচারেরও সুযোগ নেই। আমাদের অন্যান্য দাবির পাশাপাশি দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাস করার দাবিও রয়েছে।
মতবিনিময়ের সময় উপস্থিত ছিলেন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি হুমায়ুন কবীর, মাওলানা আনাস মাদানী, মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমদ, আল্লামা আহমদ শফীর পিএস মাওলানা শফিউল আলম প্রমুখ।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বলেন, আমরা জনসমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন ও পত্রিকায় বিবৃতির মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো বার বার তুলে ধরেছি। আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে—সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাস, পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগ ও সাইটে মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব অবমাননাকর জঘন্য কটূক্তিকর প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, সেসব বন্ধ করে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্লগ, ব্লগার ও পোস্টদাতাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা, পাঠ্যবইয়ে সব ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য ও উদ্ধৃতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে অবিলম্বে সংশোধনী প্রকাশ, সব অনাচার-ব্যভিচার ও অশ্লীলতা এবং নাটক-সিনেমায় ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় নিদর্শন তথা দাড়ি-টুপি, হিজাব ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে অবমাননা রোধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দান, শিক্ষার সব স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি।
আল্লামা শফী বলেন, আমাদের সব দাবিই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সরকার দেশ, জনগণ ও মুসলমানদের স্বার্থে আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিলেই চলমান আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। আমরা বার বার বলে আসছি, আমরা ক্ষমতার অংশ হতে চাই না। জনসাধারণের ঈমান-আকিদা ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদেই এ প্রতিবাদ কর্মসূচি।
এ সময় জেলা প্রশাসক এমএ মান্নান হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন গ্রুপ ঢুকে পড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, আমরা সরকারের কাছে ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার অরাজনৈতিক ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নিলে লংমার্চ কর্মসূচির প্রয়োজন হতো না। আমাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এই ন্যায্য দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা অবনতির ভয় ও অমূলক প্রশ্ন তোলা চরম দুঃখজনক। গণতান্ত্রিক দেশে জনসাধারণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। আল্লামা শাহ আহমদ শফী দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দেন যে, ঈমান-আকিদা, ইসলাম ও মুসলমানদের ইজ্জত রক্ষার জন্য শত শত আলেম ও তৌহিদি জনতা প্রয়োজনে শহীদ হতে প্রস্তুত, তবুও ন্যায্য দাবি আদায়ে পিছপা হবে না।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে বলেন, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে জনমনোভাব, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বোঝাতে। হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ব্যাপারেও তারা অবগত বলে জানান। মতবিনিময় শেষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কাছে বিশেষ দোয়া করতে বলেন।
রাজধানীতে হেফাজতের মতবিনিময় : নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আল্লামা আহমদ শফী ঘোষিত ৬ এপ্রিল ঢাকামুখী লংমার্চ সফল করতে ব্যাপক তত্পরতা চলছে রাজধানীসহ সারা দেশে। গণসংযোগ ও প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মাদরাসায় মতবিনিময় করে। এসময় বেশ কিছু আঞ্চলিক কমিটি গঠিত হয়। এদিকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ৬ এপ্রিল লংমার্চ সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সকাল ৮টায় মিরপুর আরজাবাদ মাদরাসায় প্রিন্সিপাল মাওলানা মোস্তফা আযাদের সভাপতিত্বে মিরপুর অঞ্চল, বেলা ১১টায় মোহাম্মদপুর জামেয়া রাহমানিয়ায় জামিয়া মোহাম্মদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল কালামের সভাপতিত্বে মোহাম্মদপুরের অঞ্চল, বাদ জোহর ফরিদাবাদ মাদরাসায় মাওলানা আবদুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সূত্রাপুর অঞ্চল এবং বাদ আসর মুন্সীগঞ্জে নিমতলী মাদরাসায় মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামীদের সভাপতিত্বে কেরানীগঞ্জ-বিক্রমপুর অঞ্চলের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচি সফল করে দেশকে নাস্তিক-মুরতাদমুক্ত করা হবে। যে কোনো মূল্যে আগামী ৬ এপ্রিল লংমার্চ করা হবে। কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আমাদের এ আন্দোলনকে নস্যাত্ করা যাবে না। তিনি কোনো কোনো মিডিয়ার বাড়াবাড়ির নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমাদের এই ঈমানি আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য কিছু প্রচার মাধ্যম বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তৌহিদি জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এ আন্দোলন ঈমানি আন্দোলন। আমাদের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ইসলামপ্রিয় তৌহিদি জনতা শরিক হবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারা দেশের তৌহিদি জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। এ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে লক্ষ্যপানে পৌঁছাতে হলে আমাদের জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
সরকার যদি ৬ তারিখের লংমার্চে বাধা প্রদান করে, তাহলে আমাদের পূর্বঘোষিত লাগাতার হরতালসহ কঠিন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যদি এ আন্দোলন সরকার পতনের দিকে মোড় নেয়, তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
এসব সভা থেকে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর ও কেরানীগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ এলাকাগুলোয় চারটি আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটি অতি দ্রুত সময়ে থানা কমিটি গঠন করে কার্যক্রম ও আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সফল করার জন্য সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সভাগুলোতে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সদস্যসচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবীব, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, ইসলামী ঐক্যজোটের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা আবুল কাসেম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা নোমান মাজহারী প্রমুখ।
প্রথম আলো সহ বিভিন্ন মিডিয়ার মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ : হেফাজতে ইসলাম নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় মিথ্যা সংবাদ প্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে ওলামায়ে কেরামের একটি প্রতিনিধি দল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাতে বৈঠক করেছেন বলে দৈনিক প্রথম আলো সহ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে এই মিথ্যা ও উদ্ভট সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রথম আলো পত্রিকায় বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে একজন কর্মকর্তার সূত্র প্রকাশ করে ওই খবরকে আবারও প্রকাশ করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলছি, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক অথবা তার সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেও করতে পারেন। কিন্তু ওই দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের কোনো বৈঠকের খবর সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত ও উদ্দেশ্যমূলক জঘন্য মিথ্যাচার। মূলত হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই একটি গোষ্ঠী উঠে-পড়ে লেগেছে। প্রকাশিত সংবাদটি এরই ধারাবাহিকতার একটি অংশ বলে আমরা মনে করি।
একই সঙ্গে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় ৩০ মার্চ হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ নিয়ে প্রকাশিত খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাতে এই লংমার্চের নেপথ্য অর্থায়নে জামায়াত, সমর্থনে বিএনপি, কওমি শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে অভিভাবকরা শঙ্কিত-এই ধরনের নানা কল্পকাহিনী প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবেদনটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
ইসলামী দলগুলোর মতবিনিময় সভা : ইসলামী দলগুলোর আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেছেন, আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচি নিয়ে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না। সরকার ইসলামী জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে তা মোকাবিলা করার শক্তি সরকারের নেই। দেশপ্রেমী ও ইসলামপ্রিয় জনতা যে কোনো মূল্যে ঘোষিত কর্মসূচি সফল করে আওয়ামী লীগ সরকারের সব ধরনের অপকর্ম, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং আত্মস্বীকৃত নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগারদের ষড়যন্ত্রের সমূচিত জবাব দেবে। তিনি সরকারের দেশ, জাতিসত্তা ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং আত্মস্বীকৃত নাস্তিক-মুরতাদদের অপতত্পরতা মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখসহ সব স্তরের জনতাকে দুর্বার আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি গতকাল লালবাগ কেল্লার মোড়ে নিজ কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। হেফাজতে ইসলামের ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্বশীল ও ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ক মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কিশোরগঞ্জী, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মুফতি মহীউদ্দীন, মুফতি মাওলানা জসিম উদ্দীন ও মুফতি মাওলানা আবুল কাসেম কাসেমী প্রমুখ।
খেলাফত মজলিস: খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকামুখী লংমার্চ সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসলাম নাস্তিক-মুরতাদ ও তাদের দোসররা এদেশে থেকে ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতি উচ্ছেদের লক্ষ্যে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে নানামুখী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু হীন অপপ্রচার আর ষড়যন্ত্র চালিয়ে লংমার্চ কর্মসূচি বানচাল করা যাবে না। তাওহিদি জনতার লংমার্চে বাধা দিলে সরকারের পতন ঘটবে।
নেজামে ইসলাম পার্টি : হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় যেভাবে এদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঠিক তেমনিভাবে ইসলামের হেফাজতের জন্য হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে ৬ এপ্রিলের লংমার্চে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তিনি গতকাল রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ইসলামী ছাত্রসমাজের এক আলোচনা সভায় একথা বলেন। কে এফ এন আবদুল জলিল কাদেরীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ, আবু তালহা, মাওলানা ফাহিমুল হাসান প্রমুখ।
নেজামে ইসলাম পর্টির অপর গ্রুপের নেতারা ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত আল্লামা আহম্মদ শফী সাহেবের নেতৃত্বে লংমার্চ সফল করার জন্য দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
লংমার্চে বাধা দিলে হরতালসহ কঠিন কর্মসূচি দিতে আলেম ওলামা ও দেশের সর্বস্তরের জনগণ বাধ্য হবে বলেও জানান তারা। গতকাল বিকালে রাজধানীতে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় কাউন্সিল সফল করার লক্ষ্যে এক প্রস্তুতি সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল করিম ও অধ্যাপক মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, প্রচার সচিব শওকত আমীন প্রমুখ।
এদিকে ৬ এপ্রিল লংমার্চ সফলের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ইমাম সমাজ, ইসলামী গণজাগরণ পরিষদের সভাপতি আবদুর রব আব্বাসী, খেলাফত যুব আন্দোলনে সভাপতি মুফতি ফখরুল ইসলাম, ইমাম খতিব ঐক্য পরিষদ সভাপতি মুফতি সুলতান আহমদ প্রমুখ। এ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দেশব্যাপী হেফাজত নেতাদের গণসংযোগ : আল্লাহ ও রাসুলের অবমাননাকারী শাহবাগি নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগারদের শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ৬ এপ্রিল সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর শুরু করেছে। গতকাল চট্টগ্রাম থেকে হেফাজত প্রতিনিধিরা সিলেট, রাজশাহী, যশোর, খুলনা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় সফর শুরু করেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলছে লংমার্চের ব্যাপক প্রস্তুতি। গতকাল চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মালেক হালিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী এবং মাওলানা ফয়সাল বিন তাজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। প্রতিনিধি দলে হেফাজত নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের নেতা ও দায়িত্বশীল রয়েছেন।
এদিকে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা হাবিবুল হক বাবুর নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধি দল বরিশালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মুফতি আবু সৈয়দ, মাওলানা সাখাওয়াতুল্লাহ, মাওলানা আনোয়ার হোসাইন নানুপরীর নেতৃত্বে আরেকটি দল যশোর ও খুলনা অভিমুখে সফর শুরু করে।
কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সফরের নেতৃত্বে রয়েছেন, হেফাজতে ইসলাম-এর যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মুঈনুদ্দিন রূহী, মুফতি হারুন ইজহারসহ বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল। এদিকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় সফর করছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আরেকটি প্রতিনিধি দল। যাদের মধ্যে মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা কারি জহির, মাওলানা নুরুল আলম চৌধুরী, মাওলানা মকসুদ, আনোয়ার হোসাইন রব্বানী প্রমুখ রয়েছেন।
এছাড়া গতকাল পটিয়া, কর্ণফুলী, পশ্চিম পটিয়া ও আনোয়ারা থানার বিভিন্ন জায়গায় লংমার্চের প্রস্তুতি উপলক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ করেন হেফাজত ইসলামের দক্ষিণ জেলা ও পটিয়া থানা নেতারা।
এদিকে লংমার্চ সামনে রেখে মাওলানা ইয়াসিনকে সভাপতি, হাফেজ সায়েমুল্লাহকে সহ-সভাপতি ও হাফেজ সাইফুল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট হাটহাজারী থানার উত্তর মাদার্শা শাখা গঠিত হয়েছে।
সিলেট ওলামা সমাবেশ : শাহবাগি নাস্তিকদের সর্মথনকারী উলায়ে ছু ফরিদ মাসুদকে সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে হেফাজত নেতারা বলেন, আল্লামা আহমদ শফীর কর্মসূচি বানচালের জন্য সিলেটে কিছুসংখ্যক উঠে-পড়ে লেগেছে। গতকাল বিকালে সিলেট রেজিস্টারি ময়দানে নাস্তিক ব্লগারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সফল করার লক্ষ্যে মহানগর হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত ‘শানে রাসুল (সা.) সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রিন্সিপাল মাওলানা নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী ও মাওলানা আসলাম হোসাইন রহমানীর যৌথ পরিচালনায় ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মালিক হালিম।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা নুরে আলম হামিদী, নেজামে ইসলাম পার্টির অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিব, মাওলানা শাহ্ আশরাফ আলী মিয়াজানি, মাওলানা মাসুক আহমদ ছালামি প্রমুখ।
এদিকে হেফাজতে ইসলাম সিলেটের উদ্যোগে গতকাল সিলেট অডিটরিয়ামে আয়োজিত অপর এক বিশাল উলামা সুধী সমাবেশ হয়। সিলেট জেলা সভাপতি মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সেক্রেটারি মাওলানা রেজাউল করিম জালালীর পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন-হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মালিক হালিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামেয়া মাদানীয় কাজিরবাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান, আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শায়েখ জিয়াউদ্দিন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি জসিম উদ্দিন, আজিজুল হক ইসলামাবাদী মাওলানা ফয়সল।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-হেফাজতে ইসলাম সিলেটের সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুল বাছিত বরকতপুরী, মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মাওলানা খলিলুর রহমান, আলহাজ শামসুদ্দিন বানীগ্রামী, মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানীগঞ্জী, মাওলানা মুখলিছুর রহমান রাজাগঞ্জী, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, হাফিজ সৈয়দ শামীম আহমদ, কারি সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল আলম হামিদী, আবদুল হান্নান তাফাদার, মাওলানা গাজী রহমতুল্লাহ, মাওলানা আবদুল বাছির।
গতকাল বাদ জোহর সোবহানীঘাট হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ কামিল মাদরাসা হলে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর উদ্যোগে ‘বিভিন্ন ব্লগে মহানবী (সা.)-এর অবমাননা ও ইসলামী শিক্ষা তাহযীব-তমদ্দুনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয়’ শীর্ষক প্রতিনিধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কুতুবদিয়ায় প্রস্তুতি সম্পন্ন : কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় হেফাজতে ইসলামের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, এখনই সময় ঈমান আকিদা রক্ষার আন্দোলনে শরিক হওয়ার। তাই মাহমুদুর রহমান যেমন তার সত্য লেখনীর মাধ্যমে ঈমান রক্ষার আন্দোলনে শরিক হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তেমনিভাবে ইসলাম ও ঈমান রক্ষার আন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সংগঠনের সভাপতি মাওলানা এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মিসবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের উপদেষ্টা মাওলানা আবু তাহের, সামাজিক সংগঠন পরিবর্তনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক এইচএম এহসান, মাওলানা আবদুচ্ছালাম, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা ওসমান গণি, মাওলানা আজিজ প্রমুখ।
অযথা সময়ক্ষেপণ করে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে না দিয়ে ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার ঈমানি দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির এবং উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গতকাল বিকালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা শফীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে এলে তিনি তাদের মাধ্যমে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।Read more
এ সময় আল্লামা শফী আগামী ৬ এপ্রিল ঘোষিত ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করতে তার সংগঠনের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে বলেন, ঈমান-আকিদা, ইসলাম ও মুসলমানদের ইজ্জত রক্ষার জন্য দেশের হাজার হাজার আলেম এবং তৌহিদি জনতা প্রয়োজনে শহীদ হতে প্রস্তুত আছেন, তবুও ঈমান রক্ষার এসব দাবি আদায় থেকে পিছু হটব না। এদিকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে লংমার্চ সফলে প্রস্তুতিমূলক সভা-সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
আল্লামা শফীর সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষাত্ : গতকাল বিকাল ৫টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এমএ মান্নান, জেলা পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে আসেন। তারা মাদরাসার মহাপরিচালক পীরে কামেল আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও হেফাজতে ইসলামের ৬ এপ্রিল লংমার্চ কর্মসূচি নিয়ে মতবিনিময় করেন। এসময় কালক্ষেপণ না করে ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার ঈমানি দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আল্লামা শফী। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিতে কোনো অস্পষ্টতা নেই। এ নিয়ে কোনো অপব্যাখ্যা ও অপপ্রচারেরও সুযোগ নেই। আমাদের অন্যান্য দাবির পাশাপাশি দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাস করার দাবিও রয়েছে।
মতবিনিময়ের সময় উপস্থিত ছিলেন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি হুমায়ুন কবীর, মাওলানা আনাস মাদানী, মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমদ, আল্লামা আহমদ শফীর পিএস মাওলানা শফিউল আলম প্রমুখ।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বলেন, আমরা জনসমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন ও পত্রিকায় বিবৃতির মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো বার বার তুলে ধরেছি। আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে—সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন পাস, পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগ ও সাইটে মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব অবমাননাকর জঘন্য কটূক্তিকর প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, সেসব বন্ধ করে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্লগ, ব্লগার ও পোস্টদাতাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা, পাঠ্যবইয়ে সব ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য ও উদ্ধৃতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে অবিলম্বে সংশোধনী প্রকাশ, সব অনাচার-ব্যভিচার ও অশ্লীলতা এবং নাটক-সিনেমায় ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় নিদর্শন তথা দাড়ি-টুপি, হিজাব ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে অবমাননা রোধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দান, শিক্ষার সব স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি।
আল্লামা শফী বলেন, আমাদের সব দাবিই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সরকার দেশ, জনগণ ও মুসলমানদের স্বার্থে আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিলেই চলমান আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। আমরা বার বার বলে আসছি, আমরা ক্ষমতার অংশ হতে চাই না। জনসাধারণের ঈমান-আকিদা ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদেই এ প্রতিবাদ কর্মসূচি।
এ সময় জেলা প্রশাসক এমএ মান্নান হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন গ্রুপ ঢুকে পড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, আমরা সরকারের কাছে ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার অরাজনৈতিক ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নিলে লংমার্চ কর্মসূচির প্রয়োজন হতো না। আমাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এই ন্যায্য দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা অবনতির ভয় ও অমূলক প্রশ্ন তোলা চরম দুঃখজনক। গণতান্ত্রিক দেশে জনসাধারণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। আল্লামা শাহ আহমদ শফী দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দেন যে, ঈমান-আকিদা, ইসলাম ও মুসলমানদের ইজ্জত রক্ষার জন্য শত শত আলেম ও তৌহিদি জনতা প্রয়োজনে শহীদ হতে প্রস্তুত, তবুও ন্যায্য দাবি আদায়ে পিছপা হবে না।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে বলেন, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে জনমনোভাব, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বোঝাতে। হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ব্যাপারেও তারা অবগত বলে জানান। মতবিনিময় শেষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কাছে বিশেষ দোয়া করতে বলেন।
রাজধানীতে হেফাজতের মতবিনিময় : নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আল্লামা আহমদ শফী ঘোষিত ৬ এপ্রিল ঢাকামুখী লংমার্চ সফল করতে ব্যাপক তত্পরতা চলছে রাজধানীসহ সারা দেশে। গণসংযোগ ও প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মাদরাসায় মতবিনিময় করে। এসময় বেশ কিছু আঞ্চলিক কমিটি গঠিত হয়। এদিকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ৬ এপ্রিল লংমার্চ সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সকাল ৮টায় মিরপুর আরজাবাদ মাদরাসায় প্রিন্সিপাল মাওলানা মোস্তফা আযাদের সভাপতিত্বে মিরপুর অঞ্চল, বেলা ১১টায় মোহাম্মদপুর জামেয়া রাহমানিয়ায় জামিয়া মোহাম্মদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল কালামের সভাপতিত্বে মোহাম্মদপুরের অঞ্চল, বাদ জোহর ফরিদাবাদ মাদরাসায় মাওলানা আবদুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সূত্রাপুর অঞ্চল এবং বাদ আসর মুন্সীগঞ্জে নিমতলী মাদরাসায় মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামীদের সভাপতিত্বে কেরানীগঞ্জ-বিক্রমপুর অঞ্চলের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচি সফল করে দেশকে নাস্তিক-মুরতাদমুক্ত করা হবে। যে কোনো মূল্যে আগামী ৬ এপ্রিল লংমার্চ করা হবে। কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আমাদের এ আন্দোলনকে নস্যাত্ করা যাবে না। তিনি কোনো কোনো মিডিয়ার বাড়াবাড়ির নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমাদের এই ঈমানি আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য কিছু প্রচার মাধ্যম বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তৌহিদি জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এ আন্দোলন ঈমানি আন্দোলন। আমাদের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ইসলামপ্রিয় তৌহিদি জনতা শরিক হবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারা দেশের তৌহিদি জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। এ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে লক্ষ্যপানে পৌঁছাতে হলে আমাদের জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
সরকার যদি ৬ তারিখের লংমার্চে বাধা প্রদান করে, তাহলে আমাদের পূর্বঘোষিত লাগাতার হরতালসহ কঠিন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যদি এ আন্দোলন সরকার পতনের দিকে মোড় নেয়, তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
এসব সভা থেকে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর ও কেরানীগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ এলাকাগুলোয় চারটি আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটি অতি দ্রুত সময়ে থানা কমিটি গঠন করে কার্যক্রম ও আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সফল করার জন্য সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সভাগুলোতে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সদস্যসচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবীব, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, ইসলামী ঐক্যজোটের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা আবুল কাসেম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা নোমান মাজহারী প্রমুখ।
প্রথম আলো সহ বিভিন্ন মিডিয়ার মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ : হেফাজতে ইসলাম নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় মিথ্যা সংবাদ প্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে ওলামায়ে কেরামের একটি প্রতিনিধি দল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাতে বৈঠক করেছেন বলে দৈনিক প্রথম আলো সহ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে এই মিথ্যা ও উদ্ভট সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রথম আলো পত্রিকায় বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে একজন কর্মকর্তার সূত্র প্রকাশ করে ওই খবরকে আবারও প্রকাশ করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলছি, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক অথবা তার সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেও করতে পারেন। কিন্তু ওই দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের কোনো বৈঠকের খবর সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত ও উদ্দেশ্যমূলক জঘন্য মিথ্যাচার। মূলত হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই একটি গোষ্ঠী উঠে-পড়ে লেগেছে। প্রকাশিত সংবাদটি এরই ধারাবাহিকতার একটি অংশ বলে আমরা মনে করি।
একই সঙ্গে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় ৩০ মার্চ হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ নিয়ে প্রকাশিত খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাতে এই লংমার্চের নেপথ্য অর্থায়নে জামায়াত, সমর্থনে বিএনপি, কওমি শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে অভিভাবকরা শঙ্কিত-এই ধরনের নানা কল্পকাহিনী প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবেদনটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
ইসলামী দলগুলোর মতবিনিময় সভা : ইসলামী দলগুলোর আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেছেন, আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচি নিয়ে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না। সরকার ইসলামী জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে তা মোকাবিলা করার শক্তি সরকারের নেই। দেশপ্রেমী ও ইসলামপ্রিয় জনতা যে কোনো মূল্যে ঘোষিত কর্মসূচি সফল করে আওয়ামী লীগ সরকারের সব ধরনের অপকর্ম, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং আত্মস্বীকৃত নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগারদের ষড়যন্ত্রের সমূচিত জবাব দেবে। তিনি সরকারের দেশ, জাতিসত্তা ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং আত্মস্বীকৃত নাস্তিক-মুরতাদদের অপতত্পরতা মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখসহ সব স্তরের জনতাকে দুর্বার আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি গতকাল লালবাগ কেল্লার মোড়ে নিজ কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। হেফাজতে ইসলামের ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্বশীল ও ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ক মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কিশোরগঞ্জী, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মুফতি মহীউদ্দীন, মুফতি মাওলানা জসিম উদ্দীন ও মুফতি মাওলানা আবুল কাসেম কাসেমী প্রমুখ।
খেলাফত মজলিস: খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকামুখী লংমার্চ সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসলাম নাস্তিক-মুরতাদ ও তাদের দোসররা এদেশে থেকে ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতি উচ্ছেদের লক্ষ্যে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে নানামুখী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু হীন অপপ্রচার আর ষড়যন্ত্র চালিয়ে লংমার্চ কর্মসূচি বানচাল করা যাবে না। তাওহিদি জনতার লংমার্চে বাধা দিলে সরকারের পতন ঘটবে।
নেজামে ইসলাম পার্টি : হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় যেভাবে এদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঠিক তেমনিভাবে ইসলামের হেফাজতের জন্য হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে ৬ এপ্রিলের লংমার্চে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তিনি গতকাল রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ইসলামী ছাত্রসমাজের এক আলোচনা সভায় একথা বলেন। কে এফ এন আবদুল জলিল কাদেরীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ, আবু তালহা, মাওলানা ফাহিমুল হাসান প্রমুখ।
নেজামে ইসলাম পর্টির অপর গ্রুপের নেতারা ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত আল্লামা আহম্মদ শফী সাহেবের নেতৃত্বে লংমার্চ সফল করার জন্য দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
লংমার্চে বাধা দিলে হরতালসহ কঠিন কর্মসূচি দিতে আলেম ওলামা ও দেশের সর্বস্তরের জনগণ বাধ্য হবে বলেও জানান তারা। গতকাল বিকালে রাজধানীতে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় কাউন্সিল সফল করার লক্ষ্যে এক প্রস্তুতি সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল করিম ও অধ্যাপক মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, প্রচার সচিব শওকত আমীন প্রমুখ।
এদিকে ৬ এপ্রিল লংমার্চ সফলের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ইমাম সমাজ, ইসলামী গণজাগরণ পরিষদের সভাপতি আবদুর রব আব্বাসী, খেলাফত যুব আন্দোলনে সভাপতি মুফতি ফখরুল ইসলাম, ইমাম খতিব ঐক্য পরিষদ সভাপতি মুফতি সুলতান আহমদ প্রমুখ। এ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দেশব্যাপী হেফাজত নেতাদের গণসংযোগ : আল্লাহ ও রাসুলের অবমাননাকারী শাহবাগি নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগারদের শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ৬ এপ্রিল সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর শুরু করেছে। গতকাল চট্টগ্রাম থেকে হেফাজত প্রতিনিধিরা সিলেট, রাজশাহী, যশোর, খুলনা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় সফর শুরু করেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলছে লংমার্চের ব্যাপক প্রস্তুতি। গতকাল চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মালেক হালিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী এবং মাওলানা ফয়সাল বিন তাজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। প্রতিনিধি দলে হেফাজত নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের নেতা ও দায়িত্বশীল রয়েছেন।
এদিকে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা হাবিবুল হক বাবুর নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধি দল বরিশালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মুফতি আবু সৈয়দ, মাওলানা সাখাওয়াতুল্লাহ, মাওলানা আনোয়ার হোসাইন নানুপরীর নেতৃত্বে আরেকটি দল যশোর ও খুলনা অভিমুখে সফর শুরু করে।
কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সফরের নেতৃত্বে রয়েছেন, হেফাজতে ইসলাম-এর যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মুঈনুদ্দিন রূহী, মুফতি হারুন ইজহারসহ বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল। এদিকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় সফর করছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আরেকটি প্রতিনিধি দল। যাদের মধ্যে মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা কারি জহির, মাওলানা নুরুল আলম চৌধুরী, মাওলানা মকসুদ, আনোয়ার হোসাইন রব্বানী প্রমুখ রয়েছেন।
এছাড়া গতকাল পটিয়া, কর্ণফুলী, পশ্চিম পটিয়া ও আনোয়ারা থানার বিভিন্ন জায়গায় লংমার্চের প্রস্তুতি উপলক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ করেন হেফাজত ইসলামের দক্ষিণ জেলা ও পটিয়া থানা নেতারা।
এদিকে লংমার্চ সামনে রেখে মাওলানা ইয়াসিনকে সভাপতি, হাফেজ সায়েমুল্লাহকে সহ-সভাপতি ও হাফেজ সাইফুল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট হাটহাজারী থানার উত্তর মাদার্শা শাখা গঠিত হয়েছে।
সিলেট ওলামা সমাবেশ : শাহবাগি নাস্তিকদের সর্মথনকারী উলায়ে ছু ফরিদ মাসুদকে সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে হেফাজত নেতারা বলেন, আল্লামা আহমদ শফীর কর্মসূচি বানচালের জন্য সিলেটে কিছুসংখ্যক উঠে-পড়ে লেগেছে। গতকাল বিকালে সিলেট রেজিস্টারি ময়দানে নাস্তিক ব্লগারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ৬ এপ্রিলের লংমার্চ সফল করার লক্ষ্যে মহানগর হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত ‘শানে রাসুল (সা.) সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রিন্সিপাল মাওলানা নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী ও মাওলানা আসলাম হোসাইন রহমানীর যৌথ পরিচালনায় ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মালিক হালিম।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা নুরে আলম হামিদী, নেজামে ইসলাম পার্টির অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিব, মাওলানা শাহ্ আশরাফ আলী মিয়াজানি, মাওলানা মাসুক আহমদ ছালামি প্রমুখ।
এদিকে হেফাজতে ইসলাম সিলেটের উদ্যোগে গতকাল সিলেট অডিটরিয়ামে আয়োজিত অপর এক বিশাল উলামা সুধী সমাবেশ হয়। সিলেট জেলা সভাপতি মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সেক্রেটারি মাওলানা রেজাউল করিম জালালীর পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন-হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মালিক হালিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামেয়া মাদানীয় কাজিরবাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান, আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শায়েখ জিয়াউদ্দিন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি জসিম উদ্দিন, আজিজুল হক ইসলামাবাদী মাওলানা ফয়সল।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-হেফাজতে ইসলাম সিলেটের সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুল বাছিত বরকতপুরী, মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মাওলানা খলিলুর রহমান, আলহাজ শামসুদ্দিন বানীগ্রামী, মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানীগঞ্জী, মাওলানা মুখলিছুর রহমান রাজাগঞ্জী, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, হাফিজ সৈয়দ শামীম আহমদ, কারি সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল আলম হামিদী, আবদুল হান্নান তাফাদার, মাওলানা গাজী রহমতুল্লাহ, মাওলানা আবদুল বাছির।
গতকাল বাদ জোহর সোবহানীঘাট হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ কামিল মাদরাসা হলে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর উদ্যোগে ‘বিভিন্ন ব্লগে মহানবী (সা.)-এর অবমাননা ও ইসলামী শিক্ষা তাহযীব-তমদ্দুনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয়’ শীর্ষক প্রতিনিধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কুতুবদিয়ায় প্রস্তুতি সম্পন্ন : কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় হেফাজতে ইসলামের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, এখনই সময় ঈমান আকিদা রক্ষার আন্দোলনে শরিক হওয়ার। তাই মাহমুদুর রহমান যেমন তার সত্য লেখনীর মাধ্যমে ঈমান রক্ষার আন্দোলনে শরিক হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তেমনিভাবে ইসলাম ও ঈমান রক্ষার আন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সংগঠনের সভাপতি মাওলানা এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মিসবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের উপদেষ্টা মাওলানা আবু তাহের, সামাজিক সংগঠন পরিবর্তনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক এইচএম এহসান, মাওলানা আবদুচ্ছালাম, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা ওসমান গণি, মাওলানা আজিজ প্রমুখ।