
জীবনানন্দ দাশের ‘কি কথা তার সাথে, তাহার সাথে’ পংক্তির মতো আগামী নির্বাচন নিয়ে ‘কি তথ্য আছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের কাছে’ তা জানার ব্যকুলতার যেন শেষ নেই। যারা রাজনীতি করেন এবং রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন তাদের প্রায় সবার কাছে একটি জিজ্ঞাসা সজিব ওয়াজেদ জয় এমন কি তথ্য জানেন যা আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনবে? মানুষের মধ্যে এ কৌতুহল আরো বাড়িয়ে দিয়েছে টেলিভিশনগুলোর টকশো। অধিকাংশ চ্যানেলে জয়ের ‘গোপন তথ্য’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
টেলিভিশনের টকশোগুলোর আলোচনায় সরকারদলীয় এমপি রনি গ্রেফতার এবং কারাগারের খবরকে ছাপিয়ে গেছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ‘গোপন তথ্য’ কাহিনী। বিএনপির নেতারা দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়ের কাছে কারচুপি, নীলনকশা ও একতরফা নির্বাচনের তথ্য রয়েছে। যা তারা আগামী নির্বাচনে প্রয়োগ করবেন। দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আবার ক্ষমতায় আসার নীল নকশারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। জয় মূলত হাটেহাড়ি ভেঙে দিয়েছেন। বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়ের ‘আমার কাছে তথ্য আছে’ ইস্যু করে ‘রাজনীতি’ করলেও দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষ, বিশিষ্টজনরা জানার জন্য উদগ্রিব হয়েছেন কি তথ্য থাকতে পারে জয়ের কাছে। যুবলীগের এক ইফতার মাহফিলে সজিব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। ওরা জরিপ করেন। আর আমি জরিপ করাই।’ সজিব ওয়াজেদ জয় আরো কিছু কথা বলেছেন ওই অনুষ্ঠানে। এ বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারের পর থেকে টক অব দ্য পলিটিক্স হয়ে ওঠেন তিনি। রাজনৈতিক কারণেই তারেক রহমান ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যকে দেশের মানুষ হেলাফেলা করতে চায় না। আওয়ামী লীগ আবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পিছনে কি গোপন তথ্য তার (জয়) কাছে থাকতে পারে? ক্ষমতায় আসার পর দলবাজি, অনিয়ম, আইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখানো এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ক্ষমতাসীন দলকে মানুষ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে? ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা প্রতিপক্ষ প্রার্থীর চেয়ে ‘জনপ্রিয়’ হওয়ার পরও ভোটে ভরাডুবি ঘটেছে। তারপরও সজীব ওয়াজেদ জয় যে ‘গোপন তথ্যের দাবি’ করেছেন তা রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের এ ধরনের বক্তব্যে অবাক হলেও সাধারণ মানুষ জানতে চায় কি তথ্য রয়েছে জয়ের গোপন ভান্ডারে। গতকাল এক টকশোতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জয়ের এ ধরনের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে বিএনপি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি জয়ের গোপন তথ্যকে নীল নকশা হিসেবে অবিহিত করেছেন। তবে প্রখ্যাত সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, বয়সে তরুণ জয় রাজনীতিতে নেই। তিনি এধরনের কথা বলেন কিভাবে? তার কাছে কি তথ্য থাকতে পারে তা দেশবাসীকে জানানো উচিত। তবে তিনি এ বক্তব্যকে তেমন গুরুত্ব না দেয়ার কথা বলেন। প্রখ্যাত এই সাংবাদিক ‘তেমন গুরুত্ব’ না দিলেও দেশের মানুষ জয়ের গোপন তথ্যকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। সে কারণে হাটে-মাঠে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে, অফিস আদালতে সবখানে জয়ের গোপন তথ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তর্ক-বিতর্কের ঘটনাও ঘটছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন হয়তো কোনো নীল নকশার অংশ হিসেবে দেশের ৯০% ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করলেও সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। আবার জয়ের এ বক্তব্য ‘কথার কথাও’ হতে পারে। তবে সজিব ওয়াজেদ জয়ের উচিত তার কাছে থাকা তথ্যটি জনসম্মুখে প্রকাশ করে মানুষের কৌতুহলের অবসান ঘটানো।