ইসলামের নামে কেউ যাতে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি ও শিশুদের ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মসজিদ-মাদরাসায় নজরদারি বাড়াতে হবে। ধর্মীয় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে ডিসিদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে শাপলা চত্বরে হেফাজত, জামায়াত আর বিএনপি মিলে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, ছোট ছোট শিশুদের তারা ওখানে নিয়ে এসেছে,
এ ধরনের দুষ্টকাজে মাদরাসার শিশুদের যাতে ব্যবহার করতে না পারে—সে ব্যাপারে ব্যাপক গণসচেতনতা সষ্টি করতে হবে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে শিশুদের নিয়ে আসার অভিযোগ তুললেও শাহবাগের কর্মসূচিতে দিনের পর দিন বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় নিয়ে আসা হলেও তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অসাংবিধানিক সরকার আর যাতে না আসতে পারে, তার জন্য জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, মিলিটারি, কোজি মিলিটারি এবং মিলিটারি ব্যাকড সরকারের যাঁতাকলে মানুষ নিষ্পেষিত হয়েছে। আর যেন দেশে কোনো অসাংবিধানিক শাসক না আসতে পারে, সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আগামী সাধারণ নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে সংসদের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কোনো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করিনি। জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এক জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। জনগণ ভুল করতে পারে। বিভ্রান্ত হতে পারে। কাকে ভোট দিতে হবে—তা দিতে দিতে শিখবে। আমরা আর পেছনে ফিরে যেতে চাই না। জনগণ ভোট দিলে আছি। না হলে নাই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কীভাবে নির্বাচন হয়, তা দেখতেও জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি
তিনি দাবি করেন, আমাদের দেশে কখনই ক্ষমতার হস্তান্তর সুষ্ঠু হয়নি। পঁচাত্তরে হত্যা-ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল শুরু হলো। তারপর এভাবেই চলল। ২০০১ সালেই কেবল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে।
ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা কারও প্রতি কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না। আপনাদের সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারদের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা দূর করতে এবং সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জেলা প্রশাসকরা সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধের কাজ করেন। তারা জনগণের জীবনমান উন্নত করতে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন।
বর্তমান সরকারের সময়ে জেলা প্রশাসকরা সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা এই চার বছর কর্মক্ষেত্রে যতটা সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন, অতীতে তা পারেননি।
ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণের ইচ্ছার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবার পারলাম না; আগামীতে এলে জেলা ও উপজেলার ক্ষমতা নির্দিষ্ট করব এবং জেলা ও উপজেলার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করব।
প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে ফ্রন্ট ডেস্ক, জনগণের শুনানির দিন ও জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে ওয়েব পোর্টাল চালু রাখার কথা বলেন। এ সময় তিনি তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
সরকার অনেক ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে—এমন দাবি করে তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী আগামী নির্বাচনের আগেই সরকারের অবশিষ্ট অঙ্গীকারগুলোও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের ছয়টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। বাকি রায়ও পাব। এই রায় ইনশাল্লাহ বাস্তবায়ন হবে। আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে ভূমিরা পালনে জেলা প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আপনাদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ১৭টি বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—তৃণমূলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা, সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষকে হয়রানি বন্ধ, নারী এবং শিশু নির্যাতন ও পাচার, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, যৌতুক, ইভটিজিং ও বাল্যবিয়ের মতো ‘সামাজিক ব্যাধির’ বিস্তার রোধ, প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণ, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, শিক্ষার সব স্তরে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তার ও মানোন্নয়ন, পণ্যের চাহিদা, মজুত ও সরবরাহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, রোজায় পণ্য সরবরাহে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা কঠোরভাবে দমন, ভূমি প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ, স্থানীয় সম্পদ এবং সম্ভাবনার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমবায়ে উত্সাহিত করা, পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে নির্দেশনা অনুসরণ এবং সাধারণ মানুষের সুবিচার প্রাপ্তি নিশ্চিতে গ্রাম আদালতকে কার্যকর করা। এছাড়া সব জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূঞা বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে উন্মুক্তপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রশাসকরা দায়িত্ব পালনে তাদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এর বেশ কিছু বিষয় সমাধানে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এলাকায় বিভিন্ন বিদেশি এনজিওর অবৈধ তত্পরতা বন্ধের জন্যও ডিসিদের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন। ডিসিদের পক্ষ থেকে দাবি উঠলেও প্রধানমন্ত্রী জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পেতে ডিসিদের প্রস্তাবের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নীলফামারীর সৈয়দপুরের উত্তরা ইপিজেডকে রেল জংশনের সঙ্গে সংযুক্ত, সেখানে পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং ময়মনসিংহকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক : ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় কর্মঅধিবেশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আলোচনায় জেলা প্রশাসকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অশ্লীলতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিঘ্নিত করা, মিথ্যা গুজব রটানো, বানোয়াট স্থির ও ভিডিওচিত্র এবং সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার বৃদ্ধি পাওয়ায় সাইবার নিয়ন্ত্রণ আইনটি যুগোপযোগী করে একে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এ তফসিলভুক্ত করার দাবি জানান।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার জানান, মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এর আওতায় কোনো বিধিমালা না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিধিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই নীতিমালা জারি করা হবে।
সম্মেলনে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক জানান, সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসীদের দখলে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এর ফলে দুর্গম পার্বত্য এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বান্দরবানের সাঙ্গু, মাতামুহুরী এবং বাকখালী নদীপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড স্টেশন পতেঙ্গা, সাঙ্গু ও মহেশখালীতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এ তিনটি স্টেশনকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক : সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশনে ডিসিরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতারও দাবি জানিয়েছেন।
অধিবেশন শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নানা হস্তক্ষেপ হয়। আমাদের দেশে ক্ষমতাবানরা হস্তক্ষেপ করেন, স্থানীয়রা হস্তক্ষেপ করেন, এতে সমস্যা হয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানো প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সেটা অনেকাংশে কমিয়ে এনেছি। আরও কমিয়ে আনা হবে। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রশ্ন ছিল যেন সেখানে উপযুক্ত লোক নিয়োগ হয়। সেটা উন্নত হয়েছে। তবে আরও উন্নত করার জন্য তারা তাগাদা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ কাজের সঠিক মান নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকি জোরদার করতে হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসকরা ঝুঁঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় : জেলা প্রশাসকরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষমতা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম জানিয়েছেন, মূলত জুডিশিয়ারিকে সাহায্য করার জন্যই জেলা প্রশাসকরা সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষমতা চেয়েছেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ ক্ষমতা দেয়া হলে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের এক করা হবে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এ নিয়ে প্রশ্নই ওঠে না; জুডিশিয়াল তো সম্পূর্ণ আলাদা, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন আলাদা, জুডিশিয়াল পে-কমিশন আলাদা। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, পদ ও পদবি পরিবর্তনের কারণে মাঠ পর্যায়ে অসন্তোষের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে; এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়—সে ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।
তিনি বলেন, সরকারের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় প্রতিটি জায়গাতেই একটি টিম না হলে কাজ হয় না। এ টিমের মধ্যে গরমিল থাকলে জনগণ, সরকার ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সুতরাং টিম যাতে ভালোভাবে কাজ করে—সম্মেলনের শেষদিকে এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে মোট ৪০টি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ মোট সাতটি মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা হয়। আজ সকাল পৌনে ৯টায় ভূমি মন্ত্রণালয় দিয়ে দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শুরু হবে। আট অধিবেশনে মোট ১৭টি মন্ত্রণালয় নিয়ে এদিন আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামীকাল বাকি ১৬ মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা হবে।
এ ধরনের দুষ্টকাজে মাদরাসার শিশুদের যাতে ব্যবহার করতে না পারে—সে ব্যাপারে ব্যাপক গণসচেতনতা সষ্টি করতে হবে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে শিশুদের নিয়ে আসার অভিযোগ তুললেও শাহবাগের কর্মসূচিতে দিনের পর দিন বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় নিয়ে আসা হলেও তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অসাংবিধানিক সরকার আর যাতে না আসতে পারে, তার জন্য জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, মিলিটারি, কোজি মিলিটারি এবং মিলিটারি ব্যাকড সরকারের যাঁতাকলে মানুষ নিষ্পেষিত হয়েছে। আর যেন দেশে কোনো অসাংবিধানিক শাসক না আসতে পারে, সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আগামী সাধারণ নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে সংসদের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কোনো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করিনি। জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এক জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। জনগণ ভুল করতে পারে। বিভ্রান্ত হতে পারে। কাকে ভোট দিতে হবে—তা দিতে দিতে শিখবে। আমরা আর পেছনে ফিরে যেতে চাই না। জনগণ ভোট দিলে আছি। না হলে নাই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কীভাবে নির্বাচন হয়, তা দেখতেও জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি
তিনি দাবি করেন, আমাদের দেশে কখনই ক্ষমতার হস্তান্তর সুষ্ঠু হয়নি। পঁচাত্তরে হত্যা-ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল শুরু হলো। তারপর এভাবেই চলল। ২০০১ সালেই কেবল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে।
ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা কারও প্রতি কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না। আপনাদের সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারদের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা দূর করতে এবং সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জেলা প্রশাসকরা সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধের কাজ করেন। তারা জনগণের জীবনমান উন্নত করতে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন।
বর্তমান সরকারের সময়ে জেলা প্রশাসকরা সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা এই চার বছর কর্মক্ষেত্রে যতটা সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন, অতীতে তা পারেননি।
ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণের ইচ্ছার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবার পারলাম না; আগামীতে এলে জেলা ও উপজেলার ক্ষমতা নির্দিষ্ট করব এবং জেলা ও উপজেলার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করব।
প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে ফ্রন্ট ডেস্ক, জনগণের শুনানির দিন ও জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে ওয়েব পোর্টাল চালু রাখার কথা বলেন। এ সময় তিনি তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
সরকার অনেক ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে—এমন দাবি করে তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী আগামী নির্বাচনের আগেই সরকারের অবশিষ্ট অঙ্গীকারগুলোও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের ছয়টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। বাকি রায়ও পাব। এই রায় ইনশাল্লাহ বাস্তবায়ন হবে। আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে ভূমিরা পালনে জেলা প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আপনাদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ১৭টি বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—তৃণমূলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা, সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষকে হয়রানি বন্ধ, নারী এবং শিশু নির্যাতন ও পাচার, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, যৌতুক, ইভটিজিং ও বাল্যবিয়ের মতো ‘সামাজিক ব্যাধির’ বিস্তার রোধ, প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণ, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, শিক্ষার সব স্তরে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তার ও মানোন্নয়ন, পণ্যের চাহিদা, মজুত ও সরবরাহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, রোজায় পণ্য সরবরাহে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা কঠোরভাবে দমন, ভূমি প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ, স্থানীয় সম্পদ এবং সম্ভাবনার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমবায়ে উত্সাহিত করা, পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে নির্দেশনা অনুসরণ এবং সাধারণ মানুষের সুবিচার প্রাপ্তি নিশ্চিতে গ্রাম আদালতকে কার্যকর করা। এছাড়া সব জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূঞা বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে উন্মুক্তপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রশাসকরা দায়িত্ব পালনে তাদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এর বেশ কিছু বিষয় সমাধানে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এলাকায় বিভিন্ন বিদেশি এনজিওর অবৈধ তত্পরতা বন্ধের জন্যও ডিসিদের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন। ডিসিদের পক্ষ থেকে দাবি উঠলেও প্রধানমন্ত্রী জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পেতে ডিসিদের প্রস্তাবের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নীলফামারীর সৈয়দপুরের উত্তরা ইপিজেডকে রেল জংশনের সঙ্গে সংযুক্ত, সেখানে পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং ময়মনসিংহকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক : ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় কর্মঅধিবেশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আলোচনায় জেলা প্রশাসকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অশ্লীলতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিঘ্নিত করা, মিথ্যা গুজব রটানো, বানোয়াট স্থির ও ভিডিওচিত্র এবং সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার বৃদ্ধি পাওয়ায় সাইবার নিয়ন্ত্রণ আইনটি যুগোপযোগী করে একে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এ তফসিলভুক্ত করার দাবি জানান।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার জানান, মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এর আওতায় কোনো বিধিমালা না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিধিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই নীতিমালা জারি করা হবে।
সম্মেলনে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক জানান, সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসীদের দখলে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এর ফলে দুর্গম পার্বত্য এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বান্দরবানের সাঙ্গু, মাতামুহুরী এবং বাকখালী নদীপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড স্টেশন পতেঙ্গা, সাঙ্গু ও মহেশখালীতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এ তিনটি স্টেশনকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক : সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশনে ডিসিরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতারও দাবি জানিয়েছেন।
অধিবেশন শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নানা হস্তক্ষেপ হয়। আমাদের দেশে ক্ষমতাবানরা হস্তক্ষেপ করেন, স্থানীয়রা হস্তক্ষেপ করেন, এতে সমস্যা হয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানো প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সেটা অনেকাংশে কমিয়ে এনেছি। আরও কমিয়ে আনা হবে। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রশ্ন ছিল যেন সেখানে উপযুক্ত লোক নিয়োগ হয়। সেটা উন্নত হয়েছে। তবে আরও উন্নত করার জন্য তারা তাগাদা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ কাজের সঠিক মান নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকি জোরদার করতে হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসকরা ঝুঁঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় : জেলা প্রশাসকরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষমতা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম জানিয়েছেন, মূলত জুডিশিয়ারিকে সাহায্য করার জন্যই জেলা প্রশাসকরা সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষমতা চেয়েছেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ ক্ষমতা দেয়া হলে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের এক করা হবে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এ নিয়ে প্রশ্নই ওঠে না; জুডিশিয়াল তো সম্পূর্ণ আলাদা, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন আলাদা, জুডিশিয়াল পে-কমিশন আলাদা। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, পদ ও পদবি পরিবর্তনের কারণে মাঠ পর্যায়ে অসন্তোষের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে; এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়—সে ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।
তিনি বলেন, সরকারের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় প্রতিটি জায়গাতেই একটি টিম না হলে কাজ হয় না। এ টিমের মধ্যে গরমিল থাকলে জনগণ, সরকার ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সুতরাং টিম যাতে ভালোভাবে কাজ করে—সম্মেলনের শেষদিকে এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে মোট ৪০টি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ মোট সাতটি মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা হয়। আজ সকাল পৌনে ৯টায় ভূমি মন্ত্রণালয় দিয়ে দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শুরু হবে। আট অধিবেশনে মোট ১৭টি মন্ত্রণালয় নিয়ে এদিন আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামীকাল বাকি ১৬ মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা হবে।