গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘ধর্ম ব্যবসায়’ নেমেছে আওয়ামী লীগ। ইসলামের নামে রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ ধর্ম ব্যবসা বলে গালি দেয়। এছাড়া আওয়ামী জোটের অন্তর্ভুক্ত বাম দলগুলো ইসলামের নামে রাজনীতির গুরুতর বিরোধী। তারা ইসলামকে শুধু মসজিদ, মাদরাসা এবং মৃত্যুর পর জানাজা ও কবরস্থানে দেখতে চায়। এর বাইরে তারা ইসলাম দেখতে রাজি নয়। অথচ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইসলাম দরদী একটি প্রচারপত্রের সংবাদ প্রচারিত হয় ‘সুশীল’ গোত্রের প্রতিনিধিত্বকারী দৈনিক প্রথম আলোতে। গত ৩০ জুন পত্রিকাটির অনলাইনের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র’। এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ইসলাম-দরদী কর্মকাণ্ডের একটি ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। ২০টি উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ রয়েছে প্রচারপত্রটিতে। লক্ষ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভোট আদায় করা। প্রচারপত্রটির বিষয়ে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক কথা বলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং সংসদ সদস্যের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোট আদায় করতেই আওয়ামী লীগের এ কৌশল। আওয়ামী লীগ কতটা ইসলামপ্রিয় তা বোঝানোর একটি অপচেষ্টা রয়েছে প্রচারপত্রটিতে।
নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের ইসলামপ্রীতি নতুন কিছু নয়। তখন শেখ মুজিবুর রহমানকে মাওলানা বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। দলটির প্রধান শেখ হাসিনাকে আমরা মাথায় সাদা পট্টি বেঁধে হিজাব পরতে দেখেছি। শুধু কী তা-ই! মাথায় আরবীয় স্টাইলে হিজাবের পাশাপাশি হাতে তাসবীহ নিয়ে ঘুরতেন তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে হরহামেশাই আওয়ামী লীগের এমন ‘ধর্মব্যবসা’ দেখা যায়। গাজীপুরে হেফাজতে ইসলামকে নিয়েও টানাটানি করছে আওয়ামী লীগ। ভোটের জন্য হেফাজতে ইসলামকে দরকার। ভোটের বাইরে দরকার হয় শাহবাগি নাস্তিকদের। তখন নাস্তিকদের রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম নেতাকর্মীদের ওপর চলানো হয় গণহত্যা।
আওয়ামী লীগ যদি এতটাই ইসলাম-দরদী হয়ে থাকে, সংবিধানের মূলনীতি থেকে সব কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিধানটি বাদ দিল কেন! আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে তারা সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা। তখন কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা আওয়ামী লীগের মনে থাকে না। তখন অনুসরণ করা হয় তাদের মুরব্বি ভারতের সংবিধানকে। ভারতের সংবিধানেও মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ভারতেও ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন-নীপিড়ন। ভাঙা হয় চারশ’ বছরের পুরাতন বাবরি মসজিদ। গুজরাটে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় মুসলমানদের। এসব কিন্তু করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতার নামে। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতা করা।
ভারতের সংবিধান অনুসারী আওয়ামী লীগও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালায়। অতি সম্প্রতি হেফজাতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যার রক্তের দাগ এখনও মোছেনি। এখনও অনেক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন। আহতদের গায়ে আঘাতের ক্ষত এখনও শুকায়নি। আওয়ামী পুলিশ এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের আক্রমণে আহত হওয়া হেফাজত কর্মীরা এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। যশোরে নিহত হেফাজত কর্মীর জানাজায় তারাই বাধা দিয়েছে। হেফাজতের মহাসচিব বরেণ্য আলেম মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। রিমান্ডে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে তিনি শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।
আওয়ামী লীগ যত ইসলাম-দরদী প্রচারণা চালাক না কেন, মানুষ কেমন করে ভুলে যাবে ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা! কেমন করে মানুষ ভুলবে ৫ মে ভোররাতে মতিঝিলে হায়েনার মতো আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা!
আওয়ামী লীগ যে নাস্তিকদের লালনকারী দল সেটা তো দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট। শাহবাগে জড়ো হওয়া তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে ছিল কারা? নাস্তিকদের আন্দোলনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেছিল কারা! ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজিব নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। এ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাদের বিরুদ্ধে? কোন দেশের সরকার দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে এমন ঘটনা হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এমন কোনো ঘটনা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে কি-না সেটা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে বসে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের ঘোষিত এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবাই আপন আপন ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও একে অপরের সঙ্গে কোনো রকমের ক্লেশ হয়েছে এরকম নজির নেই। প্রত্যেকেই আপন ধর্ম নির্বিঘ্নে ক্ষেত্র মতো আনন্দ উল্লাস ও ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এ ঐতিহ্য লালিত হচ্ছে হাজারো বছর ধরে। কিন্তু সম্প্রতি ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মাহত। নাস্তিকদের নেতৃত্বে হঠাত্ করেই গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা হলো। ইসলাম ও মুসলামনদের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের যুদ্ধ।
সরকার নাস্তিকদের লালন করল খাবার, টাকাসহ সব ধরনের রসদের জোগান দিয়ে। শাহবাগে নাস্তিকরা জড়ো হলো। তাদের সুবিধা করে দিতে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয় সরকারি উদ্যোগে। বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ার অন্যতম ডায়াবেটিক হাসপাতাল বারডেম, এমনকি ঢাকা মেডিকেলে যাতায়াতের একটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হলো দিনের পর দিন। নাস্তিকদের সহযোগী মিডিয়াগুলো দিনের পর দিন লাইভ প্রচার চলল। উসকানি দেয়া হলো নাস্তিকতা ছড়িয়ে দিতে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো বাড়তি রঙিন পাতা জোগান দিয়ে সহযোগিতা করল। গণমানুষের যাতায়াতে অসুবিধা, রোগীদের ভোগান্তি, সমস্যার কথা ভুলে গেল তারা। নাস্তিকতা জেগে উঠেছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উসকানি দিতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে দেশ ব্যাপী। কিন্তু তাদের এ মহাপরিকল্পনা ফাঁস করে দিল দৈনিক আমার দেশ।
দৈনিক আমার দেশ নাস্তিকতা বিস্তারের পরিকল্পনা ও শাহবাগি আন্দোলনে ঘোষিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের আমলনামা প্রকাশ করল। তাদেরই পরিচালিত ব্লগে প্রকাশিত চিন্তাচেতনাগুলো আমার দেশ জাতির সামনে তুলে ধরল। তখন অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো চেষ্টা চালাল সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে কখনও বলা হলো—এসব বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল না। আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হলো। আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের ওপর রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে নাস্তিকদের পক্ষ নিল সরকার। শুধু কী তা-ই! নাস্তিকদের ঘোষণায় জাতীয় পতাকা উঠল এবং নামল। নাস্তিকদের ঘোষণায় দেশের স্কুলে স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করা হলো। নাস্তিকরা দাবি করল আর জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়ে গেল! যেন সব শাহবাগ থেকে হচ্ছে। কোথায় এখন নাস্তিকরা। তারা গাজীপুরে গিয়ে নাস্তিকতার নামে ভোট চায় না কেন? এখন ইসলামের কথা বলে ধর্মব্যবসার আশ্রয় নেয়া লাগে কেন? হেফজাতে ইসলামকে নিয়ে ভোটের মাঠে টানাটানি কেন? তথাকথিত নারীনীতির পক্ষের নারীদের ভোটের মাঠে নামানো হচ্ছে না কেন! ভোটের মাঠে পর্দাওয়ালা নারীদের দরকার পড়ে কেন!
একপর্যায়ে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জেগে উঠল দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ইসলাম, মুসলমান, ঈমান, আকস্ফিদা বিশ্বাসের ওপর নাস্তিকদের আক্রমণের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এলো হেফজাতে ইসলাম। ইসলামবিদ্বেষীয় প্রচারণার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেন বাংলাদেশের বরেণ্য আলেম আল্লামা আহমদ শফী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসে। তার লেখা খোলা চিঠির আহ্বানে প্রথম ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে নামেন মুসল্লিরা। এই বিক্ষোভে সরকার গুলি চালায়। গুলিতে শত শত মানুষ আহত হয়। শাহাদাত বরণ করেন কয়েকজন মুসল্লি। সর্বশেষ ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচি পালন শেষে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থান নেয় হেফাজত নেতাকর্মীরা। হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী সমাবেশে এসে বিকালে আখেরি মুনাজাত ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু সরকার তাকে সেখানে উপস্থিত হতে বাধা দেয়। তার অপেক্ষায় থাকা লাখো মানুষের সমাবেশ সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে হেফাজত নেতারা রাতে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে হেফাজতকর্মীরা সন্ধ্যার পর এখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলে আওয়ামী লীগ পথে পথে আক্রমণ করতে পারে। কারণ দিনের বেলায় মতিঝিলে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালিয়ে হেফাজতের ১১ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামনে রেখে সন্ধ্যার পর বিচ্ছিন্ন ভাবে সমাবেশ থেকে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়া নিরাপদ মনে করেনি হেফাজত নেতারা। রাতে অবস্থানের পর সকালে রওনা দেয়ার পরিকল্পনায় ছিল তাদের। কিন্তু সরকার রাতে অবস্থান সহ্য করতে পারেনি। রাতের বেলায় মতিঝিলি যৌথ বাহিনী নামানো হয়। ১০ হাজার যৌথবাহিনী হেফাজত কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিরস্ত্র, নিরীহ, হেফাজতকর্মীদের অবস্থানে অস্ত্রে সজ্জিত ১০ হাজার সরকারি বাহিনীর আক্রমণে রক্তাক্ত হয় মিতিঝিল। কতজন শাহাদাত বরণ করেছেন তার খতিয়ান এখনও পাওয়া যায়নি। রাতে নামাজ ও আল্লাহর জিকিররত হেফাজতকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করা, আহত করা কোন ধরনের ইসলাম দরদি কাজ সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রচার পত্রে নেই।
শুধু তা-ই নয়, যাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের আন্দোলন তাদের সরকার দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শাহবাগে লালন করেছে। খাবার সরবরাহ করা হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণিক ব্যবস্থা ছিল সেখানে। ভাসমান টয়েলট, বাথরুম স্থাপন করা হয়েছিল শাহবাগে। রাতে নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে একত্রে সহাবস্থান করেছে শাহবাগের সেই গণজাগরণ মঞ্চে। এটাই কী আওয়ামী লীগের ইসলাম প্রীতি! হেফাজতে ইসলাম বার বার বলেছে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন নয়। যারা ইসলাম সম্পর্কে কুত্সা রটনা করছে, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে হেফাজতের আন্দোলন। হেফাজতে ইসলাম মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণকারীদের বিচার দাবি করেছিল। অথচ হেফাজতের দাবির প্রতি কর্ণপাতই করেনি। বরং নাস্তিকদের প্রতিটি দাবি রক্ষা করেছে সরকার। সরকার নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে হেফজাতের ওপর চালিয়েছে গণহত্যা।
দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলেম-ওলামাদের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ছিল অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের এক রাতে মতিঝিলে অবস্থানকে সরকার সহ্য করতে পারেনি। বরং সরকার সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো হেফাজতের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণকে পাল্টা হেফাজতের তাণ্ডব বলে দিনের পর দিন প্রচারণা চালাচ্ছে। ৫ মে দিনের বেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো গুলিস্তানে হেফাজতকর্মীদের পিটিয়ে মারার দৃশ্য না দেখিয়ে বার বার বলা হয় হেফাজতের তাণ্ডব। হেফাজত যদি তাণ্ডব চালিয়ে থাকেন তা হলে তো নিহত হওয়ার কথা আওয়ামী লীগ বা হেফজত বিরোধী লোকজন। কিন্তু গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণে হেফাজতের ১১ জন শাহাদাত বরণ করে। এ লাশগুলো মতিঝিলে নিয়ে যাওয়ার পরও সেখানে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। তারা মতিঝিলে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। চাইলে হেফাজত নেতাদের নেতৃত্বে সেদিন বিকালে রাজধানীতে লাশ নিয়ে মিছিল বের করা যেত। কিন্তু শান্তি বজায় রাখার জন্য হেফাজত নেতারা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে মতিঝিল থেকে কোনো মিছিল বের করেননি। তারপর ও নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো বলেছে হেফাজতের তাণ্ডব।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ এখন আবার ইসলাম প্রীতির প্রচারপত্র বিলি করছে নির্বাচনে। তারা সাধারণ মানুষকে বোকা মনে করে ধোঁকা দিতে চায়। নির্বাচন এলে ধর্ম ব্যবসায় নামে আওয়ামী লীগ। বাকি সময় তারা ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসলামবিদ্বেষীয় নাস্তিক্যবাদ। গাজীপুরের ধর্মপ্রাণ মানুষ আওয়ামী লীগের এ ভণ্ডামির জবাব দেবে ইনশাআল্লহ।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘ধর্ম ব্যবসায়’ নেমেছে আওয়ামী লীগ। ইসলামের নামে রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ ধর্ম ব্যবসা বলে গালি দেয়। এছাড়া আওয়ামী জোটের অন্তর্ভুক্ত বাম দলগুলো ইসলামের নামে রাজনীতির গুরুতর বিরোধী। তারা ইসলামকে শুধু মসজিদ, মাদরাসা এবং মৃত্যুর পর জানাজা ও কবরস্থানে দেখতে চায়। এর বাইরে তারা ইসলাম দেখতে রাজি নয়। অথচ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইসলাম দরদী একটি প্রচারপত্রের সংবাদ প্রচারিত হয় ‘সুশীল’ গোত্রের প্রতিনিধিত্বকারী দৈনিক প্রথম আলোতে। গত ৩০ জুন পত্রিকাটির অনলাইনের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র’। এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ইসলাম-দরদী কর্মকাণ্ডের একটি ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। ২০টি উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ রয়েছে প্রচারপত্রটিতে। লক্ষ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভোট আদায় করা। প্রচারপত্রটির বিষয়ে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক কথা বলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং সংসদ সদস্যের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোট আদায় করতেই আওয়ামী লীগের এ কৌশল। আওয়ামী লীগ কতটা ইসলামপ্রিয় তা বোঝানোর একটি অপচেষ্টা রয়েছে প্রচারপত্রটিতে।
নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের ইসলামপ্রীতি নতুন কিছু নয়। তখন শেখ মুজিবুর রহমানকে মাওলানা বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। দলটির প্রধান শেখ হাসিনাকে আমরা মাথায় সাদা পট্টি বেঁধে হিজাব পরতে দেখেছি। শুধু কী তা-ই! মাথায় আরবীয় স্টাইলে হিজাবের পাশাপাশি হাতে তাসবীহ নিয়ে ঘুরতেন তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে হরহামেশাই আওয়ামী লীগের এমন ‘ধর্মব্যবসা’ দেখা যায়। গাজীপুরে হেফাজতে ইসলামকে নিয়েও টানাটানি করছে আওয়ামী লীগ। ভোটের জন্য হেফাজতে ইসলামকে দরকার। ভোটের বাইরে দরকার হয় শাহবাগি নাস্তিকদের। তখন নাস্তিকদের রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম নেতাকর্মীদের ওপর চলানো হয় গণহত্যা।
আওয়ামী লীগ যদি এতটাই ইসলাম-দরদী হয়ে থাকে, সংবিধানের মূলনীতি থেকে সব কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিধানটি বাদ দিল কেন! আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে তারা সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা। তখন কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা আওয়ামী লীগের মনে থাকে না। তখন অনুসরণ করা হয় তাদের মুরব্বি ভারতের সংবিধানকে। ভারতের সংবিধানেও মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ভারতেও ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন-নীপিড়ন। ভাঙা হয় চারশ’ বছরের পুরাতন বাবরি মসজিদ। গুজরাটে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় মুসলমানদের। এসব কিন্তু করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতার নামে। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতা করা।
ভারতের সংবিধান অনুসারী আওয়ামী লীগও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালায়। অতি সম্প্রতি হেফজাতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যার রক্তের দাগ এখনও মোছেনি। এখনও অনেক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন। আহতদের গায়ে আঘাতের ক্ষত এখনও শুকায়নি। আওয়ামী পুলিশ এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের আক্রমণে আহত হওয়া হেফাজত কর্মীরা এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। যশোরে নিহত হেফাজত কর্মীর জানাজায় তারাই বাধা দিয়েছে। হেফাজতের মহাসচিব বরেণ্য আলেম মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। রিমান্ডে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে তিনি শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।
আওয়ামী লীগ যত ইসলাম-দরদী প্রচারণা চালাক না কেন, মানুষ কেমন করে ভুলে যাবে ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা! কেমন করে মানুষ ভুলবে ৫ মে ভোররাতে মতিঝিলে হায়েনার মতো আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা!
আওয়ামী লীগ যে নাস্তিকদের লালনকারী দল সেটা তো দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট। শাহবাগে জড়ো হওয়া তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে ছিল কারা? নাস্তিকদের আন্দোলনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেছিল কারা! ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজিব নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। এ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাদের বিরুদ্ধে? কোন দেশের সরকার দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে এমন ঘটনা হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এমন কোনো ঘটনা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে কি-না সেটা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে বসে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের ঘোষিত এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবাই আপন আপন ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও একে অপরের সঙ্গে কোনো রকমের ক্লেশ হয়েছে এরকম নজির নেই। প্রত্যেকেই আপন ধর্ম নির্বিঘ্নে ক্ষেত্র মতো আনন্দ উল্লাস ও ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এ ঐতিহ্য লালিত হচ্ছে হাজারো বছর ধরে। কিন্তু সম্প্রতি ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মাহত। নাস্তিকদের নেতৃত্বে হঠাত্ করেই গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা হলো। ইসলাম ও মুসলামনদের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের যুদ্ধ।
সরকার নাস্তিকদের লালন করল খাবার, টাকাসহ সব ধরনের রসদের জোগান দিয়ে। শাহবাগে নাস্তিকরা জড়ো হলো। তাদের সুবিধা করে দিতে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয় সরকারি উদ্যোগে। বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ার অন্যতম ডায়াবেটিক হাসপাতাল বারডেম, এমনকি ঢাকা মেডিকেলে যাতায়াতের একটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হলো দিনের পর দিন। নাস্তিকদের সহযোগী মিডিয়াগুলো দিনের পর দিন লাইভ প্রচার চলল। উসকানি দেয়া হলো নাস্তিকতা ছড়িয়ে দিতে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো বাড়তি রঙিন পাতা জোগান দিয়ে সহযোগিতা করল। গণমানুষের যাতায়াতে অসুবিধা, রোগীদের ভোগান্তি, সমস্যার কথা ভুলে গেল তারা। নাস্তিকতা জেগে উঠেছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উসকানি দিতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে দেশ ব্যাপী। কিন্তু তাদের এ মহাপরিকল্পনা ফাঁস করে দিল দৈনিক আমার দেশ।
দৈনিক আমার দেশ নাস্তিকতা বিস্তারের পরিকল্পনা ও শাহবাগি আন্দোলনে ঘোষিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের আমলনামা প্রকাশ করল। তাদেরই পরিচালিত ব্লগে প্রকাশিত চিন্তাচেতনাগুলো আমার দেশ জাতির সামনে তুলে ধরল। তখন অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো চেষ্টা চালাল সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে কখনও বলা হলো—এসব বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল না। আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হলো। আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের ওপর রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে নাস্তিকদের পক্ষ নিল সরকার। শুধু কী তা-ই! নাস্তিকদের ঘোষণায় জাতীয় পতাকা উঠল এবং নামল। নাস্তিকদের ঘোষণায় দেশের স্কুলে স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করা হলো। নাস্তিকরা দাবি করল আর জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়ে গেল! যেন সব শাহবাগ থেকে হচ্ছে। কোথায় এখন নাস্তিকরা। তারা গাজীপুরে গিয়ে নাস্তিকতার নামে ভোট চায় না কেন? এখন ইসলামের কথা বলে ধর্মব্যবসার আশ্রয় নেয়া লাগে কেন? হেফজাতে ইসলামকে নিয়ে ভোটের মাঠে টানাটানি কেন? তথাকথিত নারীনীতির পক্ষের নারীদের ভোটের মাঠে নামানো হচ্ছে না কেন! ভোটের মাঠে পর্দাওয়ালা নারীদের দরকার পড়ে কেন!
একপর্যায়ে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জেগে উঠল দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ইসলাম, মুসলমান, ঈমান, আকস্ফিদা বিশ্বাসের ওপর নাস্তিকদের আক্রমণের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এলো হেফজাতে ইসলাম। ইসলামবিদ্বেষীয় প্রচারণার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেন বাংলাদেশের বরেণ্য আলেম আল্লামা আহমদ শফী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসে। তার লেখা খোলা চিঠির আহ্বানে প্রথম ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে নামেন মুসল্লিরা। এই বিক্ষোভে সরকার গুলি চালায়। গুলিতে শত শত মানুষ আহত হয়। শাহাদাত বরণ করেন কয়েকজন মুসল্লি। সর্বশেষ ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচি পালন শেষে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থান নেয় হেফাজত নেতাকর্মীরা। হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী সমাবেশে এসে বিকালে আখেরি মুনাজাত ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু সরকার তাকে সেখানে উপস্থিত হতে বাধা দেয়। তার অপেক্ষায় থাকা লাখো মানুষের সমাবেশ সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে হেফাজত নেতারা রাতে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে হেফাজতকর্মীরা সন্ধ্যার পর এখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলে আওয়ামী লীগ পথে পথে আক্রমণ করতে পারে। কারণ দিনের বেলায় মতিঝিলে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালিয়ে হেফাজতের ১১ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামনে রেখে সন্ধ্যার পর বিচ্ছিন্ন ভাবে সমাবেশ থেকে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়া নিরাপদ মনে করেনি হেফাজত নেতারা। রাতে অবস্থানের পর সকালে রওনা দেয়ার পরিকল্পনায় ছিল তাদের। কিন্তু সরকার রাতে অবস্থান সহ্য করতে পারেনি। রাতের বেলায় মতিঝিলি যৌথ বাহিনী নামানো হয়। ১০ হাজার যৌথবাহিনী হেফাজত কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিরস্ত্র, নিরীহ, হেফাজতকর্মীদের অবস্থানে অস্ত্রে সজ্জিত ১০ হাজার সরকারি বাহিনীর আক্রমণে রক্তাক্ত হয় মিতিঝিল। কতজন শাহাদাত বরণ করেছেন তার খতিয়ান এখনও পাওয়া যায়নি। রাতে নামাজ ও আল্লাহর জিকিররত হেফাজতকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করা, আহত করা কোন ধরনের ইসলাম দরদি কাজ সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রচার পত্রে নেই।
শুধু তা-ই নয়, যাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের আন্দোলন তাদের সরকার দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শাহবাগে লালন করেছে। খাবার সরবরাহ করা হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণিক ব্যবস্থা ছিল সেখানে। ভাসমান টয়েলট, বাথরুম স্থাপন করা হয়েছিল শাহবাগে। রাতে নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে একত্রে সহাবস্থান করেছে শাহবাগের সেই গণজাগরণ মঞ্চে। এটাই কী আওয়ামী লীগের ইসলাম প্রীতি! হেফাজতে ইসলাম বার বার বলেছে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন নয়। যারা ইসলাম সম্পর্কে কুত্সা রটনা করছে, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে হেফাজতের আন্দোলন। হেফাজতে ইসলাম মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণকারীদের বিচার দাবি করেছিল। অথচ হেফাজতের দাবির প্রতি কর্ণপাতই করেনি। বরং নাস্তিকদের প্রতিটি দাবি রক্ষা করেছে সরকার। সরকার নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে হেফজাতের ওপর চালিয়েছে গণহত্যা।
দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলেম-ওলামাদের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ছিল অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের এক রাতে মতিঝিলে অবস্থানকে সরকার সহ্য করতে পারেনি। বরং সরকার সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো হেফাজতের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণকে পাল্টা হেফাজতের তাণ্ডব বলে দিনের পর দিন প্রচারণা চালাচ্ছে। ৫ মে দিনের বেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো গুলিস্তানে হেফাজতকর্মীদের পিটিয়ে মারার দৃশ্য না দেখিয়ে বার বার বলা হয় হেফাজতের তাণ্ডব। হেফাজত যদি তাণ্ডব চালিয়ে থাকেন তা হলে তো নিহত হওয়ার কথা আওয়ামী লীগ বা হেফজত বিরোধী লোকজন। কিন্তু গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণে হেফাজতের ১১ জন শাহাদাত বরণ করে। এ লাশগুলো মতিঝিলে নিয়ে যাওয়ার পরও সেখানে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। তারা মতিঝিলে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। চাইলে হেফাজত নেতাদের নেতৃত্বে সেদিন বিকালে রাজধানীতে লাশ নিয়ে মিছিল বের করা যেত। কিন্তু শান্তি বজায় রাখার জন্য হেফাজত নেতারা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে মতিঝিল থেকে কোনো মিছিল বের করেননি। তারপর ও নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো বলেছে হেফাজতের তাণ্ডব।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ এখন আবার ইসলাম প্রীতির প্রচারপত্র বিলি করছে নির্বাচনে। তারা সাধারণ মানুষকে বোকা মনে করে ধোঁকা দিতে চায়। নির্বাচন এলে ধর্ম ব্যবসায় নামে আওয়ামী লীগ। বাকি সময় তারা ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসলামবিদ্বেষীয় নাস্তিক্যবাদ। গাজীপুরের ধর্মপ্রাণ মানুষ আওয়ামী লীগের এ ভণ্ডামির জবাব দেবে ইনশাআল্লহ।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘ধর্ম ব্যবসায়’ নেমেছে আওয়ামী লীগ। ইসলামের নামে রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ ধর্ম ব্যবসা বলে গালি দেয়। এছাড়া আওয়ামী জোটের অন্তর্ভুক্ত বাম দলগুলো ইসলামের নামে রাজনীতির গুরুতর বিরোধী। তারা ইসলামকে শুধু মসজিদ, মাদরাসা এবং মৃত্যুর পর জানাজা ও কবরস্থানে দেখতে চায়। এর বাইরে তারা ইসলাম দেখতে রাজি নয়। অথচ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইসলাম দরদী একটি প্রচারপত্রের সংবাদ প্রচারিত হয় ‘সুশীল’ গোত্রের প্রতিনিধিত্বকারী দৈনিক প্রথম আলোতে। গত ৩০ জুন পত্রিকাটির অনলাইনের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র’। এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ইসলাম-দরদী কর্মকাণ্ডের একটি ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। ২০টি উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ রয়েছে প্রচারপত্রটিতে। লক্ষ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভোট আদায় করা। প্রচারপত্রটির বিষয়ে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক কথা বলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং সংসদ সদস্যের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোট আদায় করতেই আওয়ামী লীগের এ কৌশল। আওয়ামী লীগ কতটা ইসলামপ্রিয় তা বোঝানোর একটি অপচেষ্টা রয়েছে প্রচারপত্রটিতে।
নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের ইসলামপ্রীতি নতুন কিছু নয়। তখন শেখ মুজিবুর রহমানকে মাওলানা বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। দলটির প্রধান শেখ হাসিনাকে আমরা মাথায় সাদা পট্টি বেঁধে হিজাব পরতে দেখেছি। শুধু কী তা-ই! মাথায় আরবীয় স্টাইলে হিজাবের পাশাপাশি হাতে তাসবীহ নিয়ে ঘুরতেন তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে হরহামেশাই আওয়ামী লীগের এমন ‘ধর্মব্যবসা’ দেখা যায়। গাজীপুরে হেফাজতে ইসলামকে নিয়েও টানাটানি করছে আওয়ামী লীগ। ভোটের জন্য হেফাজতে ইসলামকে দরকার। ভোটের বাইরে দরকার হয় শাহবাগি নাস্তিকদের। তখন নাস্তিকদের রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম নেতাকর্মীদের ওপর চলানো হয় গণহত্যা।
আওয়ামী লীগ যদি এতটাই ইসলাম-দরদী হয়ে থাকে, সংবিধানের মূলনীতি থেকে সব কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিধানটি বাদ দিল কেন! আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে তারা সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা। তখন কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা আওয়ামী লীগের মনে থাকে না। তখন অনুসরণ করা হয় তাদের মুরব্বি ভারতের সংবিধানকে। ভারতের সংবিধানেও মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ভারতেও ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন-নীপিড়ন। ভাঙা হয় চারশ’ বছরের পুরাতন বাবরি মসজিদ। গুজরাটে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় মুসলমানদের। এসব কিন্তু করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতার নামে। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতা করা।
ভারতের সংবিধান অনুসারী আওয়ামী লীগও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালায়। অতি সম্প্রতি হেফজাতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যার রক্তের দাগ এখনও মোছেনি। এখনও অনেক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন। আহতদের গায়ে আঘাতের ক্ষত এখনও শুকায়নি। আওয়ামী পুলিশ এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের আক্রমণে আহত হওয়া হেফাজত কর্মীরা এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। যশোরে নিহত হেফাজত কর্মীর জানাজায় তারাই বাধা দিয়েছে। হেফাজতের মহাসচিব বরেণ্য আলেম মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। রিমান্ডে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে তিনি শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।
আওয়ামী লীগ যত ইসলাম-দরদী প্রচারণা চালাক না কেন, মানুষ কেমন করে ভুলে যাবে ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা! কেমন করে মানুষ ভুলবে ৫ মে ভোররাতে মতিঝিলে হায়েনার মতো আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা!
আওয়ামী লীগ যে নাস্তিকদের লালনকারী দল সেটা তো দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট। শাহবাগে জড়ো হওয়া তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে ছিল কারা? নাস্তিকদের আন্দোলনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেছিল কারা! ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজিব নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। এ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাদের বিরুদ্ধে? কোন দেশের সরকার দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে এমন ঘটনা হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এমন কোনো ঘটনা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে কি-না সেটা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে বসে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের ঘোষিত এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবাই আপন আপন ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও একে অপরের সঙ্গে কোনো রকমের ক্লেশ হয়েছে এরকম নজির নেই। প্রত্যেকেই আপন ধর্ম নির্বিঘ্নে ক্ষেত্র মতো আনন্দ উল্লাস ও ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এ ঐতিহ্য লালিত হচ্ছে হাজারো বছর ধরে। কিন্তু সম্প্রতি ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মাহত। নাস্তিকদের নেতৃত্বে হঠাত্ করেই গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা হলো। ইসলাম ও মুসলামনদের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের যুদ্ধ।
সরকার নাস্তিকদের লালন করল খাবার, টাকাসহ সব ধরনের রসদের জোগান দিয়ে। শাহবাগে নাস্তিকরা জড়ো হলো। তাদের সুবিধা করে দিতে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয় সরকারি উদ্যোগে। বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ার অন্যতম ডায়াবেটিক হাসপাতাল বারডেম, এমনকি ঢাকা মেডিকেলে যাতায়াতের একটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হলো দিনের পর দিন। নাস্তিকদের সহযোগী মিডিয়াগুলো দিনের পর দিন লাইভ প্রচার চলল। উসকানি দেয়া হলো নাস্তিকতা ছড়িয়ে দিতে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো বাড়তি রঙিন পাতা জোগান দিয়ে সহযোগিতা করল। গণমানুষের যাতায়াতে অসুবিধা, রোগীদের ভোগান্তি, সমস্যার কথা ভুলে গেল তারা। নাস্তিকতা জেগে উঠেছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উসকানি দিতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে দেশ ব্যাপী। কিন্তু তাদের এ মহাপরিকল্পনা ফাঁস করে দিল দৈনিক আমার দেশ।
দৈনিক আমার দেশ নাস্তিকতা বিস্তারের পরিকল্পনা ও শাহবাগি আন্দোলনে ঘোষিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের আমলনামা প্রকাশ করল। তাদেরই পরিচালিত ব্লগে প্রকাশিত চিন্তাচেতনাগুলো আমার দেশ জাতির সামনে তুলে ধরল। তখন অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো চেষ্টা চালাল সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে কখনও বলা হলো—এসব বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল না। আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হলো। আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের ওপর রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে নাস্তিকদের পক্ষ নিল সরকার। শুধু কী তা-ই! নাস্তিকদের ঘোষণায় জাতীয় পতাকা উঠল এবং নামল। নাস্তিকদের ঘোষণায় দেশের স্কুলে স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করা হলো। নাস্তিকরা দাবি করল আর জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়ে গেল! যেন সব শাহবাগ থেকে হচ্ছে। কোথায় এখন নাস্তিকরা। তারা গাজীপুরে গিয়ে নাস্তিকতার নামে ভোট চায় না কেন? এখন ইসলামের কথা বলে ধর্মব্যবসার আশ্রয় নেয়া লাগে কেন? হেফজাতে ইসলামকে নিয়ে ভোটের মাঠে টানাটানি কেন? তথাকথিত নারীনীতির পক্ষের নারীদের ভোটের মাঠে নামানো হচ্ছে না কেন! ভোটের মাঠে পর্দাওয়ালা নারীদের দরকার পড়ে কেন!
একপর্যায়ে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জেগে উঠল দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ইসলাম, মুসলমান, ঈমান, আকস্ফিদা বিশ্বাসের ওপর নাস্তিকদের আক্রমণের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এলো হেফজাতে ইসলাম। ইসলামবিদ্বেষীয় প্রচারণার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেন বাংলাদেশের বরেণ্য আলেম আল্লামা আহমদ শফী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসে। তার লেখা খোলা চিঠির আহ্বানে প্রথম ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে নামেন মুসল্লিরা। এই বিক্ষোভে সরকার গুলি চালায়। গুলিতে শত শত মানুষ আহত হয়। শাহাদাত বরণ করেন কয়েকজন মুসল্লি। সর্বশেষ ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচি পালন শেষে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থান নেয় হেফাজত নেতাকর্মীরা। হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী সমাবেশে এসে বিকালে আখেরি মুনাজাত ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু সরকার তাকে সেখানে উপস্থিত হতে বাধা দেয়। তার অপেক্ষায় থাকা লাখো মানুষের সমাবেশ সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে হেফাজত নেতারা রাতে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে হেফাজতকর্মীরা সন্ধ্যার পর এখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলে আওয়ামী লীগ পথে পথে আক্রমণ করতে পারে। কারণ দিনের বেলায় মতিঝিলে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালিয়ে হেফাজতের ১১ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামনে রেখে সন্ধ্যার পর বিচ্ছিন্ন ভাবে সমাবেশ থেকে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়া নিরাপদ মনে করেনি হেফাজত নেতারা। রাতে অবস্থানের পর সকালে রওনা দেয়ার পরিকল্পনায় ছিল তাদের। কিন্তু সরকার রাতে অবস্থান সহ্য করতে পারেনি। রাতের বেলায় মতিঝিলি যৌথ বাহিনী নামানো হয়। ১০ হাজার যৌথবাহিনী হেফাজত কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিরস্ত্র, নিরীহ, হেফাজতকর্মীদের অবস্থানে অস্ত্রে সজ্জিত ১০ হাজার সরকারি বাহিনীর আক্রমণে রক্তাক্ত হয় মিতিঝিল। কতজন শাহাদাত বরণ করেছেন তার খতিয়ান এখনও পাওয়া যায়নি। রাতে নামাজ ও আল্লাহর জিকিররত হেফাজতকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করা, আহত করা কোন ধরনের ইসলাম দরদি কাজ সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রচার পত্রে নেই।
শুধু তা-ই নয়, যাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের আন্দোলন তাদের সরকার দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শাহবাগে লালন করেছে। খাবার সরবরাহ করা হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণিক ব্যবস্থা ছিল সেখানে। ভাসমান টয়েলট, বাথরুম স্থাপন করা হয়েছিল শাহবাগে। রাতে নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে একত্রে সহাবস্থান করেছে শাহবাগের সেই গণজাগরণ মঞ্চে। এটাই কী আওয়ামী লীগের ইসলাম প্রীতি! হেফাজতে ইসলাম বার বার বলেছে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন নয়। যারা ইসলাম সম্পর্কে কুত্সা রটনা করছে, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে হেফাজতের আন্দোলন। হেফাজতে ইসলাম মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণকারীদের বিচার দাবি করেছিল। অথচ হেফাজতের দাবির প্রতি কর্ণপাতই করেনি। বরং নাস্তিকদের প্রতিটি দাবি রক্ষা করেছে সরকার। সরকার নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে হেফজাতের ওপর চালিয়েছে গণহত্যা।
দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলেম-ওলামাদের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ছিল অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের এক রাতে মতিঝিলে অবস্থানকে সরকার সহ্য করতে পারেনি। বরং সরকার সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো হেফাজতের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণকে পাল্টা হেফাজতের তাণ্ডব বলে দিনের পর দিন প্রচারণা চালাচ্ছে। ৫ মে দিনের বেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো গুলিস্তানে হেফাজতকর্মীদের পিটিয়ে মারার দৃশ্য না দেখিয়ে বার বার বলা হয় হেফাজতের তাণ্ডব। হেফাজত যদি তাণ্ডব চালিয়ে থাকেন তা হলে তো নিহত হওয়ার কথা আওয়ামী লীগ বা হেফজত বিরোধী লোকজন। কিন্তু গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণে হেফাজতের ১১ জন শাহাদাত বরণ করে। এ লাশগুলো মতিঝিলে নিয়ে যাওয়ার পরও সেখানে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। তারা মতিঝিলে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। চাইলে হেফাজত নেতাদের নেতৃত্বে সেদিন বিকালে রাজধানীতে লাশ নিয়ে মিছিল বের করা যেত। কিন্তু শান্তি বজায় রাখার জন্য হেফাজত নেতারা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে মতিঝিল থেকে কোনো মিছিল বের করেননি। তারপর ও নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো বলেছে হেফাজতের তাণ্ডব।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ এখন আবার ইসলাম প্রীতির প্রচারপত্র বিলি করছে নির্বাচনে। তারা সাধারণ মানুষকে বোকা মনে করে ধোঁকা দিতে চায়। নির্বাচন এলে ধর্ম ব্যবসায় নামে আওয়ামী লীগ। বাকি সময় তারা ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসলামবিদ্বেষীয় নাস্তিক্যবাদ। গাজীপুরের ধর্মপ্রাণ মানুষ আওয়ামী লীগের এ ভণ্ডামির জবাব দেবে ইনশাআল্লহ।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের ইসলামপ্রীতি নতুন কিছু নয়। তখন শেখ মুজিবুর রহমানকে মাওলানা বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। দলটির প্রধান শেখ হাসিনাকে আমরা মাথায় সাদা পট্টি বেঁধে হিজাব পরতে দেখেছি। শুধু কী তা-ই! মাথায় আরবীয় স্টাইলে হিজাবের পাশাপাশি হাতে তাসবীহ নিয়ে ঘুরতেন তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে হরহামেশাই আওয়ামী লীগের এমন ‘ধর্মব্যবসা’ দেখা যায়। গাজীপুরে হেফাজতে ইসলামকে নিয়েও টানাটানি করছে আওয়ামী লীগ। ভোটের জন্য হেফাজতে ইসলামকে দরকার। ভোটের বাইরে দরকার হয় শাহবাগি নাস্তিকদের। তখন নাস্তিকদের রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম নেতাকর্মীদের ওপর চলানো হয় গণহত্যা।
আওয়ামী লীগ যদি এতটাই ইসলাম-দরদী হয়ে থাকে, সংবিধানের মূলনীতি থেকে সব কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিধানটি বাদ দিল কেন! আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে তারা সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা। তখন কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা আওয়ামী লীগের মনে থাকে না। তখন অনুসরণ করা হয় তাদের মুরব্বি ভারতের সংবিধানকে। ভারতের সংবিধানেও মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ভারতেও ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন-নীপিড়ন। ভাঙা হয় চারশ’ বছরের পুরাতন বাবরি মসজিদ। গুজরাটে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় মুসলমানদের। এসব কিন্তু করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতার নামে। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতা করা।
ভারতের সংবিধান অনুসারী আওয়ামী লীগও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালায়। অতি সম্প্রতি হেফজাতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যার রক্তের দাগ এখনও মোছেনি। এখনও অনেক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন। আহতদের গায়ে আঘাতের ক্ষত এখনও শুকায়নি। আওয়ামী পুলিশ এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের আক্রমণে আহত হওয়া হেফাজত কর্মীরা এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। যশোরে নিহত হেফাজত কর্মীর জানাজায় তারাই বাধা দিয়েছে। হেফাজতের মহাসচিব বরেণ্য আলেম মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। রিমান্ডে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে তিনি শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।
আওয়ামী লীগ যত ইসলাম-দরদী প্রচারণা চালাক না কেন, মানুষ কেমন করে ভুলে যাবে ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা! কেমন করে মানুষ ভুলবে ৫ মে ভোররাতে মতিঝিলে হায়েনার মতো আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা!
আওয়ামী লীগ যে নাস্তিকদের লালনকারী দল সেটা তো দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট। শাহবাগে জড়ো হওয়া তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে ছিল কারা? নাস্তিকদের আন্দোলনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেছিল কারা! ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজিব নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। এ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাদের বিরুদ্ধে? কোন দেশের সরকার দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে এমন ঘটনা হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এমন কোনো ঘটনা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে কি-না সেটা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে বসে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের ঘোষিত এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবাই আপন আপন ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও একে অপরের সঙ্গে কোনো রকমের ক্লেশ হয়েছে এরকম নজির নেই। প্রত্যেকেই আপন ধর্ম নির্বিঘ্নে ক্ষেত্র মতো আনন্দ উল্লাস ও ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এ ঐতিহ্য লালিত হচ্ছে হাজারো বছর ধরে। কিন্তু সম্প্রতি ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মাহত। নাস্তিকদের নেতৃত্বে হঠাত্ করেই গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা হলো। ইসলাম ও মুসলামনদের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের যুদ্ধ।
সরকার নাস্তিকদের লালন করল খাবার, টাকাসহ সব ধরনের রসদের জোগান দিয়ে। শাহবাগে নাস্তিকরা জড়ো হলো। তাদের সুবিধা করে দিতে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয় সরকারি উদ্যোগে। বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ার অন্যতম ডায়াবেটিক হাসপাতাল বারডেম, এমনকি ঢাকা মেডিকেলে যাতায়াতের একটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হলো দিনের পর দিন। নাস্তিকদের সহযোগী মিডিয়াগুলো দিনের পর দিন লাইভ প্রচার চলল। উসকানি দেয়া হলো নাস্তিকতা ছড়িয়ে দিতে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো বাড়তি রঙিন পাতা জোগান দিয়ে সহযোগিতা করল। গণমানুষের যাতায়াতে অসুবিধা, রোগীদের ভোগান্তি, সমস্যার কথা ভুলে গেল তারা। নাস্তিকতা জেগে উঠেছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উসকানি দিতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে দেশ ব্যাপী। কিন্তু তাদের এ মহাপরিকল্পনা ফাঁস করে দিল দৈনিক আমার দেশ।
দৈনিক আমার দেশ নাস্তিকতা বিস্তারের পরিকল্পনা ও শাহবাগি আন্দোলনে ঘোষিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের আমলনামা প্রকাশ করল। তাদেরই পরিচালিত ব্লগে প্রকাশিত চিন্তাচেতনাগুলো আমার দেশ জাতির সামনে তুলে ধরল। তখন অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো চেষ্টা চালাল সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে কখনও বলা হলো—এসব বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল না। আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হলো। আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের ওপর রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে নাস্তিকদের পক্ষ নিল সরকার। শুধু কী তা-ই! নাস্তিকদের ঘোষণায় জাতীয় পতাকা উঠল এবং নামল। নাস্তিকদের ঘোষণায় দেশের স্কুলে স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করা হলো। নাস্তিকরা দাবি করল আর জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়ে গেল! যেন সব শাহবাগ থেকে হচ্ছে। কোথায় এখন নাস্তিকরা। তারা গাজীপুরে গিয়ে নাস্তিকতার নামে ভোট চায় না কেন? এখন ইসলামের কথা বলে ধর্মব্যবসার আশ্রয় নেয়া লাগে কেন? হেফজাতে ইসলামকে নিয়ে ভোটের মাঠে টানাটানি কেন? তথাকথিত নারীনীতির পক্ষের নারীদের ভোটের মাঠে নামানো হচ্ছে না কেন! ভোটের মাঠে পর্দাওয়ালা নারীদের দরকার পড়ে কেন!
একপর্যায়ে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জেগে উঠল দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ইসলাম, মুসলমান, ঈমান, আকস্ফিদা বিশ্বাসের ওপর নাস্তিকদের আক্রমণের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এলো হেফজাতে ইসলাম। ইসলামবিদ্বেষীয় প্রচারণার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেন বাংলাদেশের বরেণ্য আলেম আল্লামা আহমদ শফী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসে। তার লেখা খোলা চিঠির আহ্বানে প্রথম ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে নামেন মুসল্লিরা। এই বিক্ষোভে সরকার গুলি চালায়। গুলিতে শত শত মানুষ আহত হয়। শাহাদাত বরণ করেন কয়েকজন মুসল্লি। সর্বশেষ ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচি পালন শেষে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থান নেয় হেফাজত নেতাকর্মীরা। হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী সমাবেশে এসে বিকালে আখেরি মুনাজাত ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু সরকার তাকে সেখানে উপস্থিত হতে বাধা দেয়। তার অপেক্ষায় থাকা লাখো মানুষের সমাবেশ সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে হেফাজত নেতারা রাতে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে হেফাজতকর্মীরা সন্ধ্যার পর এখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলে আওয়ামী লীগ পথে পথে আক্রমণ করতে পারে। কারণ দিনের বেলায় মতিঝিলে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালিয়ে হেফাজতের ১১ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামনে রেখে সন্ধ্যার পর বিচ্ছিন্ন ভাবে সমাবেশ থেকে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়া নিরাপদ মনে করেনি হেফাজত নেতারা। রাতে অবস্থানের পর সকালে রওনা দেয়ার পরিকল্পনায় ছিল তাদের। কিন্তু সরকার রাতে অবস্থান সহ্য করতে পারেনি। রাতের বেলায় মতিঝিলি যৌথ বাহিনী নামানো হয়। ১০ হাজার যৌথবাহিনী হেফাজত কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিরস্ত্র, নিরীহ, হেফাজতকর্মীদের অবস্থানে অস্ত্রে সজ্জিত ১০ হাজার সরকারি বাহিনীর আক্রমণে রক্তাক্ত হয় মিতিঝিল। কতজন শাহাদাত বরণ করেছেন তার খতিয়ান এখনও পাওয়া যায়নি। রাতে নামাজ ও আল্লাহর জিকিররত হেফাজতকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করা, আহত করা কোন ধরনের ইসলাম দরদি কাজ সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রচার পত্রে নেই।
শুধু তা-ই নয়, যাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের আন্দোলন তাদের সরকার দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শাহবাগে লালন করেছে। খাবার সরবরাহ করা হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণিক ব্যবস্থা ছিল সেখানে। ভাসমান টয়েলট, বাথরুম স্থাপন করা হয়েছিল শাহবাগে। রাতে নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে একত্রে সহাবস্থান করেছে শাহবাগের সেই গণজাগরণ মঞ্চে। এটাই কী আওয়ামী লীগের ইসলাম প্রীতি! হেফাজতে ইসলাম বার বার বলেছে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন নয়। যারা ইসলাম সম্পর্কে কুত্সা রটনা করছে, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে হেফাজতের আন্দোলন। হেফাজতে ইসলাম মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণকারীদের বিচার দাবি করেছিল। অথচ হেফাজতের দাবির প্রতি কর্ণপাতই করেনি। বরং নাস্তিকদের প্রতিটি দাবি রক্ষা করেছে সরকার। সরকার নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে হেফজাতের ওপর চালিয়েছে গণহত্যা।
দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলেম-ওলামাদের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ছিল অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের এক রাতে মতিঝিলে অবস্থানকে সরকার সহ্য করতে পারেনি। বরং সরকার সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো হেফাজতের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণকে পাল্টা হেফাজতের তাণ্ডব বলে দিনের পর দিন প্রচারণা চালাচ্ছে। ৫ মে দিনের বেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো গুলিস্তানে হেফাজতকর্মীদের পিটিয়ে মারার দৃশ্য না দেখিয়ে বার বার বলা হয় হেফাজতের তাণ্ডব। হেফাজত যদি তাণ্ডব চালিয়ে থাকেন তা হলে তো নিহত হওয়ার কথা আওয়ামী লীগ বা হেফজত বিরোধী লোকজন। কিন্তু গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণে হেফাজতের ১১ জন শাহাদাত বরণ করে। এ লাশগুলো মতিঝিলে নিয়ে যাওয়ার পরও সেখানে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। তারা মতিঝিলে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। চাইলে হেফাজত নেতাদের নেতৃত্বে সেদিন বিকালে রাজধানীতে লাশ নিয়ে মিছিল বের করা যেত। কিন্তু শান্তি বজায় রাখার জন্য হেফাজত নেতারা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে মতিঝিল থেকে কোনো মিছিল বের করেননি। তারপর ও নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো বলেছে হেফাজতের তাণ্ডব।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ এখন আবার ইসলাম প্রীতির প্রচারপত্র বিলি করছে নির্বাচনে। তারা সাধারণ মানুষকে বোকা মনে করে ধোঁকা দিতে চায়। নির্বাচন এলে ধর্ম ব্যবসায় নামে আওয়ামী লীগ। বাকি সময় তারা ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসলামবিদ্বেষীয় নাস্তিক্যবাদ। গাজীপুরের ধর্মপ্রাণ মানুষ আওয়ামী লীগের এ ভণ্ডামির জবাব দেবে ইনশাআল্লহ।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘ধর্ম ব্যবসায়’ নেমেছে আওয়ামী লীগ। ইসলামের নামে রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ ধর্ম ব্যবসা বলে গালি দেয়। এছাড়া আওয়ামী জোটের অন্তর্ভুক্ত বাম দলগুলো ইসলামের নামে রাজনীতির গুরুতর বিরোধী। তারা ইসলামকে শুধু মসজিদ, মাদরাসা এবং মৃত্যুর পর জানাজা ও কবরস্থানে দেখতে চায়। এর বাইরে তারা ইসলাম দেখতে রাজি নয়। অথচ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইসলাম দরদী একটি প্রচারপত্রের সংবাদ প্রচারিত হয় ‘সুশীল’ গোত্রের প্রতিনিধিত্বকারী দৈনিক প্রথম আলোতে। গত ৩০ জুন পত্রিকাটির অনলাইনের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র’। এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ইসলাম-দরদী কর্মকাণ্ডের একটি ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। ২০টি উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ রয়েছে প্রচারপত্রটিতে। লক্ষ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভোট আদায় করা। প্রচারপত্রটির বিষয়ে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক কথা বলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং সংসদ সদস্যের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোট আদায় করতেই আওয়ামী লীগের এ কৌশল। আওয়ামী লীগ কতটা ইসলামপ্রিয় তা বোঝানোর একটি অপচেষ্টা রয়েছে প্রচারপত্রটিতে।
নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের ইসলামপ্রীতি নতুন কিছু নয়। তখন শেখ মুজিবুর রহমানকে মাওলানা বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। দলটির প্রধান শেখ হাসিনাকে আমরা মাথায় সাদা পট্টি বেঁধে হিজাব পরতে দেখেছি। শুধু কী তা-ই! মাথায় আরবীয় স্টাইলে হিজাবের পাশাপাশি হাতে তাসবীহ নিয়ে ঘুরতেন তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে হরহামেশাই আওয়ামী লীগের এমন ‘ধর্মব্যবসা’ দেখা যায়। গাজীপুরে হেফাজতে ইসলামকে নিয়েও টানাটানি করছে আওয়ামী লীগ। ভোটের জন্য হেফাজতে ইসলামকে দরকার। ভোটের বাইরে দরকার হয় শাহবাগি নাস্তিকদের। তখন নাস্তিকদের রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম নেতাকর্মীদের ওপর চলানো হয় গণহত্যা।
আওয়ামী লীগ যদি এতটাই ইসলাম-দরদী হয়ে থাকে, সংবিধানের মূলনীতি থেকে সব কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিধানটি বাদ দিল কেন! আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে তারা সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা। তখন কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা আওয়ামী লীগের মনে থাকে না। তখন অনুসরণ করা হয় তাদের মুরব্বি ভারতের সংবিধানকে। ভারতের সংবিধানেও মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ভারতেও ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন-নীপিড়ন। ভাঙা হয় চারশ’ বছরের পুরাতন বাবরি মসজিদ। গুজরাটে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় মুসলমানদের। এসব কিন্তু করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতার নামে। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতা করা।
ভারতের সংবিধান অনুসারী আওয়ামী লীগও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালায়। অতি সম্প্রতি হেফজাতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যার রক্তের দাগ এখনও মোছেনি। এখনও অনেক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন। আহতদের গায়ে আঘাতের ক্ষত এখনও শুকায়নি। আওয়ামী পুলিশ এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের আক্রমণে আহত হওয়া হেফাজত কর্মীরা এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। যশোরে নিহত হেফাজত কর্মীর জানাজায় তারাই বাধা দিয়েছে। হেফাজতের মহাসচিব বরেণ্য আলেম মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। রিমান্ডে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে তিনি শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।
আওয়ামী লীগ যত ইসলাম-দরদী প্রচারণা চালাক না কেন, মানুষ কেমন করে ভুলে যাবে ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা! কেমন করে মানুষ ভুলবে ৫ মে ভোররাতে মতিঝিলে হায়েনার মতো আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা!
আওয়ামী লীগ যে নাস্তিকদের লালনকারী দল সেটা তো দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট। শাহবাগে জড়ো হওয়া তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে ছিল কারা? নাস্তিকদের আন্দোলনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেছিল কারা! ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজিব নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। এ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাদের বিরুদ্ধে? কোন দেশের সরকার দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে এমন ঘটনা হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এমন কোনো ঘটনা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে কি-না সেটা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে বসে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের ঘোষিত এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবাই আপন আপন ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও একে অপরের সঙ্গে কোনো রকমের ক্লেশ হয়েছে এরকম নজির নেই। প্রত্যেকেই আপন ধর্ম নির্বিঘ্নে ক্ষেত্র মতো আনন্দ উল্লাস ও ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এ ঐতিহ্য লালিত হচ্ছে হাজারো বছর ধরে। কিন্তু সম্প্রতি ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মাহত। নাস্তিকদের নেতৃত্বে হঠাত্ করেই গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা হলো। ইসলাম ও মুসলামনদের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের যুদ্ধ।
সরকার নাস্তিকদের লালন করল খাবার, টাকাসহ সব ধরনের রসদের জোগান দিয়ে। শাহবাগে নাস্তিকরা জড়ো হলো। তাদের সুবিধা করে দিতে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয় সরকারি উদ্যোগে। বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ার অন্যতম ডায়াবেটিক হাসপাতাল বারডেম, এমনকি ঢাকা মেডিকেলে যাতায়াতের একটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হলো দিনের পর দিন। নাস্তিকদের সহযোগী মিডিয়াগুলো দিনের পর দিন লাইভ প্রচার চলল। উসকানি দেয়া হলো নাস্তিকতা ছড়িয়ে দিতে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো বাড়তি রঙিন পাতা জোগান দিয়ে সহযোগিতা করল। গণমানুষের যাতায়াতে অসুবিধা, রোগীদের ভোগান্তি, সমস্যার কথা ভুলে গেল তারা। নাস্তিকতা জেগে উঠেছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উসকানি দিতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে দেশ ব্যাপী। কিন্তু তাদের এ মহাপরিকল্পনা ফাঁস করে দিল দৈনিক আমার দেশ।
দৈনিক আমার দেশ নাস্তিকতা বিস্তারের পরিকল্পনা ও শাহবাগি আন্দোলনে ঘোষিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের আমলনামা প্রকাশ করল। তাদেরই পরিচালিত ব্লগে প্রকাশিত চিন্তাচেতনাগুলো আমার দেশ জাতির সামনে তুলে ধরল। তখন অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো চেষ্টা চালাল সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে কখনও বলা হলো—এসব বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল না। আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হলো। আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের ওপর রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে নাস্তিকদের পক্ষ নিল সরকার। শুধু কী তা-ই! নাস্তিকদের ঘোষণায় জাতীয় পতাকা উঠল এবং নামল। নাস্তিকদের ঘোষণায় দেশের স্কুলে স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করা হলো। নাস্তিকরা দাবি করল আর জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়ে গেল! যেন সব শাহবাগ থেকে হচ্ছে। কোথায় এখন নাস্তিকরা। তারা গাজীপুরে গিয়ে নাস্তিকতার নামে ভোট চায় না কেন? এখন ইসলামের কথা বলে ধর্মব্যবসার আশ্রয় নেয়া লাগে কেন? হেফজাতে ইসলামকে নিয়ে ভোটের মাঠে টানাটানি কেন? তথাকথিত নারীনীতির পক্ষের নারীদের ভোটের মাঠে নামানো হচ্ছে না কেন! ভোটের মাঠে পর্দাওয়ালা নারীদের দরকার পড়ে কেন!
একপর্যায়ে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জেগে উঠল দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ইসলাম, মুসলমান, ঈমান, আকস্ফিদা বিশ্বাসের ওপর নাস্তিকদের আক্রমণের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এলো হেফজাতে ইসলাম। ইসলামবিদ্বেষীয় প্রচারণার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেন বাংলাদেশের বরেণ্য আলেম আল্লামা আহমদ শফী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসে। তার লেখা খোলা চিঠির আহ্বানে প্রথম ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে নামেন মুসল্লিরা। এই বিক্ষোভে সরকার গুলি চালায়। গুলিতে শত শত মানুষ আহত হয়। শাহাদাত বরণ করেন কয়েকজন মুসল্লি। সর্বশেষ ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচি পালন শেষে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থান নেয় হেফাজত নেতাকর্মীরা। হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী সমাবেশে এসে বিকালে আখেরি মুনাজাত ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু সরকার তাকে সেখানে উপস্থিত হতে বাধা দেয়। তার অপেক্ষায় থাকা লাখো মানুষের সমাবেশ সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে হেফাজত নেতারা রাতে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে হেফাজতকর্মীরা সন্ধ্যার পর এখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলে আওয়ামী লীগ পথে পথে আক্রমণ করতে পারে। কারণ দিনের বেলায় মতিঝিলে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালিয়ে হেফাজতের ১১ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামনে রেখে সন্ধ্যার পর বিচ্ছিন্ন ভাবে সমাবেশ থেকে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়া নিরাপদ মনে করেনি হেফাজত নেতারা। রাতে অবস্থানের পর সকালে রওনা দেয়ার পরিকল্পনায় ছিল তাদের। কিন্তু সরকার রাতে অবস্থান সহ্য করতে পারেনি। রাতের বেলায় মতিঝিলি যৌথ বাহিনী নামানো হয়। ১০ হাজার যৌথবাহিনী হেফাজত কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিরস্ত্র, নিরীহ, হেফাজতকর্মীদের অবস্থানে অস্ত্রে সজ্জিত ১০ হাজার সরকারি বাহিনীর আক্রমণে রক্তাক্ত হয় মিতিঝিল। কতজন শাহাদাত বরণ করেছেন তার খতিয়ান এখনও পাওয়া যায়নি। রাতে নামাজ ও আল্লাহর জিকিররত হেফাজতকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করা, আহত করা কোন ধরনের ইসলাম দরদি কাজ সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রচার পত্রে নেই।
শুধু তা-ই নয়, যাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের আন্দোলন তাদের সরকার দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শাহবাগে লালন করেছে। খাবার সরবরাহ করা হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণিক ব্যবস্থা ছিল সেখানে। ভাসমান টয়েলট, বাথরুম স্থাপন করা হয়েছিল শাহবাগে। রাতে নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে একত্রে সহাবস্থান করেছে শাহবাগের সেই গণজাগরণ মঞ্চে। এটাই কী আওয়ামী লীগের ইসলাম প্রীতি! হেফাজতে ইসলাম বার বার বলেছে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন নয়। যারা ইসলাম সম্পর্কে কুত্সা রটনা করছে, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে হেফাজতের আন্দোলন। হেফাজতে ইসলাম মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণকারীদের বিচার দাবি করেছিল। অথচ হেফাজতের দাবির প্রতি কর্ণপাতই করেনি। বরং নাস্তিকদের প্রতিটি দাবি রক্ষা করেছে সরকার। সরকার নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে হেফজাতের ওপর চালিয়েছে গণহত্যা।
দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলেম-ওলামাদের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ছিল অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের এক রাতে মতিঝিলে অবস্থানকে সরকার সহ্য করতে পারেনি। বরং সরকার সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো হেফাজতের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণকে পাল্টা হেফাজতের তাণ্ডব বলে দিনের পর দিন প্রচারণা চালাচ্ছে। ৫ মে দিনের বেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো গুলিস্তানে হেফাজতকর্মীদের পিটিয়ে মারার দৃশ্য না দেখিয়ে বার বার বলা হয় হেফাজতের তাণ্ডব। হেফাজত যদি তাণ্ডব চালিয়ে থাকেন তা হলে তো নিহত হওয়ার কথা আওয়ামী লীগ বা হেফজত বিরোধী লোকজন। কিন্তু গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণে হেফাজতের ১১ জন শাহাদাত বরণ করে। এ লাশগুলো মতিঝিলে নিয়ে যাওয়ার পরও সেখানে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। তারা মতিঝিলে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। চাইলে হেফাজত নেতাদের নেতৃত্বে সেদিন বিকালে রাজধানীতে লাশ নিয়ে মিছিল বের করা যেত। কিন্তু শান্তি বজায় রাখার জন্য হেফাজত নেতারা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে মতিঝিল থেকে কোনো মিছিল বের করেননি। তারপর ও নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো বলেছে হেফাজতের তাণ্ডব।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ এখন আবার ইসলাম প্রীতির প্রচারপত্র বিলি করছে নির্বাচনে। তারা সাধারণ মানুষকে বোকা মনে করে ধোঁকা দিতে চায়। নির্বাচন এলে ধর্ম ব্যবসায় নামে আওয়ামী লীগ। বাকি সময় তারা ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসলামবিদ্বেষীয় নাস্তিক্যবাদ। গাজীপুরের ধর্মপ্রাণ মানুষ আওয়ামী লীগের এ ভণ্ডামির জবাব দেবে ইনশাআল্লহ।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘ধর্ম ব্যবসায়’ নেমেছে আওয়ামী লীগ। ইসলামের নামে রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ ধর্ম ব্যবসা বলে গালি দেয়। এছাড়া আওয়ামী জোটের অন্তর্ভুক্ত বাম দলগুলো ইসলামের নামে রাজনীতির গুরুতর বিরোধী। তারা ইসলামকে শুধু মসজিদ, মাদরাসা এবং মৃত্যুর পর জানাজা ও কবরস্থানে দেখতে চায়। এর বাইরে তারা ইসলাম দেখতে রাজি নয়। অথচ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইসলাম দরদী একটি প্রচারপত্রের সংবাদ প্রচারিত হয় ‘সুশীল’ গোত্রের প্রতিনিধিত্বকারী দৈনিক প্রথম আলোতে। গত ৩০ জুন পত্রিকাটির অনলাইনের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র’। এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ইসলাম-দরদী কর্মকাণ্ডের একটি ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। ২০টি উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ রয়েছে প্রচারপত্রটিতে। লক্ষ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভোট আদায় করা। প্রচারপত্রটির বিষয়ে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক কথা বলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং সংসদ সদস্যের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোট আদায় করতেই আওয়ামী লীগের এ কৌশল। আওয়ামী লীগ কতটা ইসলামপ্রিয় তা বোঝানোর একটি অপচেষ্টা রয়েছে প্রচারপত্রটিতে।
নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের ইসলামপ্রীতি নতুন কিছু নয়। তখন শেখ মুজিবুর রহমানকে মাওলানা বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। দলটির প্রধান শেখ হাসিনাকে আমরা মাথায় সাদা পট্টি বেঁধে হিজাব পরতে দেখেছি। শুধু কী তা-ই! মাথায় আরবীয় স্টাইলে হিজাবের পাশাপাশি হাতে তাসবীহ নিয়ে ঘুরতেন তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে হরহামেশাই আওয়ামী লীগের এমন ‘ধর্মব্যবসা’ দেখা যায়। গাজীপুরে হেফাজতে ইসলামকে নিয়েও টানাটানি করছে আওয়ামী লীগ। ভোটের জন্য হেফাজতে ইসলামকে দরকার। ভোটের বাইরে দরকার হয় শাহবাগি নাস্তিকদের। তখন নাস্তিকদের রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম নেতাকর্মীদের ওপর চলানো হয় গণহত্যা।
আওয়ামী লীগ যদি এতটাই ইসলাম-দরদী হয়ে থাকে, সংবিধানের মূলনীতি থেকে সব কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিধানটি বাদ দিল কেন! আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে তারা সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা। তখন কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা আওয়ামী লীগের মনে থাকে না। তখন অনুসরণ করা হয় তাদের মুরব্বি ভারতের সংবিধানকে। ভারতের সংবিধানেও মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ভারতেও ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন-নীপিড়ন। ভাঙা হয় চারশ’ বছরের পুরাতন বাবরি মসজিদ। গুজরাটে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় মুসলমানদের। এসব কিন্তু করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতার নামে। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতা করা।
ভারতের সংবিধান অনুসারী আওয়ামী লীগও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ইসলাম এবং মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালায়। অতি সম্প্রতি হেফজাতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যার রক্তের দাগ এখনও মোছেনি। এখনও অনেক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন। আহতদের গায়ে আঘাতের ক্ষত এখনও শুকায়নি। আওয়ামী পুলিশ এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের আক্রমণে আহত হওয়া হেফাজত কর্মীরা এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। যশোরে নিহত হেফাজত কর্মীর জানাজায় তারাই বাধা দিয়েছে। হেফাজতের মহাসচিব বরেণ্য আলেম মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। রিমান্ডে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে তিনি শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।
আওয়ামী লীগ যত ইসলাম-দরদী প্রচারণা চালাক না কেন, মানুষ কেমন করে ভুলে যাবে ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা! কেমন করে মানুষ ভুলবে ৫ মে ভোররাতে মতিঝিলে হায়েনার মতো আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা!
আওয়ামী লীগ যে নাস্তিকদের লালনকারী দল সেটা তো দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট। শাহবাগে জড়ো হওয়া তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে ছিল কারা? নাস্তিকদের আন্দোলনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেছিল কারা! ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজিব নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। এ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাদের বিরুদ্ধে? কোন দেশের সরকার দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে এমন ঘটনা হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এমন কোনো ঘটনা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে কি-না সেটা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে বসে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের ঘোষিত এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবাই আপন আপন ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও একে অপরের সঙ্গে কোনো রকমের ক্লেশ হয়েছে এরকম নজির নেই। প্রত্যেকেই আপন ধর্ম নির্বিঘ্নে ক্ষেত্র মতো আনন্দ উল্লাস ও ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এ ঐতিহ্য লালিত হচ্ছে হাজারো বছর ধরে। কিন্তু সম্প্রতি ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মাহত। নাস্তিকদের নেতৃত্বে হঠাত্ করেই গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা হলো। ইসলাম ও মুসলামনদের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের যুদ্ধ।
সরকার নাস্তিকদের লালন করল খাবার, টাকাসহ সব ধরনের রসদের জোগান দিয়ে। শাহবাগে নাস্তিকরা জড়ো হলো। তাদের সুবিধা করে দিতে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয় সরকারি উদ্যোগে। বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ার অন্যতম ডায়াবেটিক হাসপাতাল বারডেম, এমনকি ঢাকা মেডিকেলে যাতায়াতের একটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হলো দিনের পর দিন। নাস্তিকদের সহযোগী মিডিয়াগুলো দিনের পর দিন লাইভ প্রচার চলল। উসকানি দেয়া হলো নাস্তিকতা ছড়িয়ে দিতে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো বাড়তি রঙিন পাতা জোগান দিয়ে সহযোগিতা করল। গণমানুষের যাতায়াতে অসুবিধা, রোগীদের ভোগান্তি, সমস্যার কথা ভুলে গেল তারা। নাস্তিকতা জেগে উঠেছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উসকানি দিতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে দেশ ব্যাপী। কিন্তু তাদের এ মহাপরিকল্পনা ফাঁস করে দিল দৈনিক আমার দেশ।
দৈনিক আমার দেশ নাস্তিকতা বিস্তারের পরিকল্পনা ও শাহবাগি আন্দোলনে ঘোষিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের আমলনামা প্রকাশ করল। তাদেরই পরিচালিত ব্লগে প্রকাশিত চিন্তাচেতনাগুলো আমার দেশ জাতির সামনে তুলে ধরল। তখন অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো চেষ্টা চালাল সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে কখনও বলা হলো—এসব বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল না। আমার দেশ ও পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হলো। আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের ওপর রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে নাস্তিকদের পক্ষ নিল সরকার। শুধু কী তা-ই! নাস্তিকদের ঘোষণায় জাতীয় পতাকা উঠল এবং নামল। নাস্তিকদের ঘোষণায় দেশের স্কুলে স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করা হলো। নাস্তিকরা দাবি করল আর জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়ে গেল! যেন সব শাহবাগ থেকে হচ্ছে। কোথায় এখন নাস্তিকরা। তারা গাজীপুরে গিয়ে নাস্তিকতার নামে ভোট চায় না কেন? এখন ইসলামের কথা বলে ধর্মব্যবসার আশ্রয় নেয়া লাগে কেন? হেফজাতে ইসলামকে নিয়ে ভোটের মাঠে টানাটানি কেন? তথাকথিত নারীনীতির পক্ষের নারীদের ভোটের মাঠে নামানো হচ্ছে না কেন! ভোটের মাঠে পর্দাওয়ালা নারীদের দরকার পড়ে কেন!
একপর্যায়ে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জেগে উঠল দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ইসলাম, মুসলমান, ঈমান, আকস্ফিদা বিশ্বাসের ওপর নাস্তিকদের আক্রমণের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এলো হেফজাতে ইসলাম। ইসলামবিদ্বেষীয় প্রচারণার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলেন বাংলাদেশের বরেণ্য আলেম আল্লামা আহমদ শফী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসে। তার লেখা খোলা চিঠির আহ্বানে প্রথম ফেব্রুয়ারিতে জুমার নামাজের পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে নামেন মুসল্লিরা। এই বিক্ষোভে সরকার গুলি চালায়। গুলিতে শত শত মানুষ আহত হয়। শাহাদাত বরণ করেন কয়েকজন মুসল্লি। সর্বশেষ ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচি পালন শেষে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থান নেয় হেফাজত নেতাকর্মীরা। হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী সমাবেশে এসে বিকালে আখেরি মুনাজাত ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু সরকার তাকে সেখানে উপস্থিত হতে বাধা দেয়। তার অপেক্ষায় থাকা লাখো মানুষের সমাবেশ সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে হেফাজত নেতারা রাতে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে হেফাজতকর্মীরা সন্ধ্যার পর এখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলে আওয়ামী লীগ পথে পথে আক্রমণ করতে পারে। কারণ দিনের বেলায় মতিঝিলে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালিয়ে হেফাজতের ১১ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সামনে রেখে সন্ধ্যার পর বিচ্ছিন্ন ভাবে সমাবেশ থেকে নিজ নিজ এলাকায় যাওয়া নিরাপদ মনে করেনি হেফাজত নেতারা। রাতে অবস্থানের পর সকালে রওনা দেয়ার পরিকল্পনায় ছিল তাদের। কিন্তু সরকার রাতে অবস্থান সহ্য করতে পারেনি। রাতের বেলায় মতিঝিলি যৌথ বাহিনী নামানো হয়। ১০ হাজার যৌথবাহিনী হেফাজত কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিরস্ত্র, নিরীহ, হেফাজতকর্মীদের অবস্থানে অস্ত্রে সজ্জিত ১০ হাজার সরকারি বাহিনীর আক্রমণে রক্তাক্ত হয় মিতিঝিল। কতজন শাহাদাত বরণ করেছেন তার খতিয়ান এখনও পাওয়া যায়নি। রাতে নামাজ ও আল্লাহর জিকিররত হেফাজতকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করা, আহত করা কোন ধরনের ইসলাম দরদি কাজ সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রচার পত্রে নেই।
শুধু তা-ই নয়, যাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের আন্দোলন তাদের সরকার দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শাহবাগে লালন করেছে। খাবার সরবরাহ করা হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণিক ব্যবস্থা ছিল সেখানে। ভাসমান টয়েলট, বাথরুম স্থাপন করা হয়েছিল শাহবাগে। রাতে নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে একত্রে সহাবস্থান করেছে শাহবাগের সেই গণজাগরণ মঞ্চে। এটাই কী আওয়ামী লীগের ইসলাম প্রীতি! হেফাজতে ইসলাম বার বার বলেছে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন নয়। যারা ইসলাম সম্পর্কে কুত্সা রটনা করছে, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে হেফাজতের আন্দোলন। হেফাজতে ইসলাম মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে বিশ্রি ভাষায় আক্রমণকারীদের বিচার দাবি করেছিল। অথচ হেফাজতের দাবির প্রতি কর্ণপাতই করেনি। বরং নাস্তিকদের প্রতিটি দাবি রক্ষা করেছে সরকার। সরকার নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে হেফজাতের ওপর চালিয়েছে গণহত্যা।
দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলেম-ওলামাদের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ছিল অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের এক রাতে মতিঝিলে অবস্থানকে সরকার সহ্য করতে পারেনি। বরং সরকার সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো হেফাজতের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণকে পাল্টা হেফাজতের তাণ্ডব বলে দিনের পর দিন প্রচারণা চালাচ্ছে। ৫ মে দিনের বেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো গুলিস্তানে হেফাজতকর্মীদের পিটিয়ে মারার দৃশ্য না দেখিয়ে বার বার বলা হয় হেফাজতের তাণ্ডব। হেফাজত যদি তাণ্ডব চালিয়ে থাকেন তা হলে তো নিহত হওয়ার কথা আওয়ামী লীগ বা হেফজত বিরোধী লোকজন। কিন্তু গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং সরকারি বাহিনীগুলোর যৌথ আক্রমণে হেফাজতের ১১ জন শাহাদাত বরণ করে। এ লাশগুলো মতিঝিলে নিয়ে যাওয়ার পরও সেখানে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। তারা মতিঝিলে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। চাইলে হেফাজত নেতাদের নেতৃত্বে সেদিন বিকালে রাজধানীতে লাশ নিয়ে মিছিল বের করা যেত। কিন্তু শান্তি বজায় রাখার জন্য হেফাজত নেতারা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে মতিঝিল থেকে কোনো মিছিল বের করেননি। তারপর ও নাস্তিকপন্থি মিডিয়াগুলো বলেছে হেফাজতের তাণ্ডব।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ এখন আবার ইসলাম প্রীতির প্রচারপত্র বিলি করছে নির্বাচনে। তারা সাধারণ মানুষকে বোকা মনে করে ধোঁকা দিতে চায়। নির্বাচন এলে ধর্ম ব্যবসায় নামে আওয়ামী লীগ। বাকি সময় তারা ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসলামবিদ্বেষীয় নাস্তিক্যবাদ। গাজীপুরের ধর্মপ্রাণ মানুষ আওয়ামী লীগের এ ভণ্ডামির জবাব দেবে ইনশাআল্লহ।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত