৫ ও ৬ মের ঘটনার তদন্ত


*৫ ও ৬ মের ঘটনার শ্বেতপত্র ও নিরপেক্ষ বিচারিক তদন্ত দাবি

গত ৫ ও ৬ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ-অবস্থান ঘিরে হাঙ্গামা ও যৌথবাহিনীর অভিযানসহ সব সহিংসতা এবং এসব ঘটনায় নিহতদের ওপর নিরপেক্ষ বিচারিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-টিআইবি।
গতকাল এক বিবৃতিতে টিআইবির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ দাবি তুলে সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও তৎজনিত মৃত্যু এবং জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সব পকে সংযম প্রদর্শন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চর্চা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত ৫ ও ৬ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতার কারণে হতাহতের এবং জনসম্পত্তি বিনষ্টের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত এবং গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সমাবেশ থেকে বহুমুখী অরাজকতার মাধ্যমে যেভাবে সহিংসতার পরিবেশের সৃষ্টি করা হয় তা গণতান্ত্রিক কাঠামোতে মত প্রকাশ ও অধিকার চর্চা সুযোগের আড়ালে উগ্র, অগণতান্ত্রিক ও ধ্বংসাত্মক এবং স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য অশনি সঙ্কেতসম। আমরা ৫ ও ৬ মে সংঘটিত সব ধরনের সহিংসতা ও উগ্র কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি।
অন্য দিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে সমাবেশকারীদের অপসারণে ৬ মে মধ্যরাতের পর থেকে ভোর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রাবাহিনী যে অভিযান পরিচালনা করেছিল তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং সে অভিযানে হতাহতসংক্রান্ত জল্পনার অবসানে সরকারকে দ্রুত শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হতাহতের সংখ্যাসহ এরূপ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের গুজব আরো সহিংসতার ইন্ধন জুগিয়ে আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং গণতন্ত্রের জন্য আরো তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রাবাহিনীর কার্যক্রমের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে গুজবের বিস্তার রোধে স্বচ্ছতার কোনো বিকল্প নেই। স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক মহল থেকে অযাচিতভাবে উদ্বেগপূর্ণ নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়েছে, যার নিরসনে সৎ ও নির্ভরযোগ্যভাবে প্রকাশিত শ্বেতপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
ড. জামান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত যেকোনো মৃত্যু ও সহিংসতার ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের সবাইকে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে সরকারকে দৃঢ়চিত মনোভাব প্রদর্শন এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।’
বিরাজমান সঙ্ঘাতময় অবস্থার অবসানে ড. জামান আবারো দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে গঠনমূলক ও ইতিবাচক সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং জবাবদিহিমূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দুই বৃহৎ দলের মধ্যে মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি শুধু উগ্র ও অগণতান্ত্রিক শক্তি বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করছে। এর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে দেশের আপামর জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা বিপর্যস্ত হবে, যার দায় দুই বৃহৎ দলকেই নিতে হবে।’